ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

বিবিসির প্রতিবেদন

হাসিনাকে নিয়ে দ্বিধায় দিল্লি!

মানবজমিন ডেস্ক

(১ সপ্তাহ আগে) ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:২৩ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের তোপে ক্ষমতা ছাড়ার প্রায় এক মাস হতে চলেছে। এখন তিনি দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। ৫ই আগস্ট হাসিনার নাটকীয়ভাবে ক্ষমতা হারানোর পর তিনি একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি দিল্লিতে অবতরণের পর গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছিল হাসিনা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেশগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাদের দেশে হাসিনার জায়গা হবেনা। এই পরিস্থিতিতে তার সামনে অপশন মাত্র দুটো। হয়ত তিনি ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে থাকবেন, নাহয় তাকে দেশে ফিরে আসতে হবে। এখানে দেখার বিষয় ভারত হাসিনার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি হাসিনা স্থায়ীভাবে ভারতে অবস্থানের সুযোগ পান তাহলে তা দিল্লিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়তে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। যদি এমনটাই ঘটে তাহলে দিল্লির কূটনীতি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কেননা ভারতের কাছে বাংলাদেশ শুধুমাত্র প্রতিবেশী দেশই নয়। দিল্লির কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ মিত্র হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভারতের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। 

এতে বলা হয়, দুই দেশের মোট সীমান্ত ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে যদি কখনও বিদ্রোহ দেখা দেয় তাহলে তা বাংলাদেশের সাহায্য ছাড়া মোকাবিলা করা দিল্লির জন্য কঠিন। কেননা রাজ্যগুলোর গোষ্ঠীগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতিগত বিদ্রোহীদের দমন করতে ভারতের তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। কেননা হাসিনা ভারতের সাথে বেশ কয়েকটি সীমান্ত বিরোধও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করেছিলেন। সীমান্ত নিরাপত্তা মূলে থাকলেও আর্থিক দিকও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের বিকাশ ঘটে। ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের সড়ক, নদী এবং রেল পথ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ভারত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে। তবে হাসিনার এমন আকস্মিক ক্ষমতা হারানোয় পুনরায় বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা দিল্লির জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। 

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন,‘এটি এই অর্থে একটি ধাক্কা যে আমাদের আশেপাশে যেকোনো অশান্তি সবসময়ই অবাঞ্ছিত।’ তবে সাবেক এই কূটনীতিক জোর দিয়েছিলেন যে, দিল্লি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করবে। কেননা এর কোন বিকল্প নেই এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে যা করবে তা ভারত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সময় ক্ষেপণ করেনি। যাইহোক, গত ১৫ বছর ধরে হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগের প্রতি অটল সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভারত বিরোধীতার জন্ম নিয়েছে তা লাঘবে দিল্লির আরও সময় লাগবে। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তার স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ উদ্বেগ রয়েছে জনগণের। তবে জনগণের এমন উদ্বেগকে উপেক্ষা করে ক্রমাগতভাবে হাসিনাকে সমর্থন করায় দিল্লির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে আক্রোশ বেড়েছে তা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। হাসিনার পতনের সাথে দিল্লির ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিটি আরেকবার ধাক্কা খেল। কেননা বাংলাদেশ ভারতের আধিপত্য বিস্তারের যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে মালদ্বীপ এবং নেপালের পথেই হাঁটবে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দিল্লি যদি একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে তার মর্যাদা রক্ষা করতে চায় তবে অন্য প্রতিবেশী দেশে তার প্রভাব বজায় রাখতে হবে। যেহেতু ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনও এই অঞ্চলে প্রভাবের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত বছর ভারতের চোখের সামনেই ভারত-বিরোধীতা করে মালদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছে মোহাম্মদ মুইজ্জু। ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতের জন্য তার আঞ্চলিক নীতি সম্পর্কে কিছু আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে। তিনি বলেছেন, দিল্লিকে দেখতে হবে তার আঞ্চলিক অংশীদাররা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথভাবে গ্রহণ করেছে কিনা। এক্ষেত্রে দেবপ্রিয় শুধু বাংলাদেশকেই উদ্দেশ্য করেননি, তিনি এই অঞ্চলের সব দেশের কথাই বুঝাতে চেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। 

হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে ভারত যদি আওয়ামী লীগের বিকল্প কাউকে তাদের কাছে টানতে না পারে তাহলে তাদের জন্য বিষয়টি খুব জটিলই বটে। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির এক নেতা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে তাহলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির সাথে ভারতের সম্পর্ক কতটা জোরালো। যেহেতু অতীতে তাদের সুসম্পর্কের কোনো নজির নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিজেদের সম্পর্ক জোরালো করতে চীনও বেশ জোরালো উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। কেননা ভারতের সাথে আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে বেইজিং বাংলাদেশে তার পদচিহ্ন প্রসারিত করতে আগ্রহী। নির্বাচনে জয়ের পর মুইজ্জুর জন্য চীন লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিল। সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই পরিণতি এড়াতে চাইবে দিল্লি। ভারতীয় পণ্য ও বাণিজ্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা ও কূটনৈতিক কৌশল তৈরি করার চেষ্টা করবে। 

এক্ষেত্রে হাসিনার উপস্থিতিকে ঘিরে দিল্লিকে সাবধানে পা ফেলতে হবে। বিশেষ করে যদি অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতে হাসিনাকে কীভাবে আতিথেয়তা করবে তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু দিল্লি থেকে হাসিনা কীভাবে দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন তা বাংলাদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে তা বৈরী আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। 

বিবিসি থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত।
 

পাঠকের মতামত

Send her to Andaman Is.

Mustafizur Rahman
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

ভারত বাংলাদেশকে অনন্ত কাল শোষণ করবে আর আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখবো আমাদের নিয়ে ভারতের ভাবনা এমনই।

Mc
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১:২৬ অপরাহ্ন

ভারত কুটনৈতিকভাবে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে একটি ভুল প্রাপ্তির উপর। যার ফলে এ দেশের ৭০% মানুষ ভারত বিরোধী। বিশ্বের একটি বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। একজন ফ্যাসিষ্ট সৈরাচার গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংসকারীকে এ ভাবে সমর্থন মেনে নিতে পারে নাই এ দেশের ৭০% জনসাধারণ।

Shahadat Hossain
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

To continue good relationship, India should send Hasina back to Bangladesh.

nurulchoudhury
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৭:১৮ অপরাহ্ন

ভারতের শেষ প্রতিবেশী বাংলাদেশের সমর্থন হারিয়েছে।ভারতের বন্ধু হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কুকর্মের দোসর ভারত।

salim mridha
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১:৪৫ অপরাহ্ন

বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার, হায়েনা সরকারের বড় ধরনের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করলে ভারতীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলাদের সরাসরি জড়িত থাকা প্রমাণ হবে। ভারতীয় নীতি নির্ধারক এবং তাদের বাংলাদেশী দোসররা জানে শীঘ্রই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে বিভিন্ন আইনি অভিযোগের সম্মুখীন হবে। আইনি জবাবদিহিতা এড়াতেই ভারত ও তাদের দোসররা শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্র করবে।

Asad
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

হাসিনাকে নিয়ে ভারতের দ্বিধা কিশের ? ভারতের কুপরামর্শে হাসিনা বাংলাদেশ লুটপাট করে ভারত + অন্য দেশে হাজার হাজার কোটি ডলার জমা করেছে হাসিনার ১৪ গুস্টির নামে ।

জীবন
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

ভারত কুটনৈতিকভাবে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে একটি ভুল প্রাপ্তির উপর। যার ফলে এ দেশের ৭০% মানুষ ভারত বিরোধী। বিশ্বের একটি বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। একজন ফ্যাসিষ্ট সৈরাচার গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংসকারীকে এ ভাবে সমর্থন মেনে নিতে পারে নাই এ দেশের ৭০% জনসাধারণ।

মো: হারুনর রশীদ
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১:৩৯ পূর্বাহ্ন

মি: মোদির পতনের আগে ভারতের জনগণের সাথেও বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা নাই।... ( দাদা গিরি ভূলে যান)

no name
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

কোন দ্বিধা নয়! বাংলাদেশের জিনিস সে দেশে ফিরিয়ে দিন ।

Sakhawat
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও গনতন্ত্রহীন করার জন্য।

মো: সাইফুল ইসলাম
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

বিবিসির প্রতিবেদন/ হাসিনাকে নিয়ে দ্বিধায় দিল্লি!

ইউক্রেন, গাজা ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণের আহ্বান/ সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন রাজনাথ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status