ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

ট্রাম্প যুগ: তৈরি হচ্ছে নতুন সমীকরণ

মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারmzamin

যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেই তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০শে জানুয়ারি শপথ নেয়ার পরই তিনি শতাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তৈরি হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির নতুন এক সমীকরণ। এর মধ্যে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও তিনি তার গতি ধরে রেখেছেন। ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা করে দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন এদিন। বলেছেন, ডাইভার্সিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশন (ডিইআই) কর্মসূচি খর্ব করবেন। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক অবকাঠামো বিষয়ক বহু কোটি ডলারের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তার ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিষয়ক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০,০০০ কোটি ডলারের এআই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চীনের ওপর শতকরা ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এখানেই শেষ নয়, তিনি মঙ্গলবার রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে উপস্থিত হলে এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এর আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল মিটিং করেন। তারপর ওপেনএআই, ওরাকল এবং সফটব্যাংকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখাকে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা আসে। নতুন প্রশাসনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গাকারীদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি সোমবার কমপক্ষে এমন ১৫০০ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। তারা কয়েক বছর জেল খেটেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে খুনিদের জেলে যেতে হয়নি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে চীনে তৈরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছেন। ট্রাম্প বলেন, মেক্সিকো ও কানাডার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল পাঠাচ্ছে চীন। এটি একটি নেশাদ্রব্য। এর আগে তিনি মেক্সিকো ও কানাডার বিরুদ্ধে শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এই দু’টি দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ হলো তারা ডকুমেন্টবিহীন অবৈধ অভিবাসী ও মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। ডনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুদ্ধবিরতির সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবেন তিনি। ওদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনকে আরও বেশি হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পুতিনের প্রসঙ্গে জিনপিংকে তিনি বলেছেন- এ বিষয়ে (যুদ্ধবিরতি) তিনি (পুতিন) যথেষ্ট করছেন না। আপনাকে এর সমাধানে চেষ্টা করতে হবে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। ওদিকে শপথগ্রহণের প্রার্থনা অনুষ্ঠানের সময় ওয়াশিংটন ডিসির এপিস্কোপাল বিশপ তার ঐশীবাণী পাঠ করার সময় ট্রাম্পের দিকে তাকান এবং তার প্রতি আহ্বান জানান- তিনি যেন অভিবাসী, সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার যুবকদের বিষয়ে করুণা দেখান। পরে ওই প্রার্থনা নিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন- এই প্রার্থনাটা ভালো হয়নি বলে তিনি মনে করেন। এটা আরও ভালো হতে পারতো বলে তিনি মনে করেন। ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নেও শুল্ক প্রয়োগের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ‘চীন অপব্যবহারকারী। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুবই খারাপ আমাদের জন্য- এমনটা বলেছেন ট্রাম্প’। তিনি বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেন। সেজন্যই আমাদের শুল্কের দিকে যেতে হবে। নিজেদের ফিরে পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ। ন্যায্যতা পাওয়ার জন্যও এটা একমাত্র উপায়। এর আগে  সোমবার শপথগ্রহণের পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সহযোগীদের সঙ্গে থাকা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা এবং তাতে অন্যায্য কিছু থাকলে তা চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে চীনা একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ‘সুরক্ষাবাদ’-এর সমালোচনা করেছেন। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শেসিয়াং যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে ‘উইন উইন’ সমাধানের আহ্বান জানান। এর আগে নিজের নির্বাচনী প্রচারের সময়  ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করেন। তবে শুল্ক বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্ট শুল্ক আরোপের দিকে এগিয়ে যায় কানাডাও তার জবাব  দেবে এবং সবকিছুই আলোচনার  টেবিলে আছে। অটোয়াও এখন কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিন শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী দেশ হলো- কানাডা, চীন ও মেক্সিকো। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শুল্ক। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, কর্ম সুরক্ষা ও রাজস্ব বাড়াতে পারবেন। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এর কারণে আমেরিকানদের বেশি মূল্য দিতে হতে পারে এবং কোম্পানিগুলো বিদেশিদের পাল্টা পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ডনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি- স্টারগেট গঠনের ঘোষণা দেন, তখন তার সঙ্গে ছিলেন প্রযুক্তি জগতের বড় নাম স্যাম অল্টম্যান ও ল্যারি এলিসন। এ ছাড়াও ছিলেন জাপানের টেক টাইকুন মাসাইয়শি সন। ট্রাম্প জানান, এই  কোম্পানি ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামোতে। এতে করে ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ওরাকলের ল্যারি এলিসন জানান  যে, টেক্সাসে ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ চলমান। এ জন্য  সেখানে দশটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পরে বিশটিতে উন্নীত হবে। ওপেনএআই-এর অল্টম্যান বলেন, এটাই এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। আর মাসাইয়শি সন বলেন, আমেরিকার সোনালী যুগের সূচনা হলো।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট/ আবারো ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক উত্তেজনা

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status