ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

মত-মতান্তর

প্রবীণ নীতিমালা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি

হাসান আলী

(১ মাস আগে) ৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:৩১ অপরাহ্ন

mzamin

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সমাজে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। এখন মানুষের মধ্যে বৈষম্য অবসানের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে সোচ্চার হয়েছে। দেশের প্রায় দুই কোটি প্রবীণের সমস্যা নিরসনে প্রবীণ নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। 
প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘ প্রচেষ্টা শেষে " প্রবীণ নীতিমালা -২০১৩" জাতীয় সংসদে পাস করা হয়।
প্রবীণ নীতিমালার লক্ষ্য হলো, প্রবীণদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্র্য মুক্ত, কর্মময়, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করা। 
প্রবীণ নীতিমালা  প্রণয়নের পর এটা বাস্তবায়নে 
উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।প্রায় ৬০ লাখ প্রবীণ এখন মাসে ৬০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা পান। সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি বিভাগে একটা করে ৫০ শয্যার শান্তি নিবাস  বানানো হয়েছে। ফরিদপুর ছাড়া বাকিগুলোতে প্রবীণরা বসবাস করেন না। সারা দেশে ৮৫ টি শিশু পরিবারে  দশজন করে থাকার ব্যবস্থা  করা হয়েছে। 
মার্চ'২৩ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশ হলো, সব ধরনের যানবাহনে প্রবীণদের কম ভাড়ায় যাতায়াত, প্রবীণদের উপযোগী রাস্তা তৈরি, প্রবীণ স্বাস্থ্য বীমা ও সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন, সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, সিনিয়র সিটিজেন কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে ওষুধ ক্রয়ের সুযোগ। 
উপরের সুযোগ সুবিধাগুলো কার্যকর করতে আমাদের প্রবীণরা দীর্ঘ সময় ধরে দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। 
আমাদের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তি বার্ধক্য পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকারী। 
প্রবীণ নীতিমালা -২০১৩ তে দারিদ্র্য দূরীকরণ, আর্থিক নিরাপত্তা, জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে প্রবীণ ব্যক্তি,শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি, প্রবীণ ব্যক্তিদের অবদানের স্বীকৃতি ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। 
আমাদের দেশের প্রবীণদের দারিদ্র্য দূরীকরণ, আর্থিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টি, জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।প্রবীণের মর্যাদা প্রায় তলানীতে পৌঁছে গেছে।প্রবীণদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি করুণা,দয়া ও কৃপার।
আমরা আজকে যাঁদের কে প্রবীণ হিসেবে দেখি একদিন তাঁরা শৈশব কৈশোর ও যৌবনে ছিলেন। প্রবীণরা তাঁদের যৌবন  আমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর এবং শান্তি পূর্ণ করার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। কথা ছিল প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হবে। সেটা কবে থেকে হবে  তা আমাদের সিনিয়ররা বলতে পারছেন না। নীতিমালায় আছে প্রবীণ ব্যক্তিদের  অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রবীণরা মরার আগে  সেই স্বীকৃতি টুকু পেতে চান।জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে প্রবীণ ব্যক্তির কষ্ট লাঘবে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আমাদের নজরে আসছে না।শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রবীণ ব্যক্তির জীবন যাপন সহজ করার প্রচেষ্টা নাই বললেই চলে। 
প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়ন, তদারকি, মূল্যায়নে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি থাকবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে অনুরূপ কমিটি কাজ করবে। প্রবীণরা এসব কমিটি বাস্তবে দেখে সন্তুষ্ট হতে চায়।
পিতা মাতার ভরণপোষণ আইন -২০১৩ সংসদে পাস হয়েছে। আইন থাকলে ও আমাদের প্রবীণরা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা  কমবেশি নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন। বাবা মা পারতপক্ষে সন্তানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে ইচ্ছুক নন। নিতান্তই বাধ্য হয়ে যাঁরা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেন তাঁদের সংখ্যা অতি নগণ্য। এই আইনটি নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধে যথেষ্ট কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। 
প্রবীণ ব্যক্তি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে,স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেললে,নিজের কল্যাণ বুঝতে অক্ষম হলে, দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে,প্রতিবন্ধী হলে  তাঁর পক্ষে কে টাকা পয়সা উত্তোলন, চিকিৎসা করার ব্যয় মেটানো,দৈনন্দিন জীবন যাপনের ব্যয় কে কীভাবে নির্বাহ করবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন আইন নেই। মানসিক সক্ষমতা আইন প্রণয়নের  মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা বৃন্দের অনেকে প্রবীণ। গঠিত কমিশনের প্রধানরা ও প্রবীণ। 
আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা চাই প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়ন কিংবা সংস্কার করতে একটা কমিশন গঠন করা হোক।  সেই কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক প্রবীণদের মর্যাদা পূর্ণ জীবন  যাপনের সুযোগ দেয়া হোক।
লেখক * প্রবীণ বিষয়ে লেখক গবেষক ও সংগঠক।

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status