ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

আগরতলায় হামলার প্রতিবাদে পদযাত্রা

বুধবার লংমার্চ বিএনপি’র ৩ সংগঠনের

স্টাফ রিপোর্টার
৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করেছে বিএনপি’র তিন সংগঠন। রোববার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর   নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ওদিকে একই প্রতিবাদে আগামী বুধবার ঢাকা টু আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করবে বিএনপি’র এই তিন সংগঠন। এদিন সকাল ৮টায় নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ লংমার্চ শুরু হবে। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। 

গতকাল প্রতিবাদ পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন। এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। সংগঠন তিনটির নেতাকর্মীদের মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে, হাতে ফেস্টুন ও দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। ওদিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে প্রতিবাদ পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদেরও দেখা গেছে।

নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে প্রতিবাদী পদযাত্রা শুরু করেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল, মৌচাক ও মালিবাগ হয়ে তাদের পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজের কাছে এলে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের আটকে দেয়। এ সময় এই পথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রামপুরা ব্রিজের উপর পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে দু’দিকের সড়ক হয়েই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্র-জনতা সেখানে সড়কের ওপর বসে ভারতবিরোধী স্লোগান দেন। পরে তিন সংগঠনের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি দেন। 

ওদিকে নয়াপল্টনে পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা অবলম্বনহীন নই, আমরাও সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানি। দেশকে রক্ষা করার জন্য আকাশ, পাতাল, ভূমি, পানি প্রতিটি জায়গায় আমাদের যে শক্তি আছে, তা দিয়ে দিল্লির আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রত্যেকে প্রস্তুত রয়েছি। ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নানা অপপ্রচার-অপতথ্য দিয়ে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কলকাতার নিউমার্কেট বন্ধ। কলকাতার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বন্ধ। কলকাতার হাসপাতালে রোগী নেই। ক্লিনিকগুলো বন্ধ। তাতে আপনাদের আনন্দ হতে পারে, কিন্তু আমাদের এখানে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভারত ভয়ঙ্কর রকমের সাম্প্রদায়িক উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ঘৃণা দেখানো ছাড়া, ভিন্ন ধর্মের প্রতি প্রতিহিংসা দেখানো ছাড়া ওদের আর কোনো রাজনীতি নেই। ওদের রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, হাসিনা পলাতক, বাংলাদেশ থেকে তাকে চলে যেতে হয়েছে। দিল্লির আশীর্বাদে ১৫ থেকে ১৬ বছর তাকে টিকে থাকতে হয়েছে। উনি ভোট ধ্বংস করেছিলেন। ভোটারদের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। উনি নির্বাচন শেষ করে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করে দিয়েছেন। ভারতের উদ্দেশ্যে রিজভী আরও বলেন, আপনার নিজের দেশের জনগণ ভোট দিতে পারে, ইচ্ছেমতো সরকার পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যাকে সমর্থন করেন, সেই হাসিনা মানুষকে বন্দি ও ক্রীতদাস করে রেখেছিলেন। তাকে আপনারা সমর্থন করেন। তার মানে কি আপনারা বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করেন না? আপনারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করেন না? স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করেন না? তাহলে হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন কেন?

ভারতীয় হাইকমিশনে দেয়া স্মারকলিপিতে যা আছে: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকাকে ‘অবন্ধুসুলভ’ আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি’র তিন অঙ্গ সংগঠন। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যাতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।

এতে আরও বলা হয়, হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছেন। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দল-মতের মানুষদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না। ভারতীয় হাইকমিশনে দেয়া স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, আপনি সম্যক অবগত আছেন যে গত ২রা ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সাবেক নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজার হাজার মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেয়া হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একইসঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এহেন ন্যক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর। সার্বভৌম কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ বলে আমরা চাই, ভারত সরকার ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে পরামর্শ দেবে।

স্মারকলিপিতে বিএনপি’র তিন সংগঠন আরও বলেছে, আমরা আশা করি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতিসংঘের সনদের নীতির ওপর ভিত্তি করে সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ছাড়া কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানসহ সংগঠন তিনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status