বাংলারজমিন
সিলেটের ড্রিম সিটি নিয়ে সংঘর্ষ, তুমুল উত্তেজনা, আগুন
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারআওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণের ঘটনায় সিলেটে আলোচিত হয়েছিল নগরের সাগরদিঘীর পাড়ের ড্রিম সিটি হাউজিং। পরবর্তীতে একটি ধর্ষণ কাণ্ডেও আলোচনায় আসে এ হাউজিং। সেই ড্রিম সিটি দখল-পাল্টা দখল নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকালে পুলিশের সামনে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এ নিয়ে ড্রিম সিটি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ৫ই আগস্টের পর একটি পক্ষ সিলেট মৎস্য বিভাগের নিকটবর্তী প্রায় ৩ কিয়ার ভূমি দখলে নিয়ে ড্রিম সিটি হাউজিং নাম নিয়ে দখলে নেয়। এর আগে এ ভূমির দখলে ছিলেন এসটিএস গ্রুপ নামে ঢাকার একটি কোম্পানি। ৫ই আগস্টের পর ওই কোম্পানির নিরাপত্তায় থাকা সদস্যদের মারধর করে জমি দখল করে ড্রিম সিটি নাম দেয়া হয়। এরপরও ওই ড্রিম সিটির ভেতরে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে। এলাকার লোকজন জানান, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে ওই ড্রিম সিটির ভেতরের অফিস কক্ষে রাখা হয়। পরে কোটি টাকা চাঁদার জন্য তার হাত ও পায়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়। পরে ২৫ লাখ টাকায় মুক্তিপণ দিয়ে তাকে পাশের শ্মশানঘাটের সড়কে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর মিসবাহ সিরাজের সিসিটিভি ফুটেজ নিজের জিম্মায় নেয়ায় ড্রিম সিটির ভেতরের বাসিন্দা বিশ্বনাথের আব্দুল খালিকের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ঘটনায় রাজু সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ড্রিম সিটির জমি বারবার দখল পাল্টা দখল হওয়ার কারণে এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। হাউজিংয়ের ভেতরে নানা অসামাজিক কাজের অভিযোগ তোলেন স্থানীয় লোকজন। এ কারণে বৃহত্তর সাগরদিঘীরপাড় সমাজ কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে এক মাস ধরে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আলোচনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি জমি হওয়ায় এলাকার মানুষ হাউজিং উচ্ছেদ করে ঈদগাহ্ নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। ১৭ই জানুয়ারি এ নিয়ে এলাকার তিনটি মসজিদে ঘোষণা দিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের শেষে সমাজ কল্যাণ সংস্থার নেতাদের নেতৃত্বে ড্রিম সিটিতে ঢুকতে যায় এলাকাবাসী। উত্তেজনার আশঙ্কায় দুপুর থেকে ড্রিম সিটির সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এলাকার লোকজন ড্রিম সিটিতে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ড্রিম সিটির ভেতর থেকে হাউজিং কোম্পানির পক্ষে শতাধিক লোক বাইরে বের হয়ে আসে। এ সময় দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় এলাকার লোকজন ড্রিম সিটির ফটকের ভেতরে থাকা তাদের অফিস ঘর ও চারটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরা গিয়ে লাঠিচার্জ চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বৃহত্তর সাগরদিঘীরপাড় সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল মানবজমিনকে জানান, এলাকাবাসীকে যখন পুলিশ বাধা দেয় তখন লোকজন শান্ত হয়ে যান। ওই সময় ড্রিম সিটির ভেতর থেকে বিএনপি নামধারী সন্ত্রসারী এসে ককটেল ও গুলি ছুড়লে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে এলাকার মানুষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও অসামাজিক কার্যকলাপের স্থান জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় তাদের পক্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ওই ৩-৪ কিয়ার ভূমি ফিশারিজের। আওয়ামী লীগের সময় ১৭ বছর এসটিএস গ্রুপ দখল করে রেখেছিল। ৫ই আগস্ট থেকে নতুন করে দখল করে সেখানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এ কারণে এলাকার মানুষ সরকারের ওই ভূমিতে ঈদগাহ্ নির্মাণ করার প্রস্তাব করেছেন বলে জানান তিনি। তবে ড্রিম সিটির পরিচালক ও নগরের আখালিয়া নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন আনা জানান, ড্রিম সিটি তাদের বৈধ সম্পত্তি। ড্রিম সিটির ভেতরে বিতর্কিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। নজরুল ইসলাম বাবুল জোরপূর্বক তার ফিজা কোম্পানির কর্মচারীদের নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। এ সময় ঘরে আগুন দেয়া ছাড়াও চারটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া মধ্যস্থতাকারী নগর বিএনপি নেতা মল্লিক চৌধুরী, ছমিরুন নেছা সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, আগের দু’টি বিতর্কিত ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। নতুন করে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে এলাকার মানুষ দখলে থাকা ব্যক্তিদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। উত্তেজনা বিরাজ থাকায় ড্রিম সিটির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।