× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বন্ধ নয় তবে খোলা নেই! /বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

অনলাইন

এসএম শাফায়েত, দুবাই থেকে
(২ বছর আগে) জানুয়ারি ২৮, ২০২২, শুক্রবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রবাসীরা। কারণ সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। শিক্ষিত, কর্মঠ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাঙালি কর্মীদের চাহিদাও বেশ ভালো এখানে। অথচ প্রায় এক যুগ ধরে দেশটি বাংলাদেশিদের শ্রমিক ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে। এই সময়ে অন্য দেশগুলো ক্রমান্বয়ে শ্রমিক পাঠানোয় বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটির শ্রমবাজার ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, ২০১২ সালের আগস্টে অপরাধপ্রবণতার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের নতুন শ্রমিক ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফরকে কেন্দ্র করে কয়েক ধাপে ভিসা চালুর গুঞ্জন উঠলেও খোলেনি বন্ধ দুয়ার। এখন অন্য ব্যবস্থায় কিছু শ্রমিক গেলেও তার সংখ্য নগণ্য।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে তাদের ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন চার লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন বাংলাদেশি।
বিপরীতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন মাত্র ২৯ হাজার ২০২ জন। ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমিরাতে বাংলাদেশি নতুন শ্রমিক গেছেন মাত্র ১৯ হাজার ৯০১ জন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানা যায়, সরাসরি শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকায় এখন বাংলাদেশিরা প্রথমে ভ্রমণ ভিসায় দেশটিতে যান। তারপর ভিসার ধরন পাল্টে কর্মসংস্থান ভিসা করে নেন। গত দুই বছরে দেশটিতে ভ্রমণ ভিসায় গেছেন দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি, যাদের একটি বড় অংশই ভিসার ধরন পরিবর্তন করেছেন। তবে এ প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা আর ঝুঁকি থাকায় এভাবে শ্রমিকদের যাওয়ার হার অনেক কম।

আবার ভ্রমণ ভিসাধারীদের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থান ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারার অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, কর্মসংস্থান ভিসা না পাওয়া ও ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে হয়ে পড়ছেন অবৈধ। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকায় এই শ্রমবাজার দ্রুত দখলে নিতে নিয়মিত শ্রমিক পাঠাচ্ছে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ।

শ্রমিক ভিসার বিষয়ে সবশেষ ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী নাসের বিন থানি আল হামেলি জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ নিয়ে ঢাকায় একটি যৌথ সভা করবেন তারা। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সেই পথ আরও দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ, ভ্রমণ ভিসা চালু রাখলেও করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সব দেশের শ্রমিক ভিসা বন্ধ রেখেছে ইউএই।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর জানান, হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত আমিরাতে বৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা সাত লাখ ৫২ হাজার। এ ছাড়া ভ্রমণ ভিসায় দুই বছরে অন্তত দুই লাখ বাংলাদেশি দেশটিতে ঢুকেছেন, যারা পরে ভিসার ধরন পরিবর্তন করেছেন।

এখনও যারা ভ্রমণ ভিসায় আমিরাত আসছেন, তাদের আসার আগেই কাজ নিশ্চিত করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, আমিরাতের শ্রমবাজার কখনও বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশিদের শ্রমিক ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে প্রায় সব দেশের শ্রমিক ভিসা এখন বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার জন্যই ভিসা খুলে দেয়া হবে। আর দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জন্য কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সবসময় ভিসা দিচ্ছে ইউএই।

বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ১-৩ মাসের ভ্রমণ ভিসায় শ্রমিক নিয়ে আসছে বাংলাদেশ থেকে। পরবর্তীতে তাদের ভিসার ধরণ বদলে কর্মসংস্থান ভিসা করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘসূত্রিতা আর নানান জটিলতার কারণে অধিকাংশ প্রবাস গমনেচ্ছুরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশটি থেকে। তারা বলছেন, এমন চলতে থাকলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্রম বাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এতে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে দেশটির শ্রমবাজার। এ ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যকার বানিজ্যিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন সময়ের দাবি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর