খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার বাবা। সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ৫৬ দিন পর গত ২৬শে জানুয়ারি খানজাহান আলী থানায় হত্যা মামলা করতে এসেছিলেন তার বাবা শুকুর আলীসহ অন্য স্বজনরা। আদালতে মামলার পরামর্শসহ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা ধরনের সমস্যার কথা বলেছেন থানার ওসি। দিন শেষে থানা থেকে অসহায়ের মতো ফিরে যেতে হয়েছে শিক্ষক সেলিমের বাবাসহ স্বজনদের। তারা এ ঘটনার বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, ৪৪ জনের নামে অভিযোগ নিয়েছি, তদন্তপূর্বক মামলা রেকর্ডসহ আইনি ব্যবস্থা নেবো। শিক্ষক সেলিমের বাবা ও স্বজনদের বক্তব্য সঠিক নয় বলেও তিনি জানান। তার মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে তার বিভাগের কক্ষে নিয়ে যান।
সেখানে তার ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলেছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে। এরপর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনার দিনের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। অধ্যাপকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুয়েট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ৫ই জানুয়ারি কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি। এ ছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়। এ শিক্ষার্থীরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে অধ্যাপক সেলিমের বাবা মো. শুকুর আলী মোল্লা, ভগ্নিপতি মো. আবুল কালাম আজাদ ও মামা খন্দকার মো. আমিরুল ইসলাম খুলনায় আসেন। মৃত্যুর ঘটনায় ৪৪ শিক্ষার্থীর নামে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগে দায়ের করেন কেএমপি’র খানজাহান আলী থানায়। তবে তা এজাহার হিসাবে এন্ট্রি না করে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে পরিবারকে জানান থানার অফিসার ইনচার্জ। এর প্রেক্ষিতে মো. শুকুর আলী মোল্লা বলেন, বিচার মনে হয় আর পাবো না। সৃষ্টিকর্তার কাছেই বিচার দিলাম। কেন এ ধরনের হতাশাযুক্ত কথা বলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৬শে জানুয়ারি সকালে কুষ্টিয়া থেকে এজাহার লিখে নিয়ে এসেছিলাম খুলনায়, সকাল ১০টার দিকে থানায় গিয়েছিলাম। সবকিছু বলার পর তারা বললেন, এজাহারে ভুল আছে। আমরা সেগুলো ঠিকঠাক করে সাড়ে ৪টার সময় আবার থানায় গিয়েছি। তখন থানায় ওসি সাহেব ছিলেন না। পরে ওসি এসে বলেন, উপরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত হবে। ‘এরপর তিনি মুঠোফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বললেন’। কিছুক্ষণ পর ওসি সাহেব বললেন, মামলা আমি নিলে সমস্যা আছে। এর সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত। আমার পক্ষে মামলা নেয়া সম্ভব না। ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমি তদন্ত করতে পারবো না। আপনারা আদালতে গিয়ে মামলা দেন। আদালত পিবিআইকে যদি তদন্তের নির্দেশ দেন সেটা ভালো হবে। এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, মামলা নেইনি বা নেবো না এমন কোনো কথা হয়নি। তাদের লিখিত অভিযোগটি রেখে দিয়েছি, সেটি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। ৪৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ দিয়েছেন প্রয়াত শিক্ষক সেলিম হোসেনের পিতা মো. শুকুর আলী মোল্লা। এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। পুলিশ কোনো রকম প্রভাবিত হয়নি বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, গত ৩০শে নভেম্বর অধ্যাপক সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছে ভাড়া বাসায় মারা যান। ১লা ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী গ্রামে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন হয়। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ১৪ই ডিসেম্বর তার লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ১৬ই ডিসেম্বর আবারো তার লাশ দাফন করা হয়। এখনো পর্যন্ত সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।