ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

অর্থনীতি নাকি নীতির অর্থ

অনুস্কা ব্যানার্জী
৮ মে ২০২৪, বুধবারmzamin

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে- গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। এখন বোধ হয় দুর্নীতিবাজ সাহেবদের নীল নকশা কিছুটা বুঝতে পারছেন! বেগমরা উন্নত জীবনযাপন করবেন আর সামলাবেন অবৈধ পয়সার হিসাব। দেশের মানুষ না খেয়ে মরুক তাতে কার কী? বাংলাদেশের রিজার্ভের হালচাল ডলার সংকটের জন্যে শুধু করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দায়ী নয়। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের অবস্থার জন্যে ৪টি কারণকে দায়ী করেছেন যার মধ্যে রয়েছে মেগা প্রজেক্টের জন্যে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয়, বড় অংকের লোন নিয়ে সেগুলো পরিশোধ না করার কারণে সৃষ্ট ব্যাংক সংকট,  মূলধন পাচার ও অবকাঠামো নির্মাণের অস্থিতিশীল ব্যয়

 

‘বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
সুকান্ত ভট্টাচার্যের এ অঙ্গীকার ঠিক কতোটুকু রাখতে পারা গেল? বাংলাদেশে আজ যে শিশুটি জন্ম নিচ্ছে, তার জন্যে আমরা কী বরাদ্দ রেখেছি? বরাদ্দ তো কিছু না কিছু রয়েছেই। আর সে বরাদ্দ ৩৬৫ ডলারের ঋণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এমনটাই সংসদে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। না, খুব বেশিদিন আগের কথাও না। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া নবজাতকের ঘাড়েও মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৪ দশমিক ৮৫ মার্কিন ডলার। চমকাবার পালা তো কেবল শুরু। বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। যার মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা যা কিনা মোট ব্যয় বরাদ্দের ৩৬.৪ ভাগ। বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজগুলোর সঙ্গে বিদেশি সংস্থার সংশ্লিষ্টতার কথা আমাদের সকলেরই জানা। তাদেরকে ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। আর ডলার সংকটের কারণে বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে নিতে হয় ঋণ। অজান্তেই যে ঋণের ঘানি টানছে দেশের সাধারণ জনগণ থেকে সদ্যজাত শিশু পর্যন্ত। 

এদিকে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। সে সময় এক ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা এখন তার দাম দাঁড়িয়েছে ১০৯.৪৭ টাকা। ডলারের ক্রমাগত দাম বাড়ার কারণে পণ্য ও জ্বালানিসহ অন্যান্য সেবার দাম চড়ার চাপ জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বাড়ছে আমদানি পণ্যের দাম। ডলার সংকট সৃষ্টির পেছনে আমদানি এবং রপ্তানির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকাকে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি এবং শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। উন্নয়নশীল অর্থনীতির এ দেশকে খাদ্য থেকে শুরু করে শিল্পের কাঁচামাল পর্যন্ত আমদানি করে আনতে হয়। এদিকে রপ্তানি আয় আমদানি ব্যয়ের তুলনায় অপ্রতুল। আর আছে রেমিট্যান্স। কিন্তু রেমিট্যান্স আর রপ্তানি যোগ করে যে আয় তা যে আমদানি ব্যয় আর রপ্তানি আয়কে সমান করতে পারছে না তা তো জানা কথা। একেই ডলার সংকট, তার ওপর বাজেটে বরাদ্দকৃত ব্যাপক উন্নয়ন ব্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।  

কেমন আছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা? 
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ছিল ২৩.৭১ মিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। জাতীয় সংসদে ২০২৩ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দেশের প্রবাসী শ্রমিক এখন ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ জন। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংক ও নোম্যাডের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের গড় মাসিক মজুরি মাত্র ২০৩ ডলার। যেখানে পাকিস্তানি শ্রমিকদের গড় মজুরি ২৭৬ ডলার, ভারতীয়দের ৩৯৬ ডলার, চীনাদের ৫৩৩ ডলার আর ফিলিপিনোদের ৫৬৪ ডলার।

বাংলাদেশে প্রতিবছর রেমিট্যান্সের মাধ্যমে একটা বড় অংকের ডলার আসে। সে টাকা পাঠান দেশের সেই সমস্ত শ্রমিক যারা কাজের তাগিদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা ঠিক কতোটুকু আসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে? প্রবাসী শ্রমিক মানেই রেমিট্যান্স আর ডলারের হিসাব। হ্যাঁ, রেমিট্যান্সের পরিমাণ নিয়েই যত মাতামাতি। আর গণমাধ্যমের কথা না হয় বাদ দিলাম, এই শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনের কাছেও এরা যে স্রেফ একটা টাকার মেশিন হয়ে দাঁড়ায় তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেহেতু তিনি বিদেশে থাকেন, তা করুন না যতই কষ্টের কাজ, দিনশেষে প্রবাসী শ্রমিকের আত্মীয় পরিজন তার কাছে প্রত্যাশা করে কিছুটা আর্থিক সাহায্য। যে শ্রমিকটি পরিবারের মুখ চেয়ে বিদেশে উদয়অস্ত পরিশ্রম করেন, সেই পরিবারটিতেও আস্তে আস্তে ভাঙন ধরে। কিন্তু পরিবারের কেউই কোনো পরিস্থিতিতে চায় না, শ্রমিক বাড়ি ফিরুক। হোক সে ঈদের মতন উৎসবও। সোনার ডিম পাড়া হাঁস যদি ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়, তবে তার পরিণতি কী করুণ তা তো আন্দাজ করতে পারা যায়।  

সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। দেশটিতে গিয়ে প্রতিশ্রুত কাজ না পেয়ে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। কেউ মানব পাচারকারীর হাতে পড়েন, কেউ বা প্রতারক চক্রের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হন। অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে বিদেশে গিয়ে এসব শ্রমিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু যোগাড় করে নেন। এমনকি প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন যেসব নারী, তারাও  শিকার হন অকথ্য নির্যাতনের। এভাবেই দেশের অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে চলেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। দিনশেষে সামান্য স্বীকৃতিটুকু মেলে না। 

প্রসঙ্গ: পোশাক শ্রমিক
২০২৩ সালের নভেম্বরে পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। প্রজ্ঞাপন বলছে, গ্রেড পাঁচ বা অ্যান্ট্রি লেভেলের একজন কর্মীর মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৬ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, পরিবহন ভাতা ৪৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা শহরের বস্তিগুলোতে বসবাস করে খুব নিম্নমানের জীবনযাপন করলেও একজন মানুষের ৩/৪ জন সদস্যের সংসার সাড়ে ১২ হাজার টাকায় চালানো সম্ভব কিনা এ এক কঠিন প্রশ্ন। পোশাক শ্রমিকের হাতে তৈরি হয় দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। অথচ সে পোশাক শ্রমিকটির পরিবারের সদস্যদের ঈদে নতুন জামা জোটে না। জোটে না দুবেলা ভালো খাবার। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা নির্ধারিত হলেও খাটতে হয় ওভারটাইম। নারী কর্মীরা এই তৈরি পোশাকের কাজে এসে নিজের সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। কেউ কেউ সন্তানকে তালা বন্ধ করে রেখে আসেন বাসায়। কোনো নারী শ্রমিক গর্ভবতী হলে গর্ভকালীন ছুটি দেয়ার পরিবর্তে সেই শ্রমিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়। এর জন্যে অনেকেই পেটের দায়ে মাতৃত্বকে দূরে ঠেলে দেন। পোশাক কারখানায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে প্রতি ঘণ্টায় হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয়। প্রতিদিন ঘণ্টায়  টার্গেট নির্ধারণ করে দেন কর্মকর্তারা। টার্গেট পূরণ না হলেই ওপর মহল থেকে চাপ আসে। থাকে চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। 

বেগমপাড়ার খুঁটিনাটি 
প্রবাসী শ্রমিকের দুঃখ নিয়ে অনেক তো চোখ ভেজালাম। এবারে চলুন ঘুরে আসা যাক কানাডার বেগমপাড়া থেকে। কানাডাতে বেগমপাড়া নামের কোনো জায়গার অস্তিত্ব আদৌ নেই। তবে বেগমপাড়া রয়েছে। কানাডা সরকারের তথ্য বলছে, গত ৫ বছর ধরে প্রতি বছর ৩ হাজারের অধিক বাংলাদেশি কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন। আর ২০০৬ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পিআর পেয়েছেন ৪৪ হাজার ১৮৬ জন বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশি অভিবাসীদের হিসাব নিকেশ করতে গিয়েই কোঁচো খুঁড়তে বেরোলো কেউটে। কানাডায় বিনিয়োগকারী কোটায় পিআর সুবিধা পাচ্ছে যে সমস্ত বাংলাদেশি, তাদের সেসব বিনিয়োগের উৎসটা কোথায়? বাংলাদেশের অর্থ অবৈধভাবে পাচারের মাধ্যমে কানাডায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে বউ বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের শিল্পপতি, প্রকৌশলী আর আমলার দল। টরন্টো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এবং টরন্টোর আশপাশের শহর মিসিসওগা, হ্যামিল্টন, গুয়েল্ফ ও অন্টারিও লেকের পাড় ঘেঁষা উপশহরগুলোতে ১০ থেকে ৩০ কোটি টাকা সমমূল্যের অট্টালিকাগুলো এভাবেই অবৈধ পয়সা অবাধে পাচারের সাক্ষী বয়ে চলেছে। পুঁজি পাচারকারীদের এই সমস্ত বাড়িকেই বেগম পাড়া বলা হয়ে থাকে। 

বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য শিল্পকারখানার মালিকদের অধিকাংশেরই কানাডায় আলিশান বাড়ি আর সংসার, সুতরাং এ সমস্ত কারখানাগুলোর দ্বিতীয় হেড কোয়ার্টার এখন কানাডা। শিল্পপণ্য রপ্তানিতে যে ডলার বাংলাদেশ আয় করে, তার যে অংশটুকু শ্রমিকের বেতন-ভাতা সেটুকুই বাংলাদেশে যায়। বাকি অংশ যায় বেগমপাড়ার তহবিলে। তা যাবে বৈকি! বউ-বাচ্চার একটা দাবি আছে না? বেগমদের সুখসুবিধার কথা তো সাহেবদেরকেই ভাবতে হচ্ছে দেশে বসে। আগে নিজের আখের, সংসার, তারপর দেশ। নিজে বাঁচলে পরেই তো বাপের নাম, নাকি? এভাবেই একটা উন্নয়নশীল দেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি আয়টুকুতেও লুটপাটের ঘটনাটা খুব সংগোপনে ঘটে যায়। জানতে পারে না কাকপক্ষী। যাদের জানার সম্ভাবনা থাকে, তারাও একই পথের পথিক, কানাডার তীর্থের কাক। 
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে- গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে। এখন বোধ হয় দুর্নীতিবাজ সাহেবদের নীল নকশা কিছুটা বুঝতে পারছেন! বেগমরা উন্নত জীবনযাপন করবেন আর সামলাবেন অবৈধ পয়সার হিসাব। দেশের মানুষ না খেয়ে মরুক তাতে কার কী? 

বাংলাদেশের রিজার্ভের হালচাল 
ডলার সংকটের জন্যে শুধু করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দায়ী নয়। অধ্যাপক আলী রিয়াজ বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের অবস্থার জন্যে ৪টি কারণকে দায়ী করেছেন যার মধ্যে রয়েছে মেগা প্রজেক্টের জন্যে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয়, বড় অংকের লোন নিয়ে সেগুলো পরিশোধ না করার কারণে সৃষ্ট ব্যাংক সংকট,  মূলধন পাচার ও অবকাঠামো নির্মাণের অস্থিতিশীল ব্যয়। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে রাস্তা তৈরি ও সংস্কারের ব্যয় বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর অন্যতম কারণ কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি। 

দেশে ডলার সংকটের কারণে আবারো বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ’র ঋণের শর্ত মেনে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ দেখাতে হয় বাংলাদেশকে। এই বছরের মার্চ মাসের শেষদিকে এই নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ’র ঋণের শর্ত অনুযায়ী মার্চের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১ হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম।

১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি’র আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ছিল ৯৪ ডলারের মতো, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনগণের সে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংক ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে  প্রথম যে রিপোর্টটি পেশ করে, সেটি ছিল খুবই নেতিবাচক। আমেরিকান কূটনীতিক জনসন বলেছিলেন, এই রাষ্ট্র কোনোমতেই বেশিদিন টিকবে না, এটি হবে একটি ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস। মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে বাংলাদেশ শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার আগে এই অংশটুকুই ঢাকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবশিষ্ট রেখে গিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থা থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রবি ঠাকুরের কথা মাথায় রেখে, বাংলাদেশকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। শ্রমিকদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বাড়াতে হবে দেশের উৎপাদন। ডলার সংকট কমাতে আমদানি সংকোচন নীতি জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা যে সমস্ত টাকা দেশে পাঠান তা যেন ব্যাংকের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে আসে তা নিশ্চিত করা জরুরি। উন্নয়ন কাজগুলোতে স্বচ্ছতার যে ঘাটতি সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে। অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ৩য় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠকের মতামত

good hindu seen for very first time

mohammed
১১ মে ২০২৪, শনিবার, ১:০৮ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status