ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

মালিক দোষ করলে প্রতিষ্ঠানের শাস্তি নয়

অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা আইনসিদ্ধ হচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

বেক্সিমকো গ্রুপের নাম উল্লেখ করে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, মালিক যদি অন্যায় করে থাকে, তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত। দোষ করে মালিক, প্রতিষ্ঠান দোষ করে না। তাই মালিককে শাস্তি দেয়া হোক, প্রতিষ্ঠানকে নয়। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা স্থগিত করা হচ্ছে, তা আইনসিদ্ধ হচ্ছে না। আদালতের প্রক্রিয়ার বাইরে এভাবে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার বিষয়টি তিনি নিজেও পছন্দ করেন না।

সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বর্তমান ব্যবসা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ)।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, অন্যায়ভাবে (ব্যাংক হিসাব) ফ্রিজ করাটা আমি নিজেও পছন্দ করি না। এখন যেটা ঘটছে, ইচ্ছা হলেই আরেকজনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেয়া হচ্ছে; এটা আইনসিদ্ধও নয়। বিষয়টি আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত। যদি উপযুক্ত প্রমাণ থাকে, তাহলে অনুসন্ধান করে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ফ্রিজ করা যেতে পারে। আমার ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করতে পারে, আপত্তি নেই; কিন্তু যা-ই করুক আইন অনুযায়ী করুক।

সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারের উপদেষ্টা কমিটির এক সভায়। এর বাইরে এই গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কারা বিক্রি করবে, কেন করবে? কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা প্রতিষ্ঠান নৈতিকও না অনৈতিকও না। এসব প্রতিষ্ঠান যারা চালায়, তারা যদি অনৈতিক হয়, আইন মেনে তাদের বিচার হওয়া উচিত। এ নিয়ে আমি কিছু বলবো না। মালিকদের শাস্তি হোক, কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়। কোনো উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান, যেখানে হাজার হাজার লোক কাজ করে, তা নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নেবে না, সেটা আশা করবো।
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা মন-কষাকষি চলছে। এর কারণ, ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ভুলে গিয়ে শুধু একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। এখন সেই সরকার আর ক্ষমতায় নেই, এটা ভারতের জন্য মেনে নেয়া কষ্টকর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নীতি হচ্ছে, আগে আপনি (ভারত) ৫ই আগস্টের নীতিগত স্বীকৃতি ঠিকমতো দেন; এরপর আমরা ভবিষ্যতের দিকে আগাই। আমিও মনে করি, এটা যথাযথ চিন্তাধারা। ভারতকে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। তবে একই সঙ্গে আত্মসম্মান যেন বজায় থাকে।

আবদুল আউয়াল বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনায় বোঝা যায় যে একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারী শাসন, দলীয়করণ, দলীয় লোকদের তোষণ-পোষণকে বিগত সরকার রাষ্ট্রীয় রীতি-নীতিতে পরিণত করে ফেলেছিল। অন্যদিকে আবার বিগত সরকার জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে নিজেদের কব্জায় নিয়ে ধ্বংস বা দুর্বল করে দিয়েছিল। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। ফলে জনগণের কল্যাণে যথোপযুক্ত নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরিবর্তে আত্ম-স্বার্থ সন্ধানী রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক অর্থাৎ বিশেষ স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর লুটপাটে সহায়তা করার লক্ষে আইন-কানুন-নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত ছিল।
বিদেশি ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার বিদেশি ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে অনেক স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছে। সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এ ধরনের ঋণ দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতকে বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিতে উৎসাহিত করেছে। 

এফসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে নিচু মানের দুর্বল শাসন ব্যবস্থা এক বড় রকমের জরুরি মাথাব্যথা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচু মানের শাসন দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য হ্রাসের পথে এখন এক পর্বত সমান বাধা। শাসনে দুরবস্থা জাতীয় অর্থনীতি, আর্থিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবনতির অতল গহ্বরে। 
পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি করতে হলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে তারা দায়িত্বে আছেন, ক্ষমতায় নেই। এটা তো ভয়ঙ্কর কথা। গণতান্ত্রিক সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থাকে। তাই অতিসত্বর নির্বাচন দেয়া, অন্তত নির্বাচন নিয়ে একটা রোডম্যাপ দেয়া অত্যন্ত জরুরি।

সব ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার নেই উল্লেখ করে বিএনপি’র এই নেতা আরও বলেন, যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সেগুলো তারা (সরকার) এখনই করতে পারে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর বিষয়ে সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করে দিতে পারে। তাতে ভবিষ্যতে যে-ই সরকারে আসুক, তারা ওই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবেন।

 

 

পাঠকের মতামত

রসুনের গোরা সব এক জায়গায়, ভবিষ্যতের লুট পাট করে খাবার ধান্দা আরকি

Reza
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:১৯ অপরাহ্ন

ভবিষ্যতে যেন লুটপাটের পর নিজের অসুবিধা না হয় সেই ব্যবস্থা করার পায়তারা করছেন বৈকি।

বিবেক
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:৩৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যে ধ্বংস করেছে তাকে বাঁচানোর জন্য আপনার এত আগ্রহ কেন?

রেজাউল হায়দার
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

মালিক আর প্রতিষ্ঠান একই | প্রতিষ্ঠানের তো হাত পা নাই দোষ করবে | বিভিন্ন প্রতিষ্টানের নামে ২২ হাজার লাখ কোটি টাকা পাচার হইসে শুদু বিদেশে | ভবিষ্যতে সুজুক পাইলে আপনারাও তাই করবেন তাই না?

Khoaj
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

মালক ছাড়া প্রতিষ্ঠান কি হাওয়া থেকে আসবে। মালিক দোষ করলে মালিক এবং প্রতিষ্ঠান দুটোই দায়ী হবে। প্রতিষ্ঠান মালিকই চালায়।

তাজ
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

Hamdard

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status