× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নদী দখলে অভিযুক্ত কারখানা উদ্বোধনে বিআইডব্লিউটিসি’র আয়োজন

বাংলারজমিন

গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৯ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নৌ চলাচল ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান নদী হিসেবে বিবেচিত মেঘনা ও এর শাখা নদী ফুলদীর একাংশ ভরাট করে জাহাজ মেরামত-নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলে ‘থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড’ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে নদী কমিশন দখলদার চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রদান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।

এমতাবস্থায় দখলদাররা বহাল তবিয়তে তাদের দখল কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সেখানে ফ্লোটিং ওয়ার্কশপ নির্মাণ করে তা ঘটা করে উদ্বোধনও করছে। আগামী ৩০শে জানুয়ারির ওই ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে মন্ত্রী-আমলাগণ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন মর্মে আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজক খোদ বিআইডব্লিউটিসি। উল্লেখ্য, ‘থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড দুটি নদী দখলের পাশাপাশি দুটি খালও পুরোপুরি ভরাট করে বহুতল বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। দখল ও ভরাটের ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ায় ফুলদী নদী দিয়ে বড় ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারছে না।
এতে করে সেখানকার পাঁচটি খাদ্যগুদামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। দুটি নদীর আংশিক দখল ও দুটি খাল ভরাটের পাশাপাশি থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের বিরুদ্ধে দৌলতপুরে অন্তত শ’খানেক কৃষকের জমি বালি ফেলে দখলেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ওইসব জমির দখল ধরে রাখতে দিনরাত ৩০ জন অস্ত্রধারী পাহারা দিচ্ছে সেখানে। মেঘনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদী দখল হয়ে যাওয়ার পরও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। দখল হওয়া জমির কয়েকজন মালিকের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ই এপ্রিল হাইকোর্ট একটি রুলও জারি করে। সরজমিন গজারিয়ার নয়ানগরে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা ও ফুলদী নদীর ঠিক মাঝেই গড়ে উঠেছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। যেখানে নদী দখল হয়েছে সেখানে স্বাভাবিকভাবে ফোরশোরগুলোও দখল হয়ে গেছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ২০১০ সালে প্রথমে উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েক বিঘা জমি কিনে নেয় থ্রি এঙ্গেল। মেঘনা নদীর ৫০০ ফুটেরও বেশি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ফুলদি নদীর অর্ধেক দখল করে তাতে বালু ভরাট করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আরাফাত সরকার বলেন, ২০১১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ১ দশমিক ৯ একর জমি ভুয়া নাম ব্যবহার করে তাদের নামে খারিজ করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন। পরে আমরা জমির খাজনা দিতে গেলে জানতে পারি জমি আমাদের নামে নেই। ভূমিহীন আব্দুল আজিজ বলেন, ২০১৫ সালে সরকার ভূমিহীনদের ২০ শতাংশ করে ফসলি জমি দেয়। সরকার থেকে পাওয়া ওই ২০ শতাংশ জমিতে আমি চাষাবাদ করতাম ২০১৯ সালেও। অথচ এ বছর দুই দফা জোর করে আমাদের জমি ভরাট করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল। ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানানো হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মেলেনি। এমনকি মৃত্যুর সাত বছর পরে জীবিত হয়ে থ্রি এঙ্গেলের কাছে জমি বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে সূর্যবান বিবি মারা যান। হঠাৎ করে ২০১১ সালে তিনি জীবিত হয়ে যান। শুধু জীবিতই হন না, জমিও বিক্রি করেন থ্রি এঙ্গেলের কাছে। সূর্যবান বিবির এনআইডি উপজেলা নির্বাচন অফিসে যাচাই করলে দেখা যায় এনআইডিটিও ভুয়া। এ জাল দলিল সম্পাদন করেন দলিল লেখক হাফেজ আহম্মদ প্রধানের সহকারী দলিল লেখক রেফায়েত উল্লাহ। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, থ্রি এঙ্গেলের অনেকগুলো দলিলই তাদের মাধ্যমে হয়েছে। তবে সূর্যবান বিবির দলিলটার বিক্রেতা জীবিত না মৃত তা তিনি জানেন না। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (লজিস্টিক সাপোর্ট) এমএ রহমান আনসার  বলেন, আমরা ২০০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। নয়ানগর গ্রামের অল্প কিছু অংশ বাকি আছে। পুরো গ্রামটিকেই মেরিন শিল্পের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা আছে। তবে নদী ও খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি উল্টো মেঘনা নদীর অংশে তাদের জমি বালু ব্যবসায়ীরা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম জানান, ২০০৯ সাল থেকে তারা এখানে জমি কিনছেন। যথাযথ আইন মেনেই সব জমি কিনেছেন এবং বালু ভরাট করা হচ্ছে। যদি সবকিছু নিয়ম অনুযায়ীই করে থাকেন তাহলে কেন তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগে বিআইডব্লিউটিসি’র প্রকৌশলী ছিলাম। পরে নিজের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু প্রাক্তন সহকর্মীদের কয়েকজন বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেননি। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, থ্রি এঙ্গেল আগেও তাদের জলযান বানিয়ে দিয়েছে। নিয়ম মেনেই তারা তা তৈরি করে। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, থ্রি এঙ্গেলের বিরুদ্ধে নদী ও খাল দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্তও চলছে। প্রতিষ্ঠানটি খাসজমি দখল করেছিল, এটি সত্য। তবে তাদের বিরুদ্ধে নদী দখলের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হলে ভূমি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর