ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

পোশাক কারখানা চালু রাখতে ৪০০ কোটি টাকার নতুন ঋণ চায় বেক্সিমকো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার

পরিচালন ব্যয় মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের কাছে স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন হিসেবে ৪০০ কোটি টাকার ক্যাশ ক্রেডিট (সিসি) ঋণ  সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। পাশাপাশি টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল কারখানাগুলো চালু রাখতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুযোগও চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে গত ডিসেম্বর ভিত্তিক সমস্ত দায়-দেনা দুই বছরের স্থগিতাদেশ সুবিধাসহ ৫ শতাংশ সুদে ১৫ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করার অনুরোধ করেছে। কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা ও রপ্তানি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ করতে ওই আবেদনে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বেক্সিমকো। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের কাছে অর্থায়ন চেয়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের আবেদন করা এক চিঠি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের দাবি জানায় বেক্সিমকো লিমিটেডের কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা। অবিলম্বে বন্ধ সব কারখানা খুলে দেয়া এবং লে-অফ প্রত্যাহারের দাবি করেন তারা। ওদিকে নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ কারখানাগুলো আবার চালু করা সম্ভব না।

বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা: গত ১৬ই জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেয়া এক প্রস্তাবনায় বেক্সিমকো টেক্সটাইল রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত খরচ কমানো ও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর একটি পরিকল্পনা দিয়েছে। 

বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২০২৫ সালে আমাদের কাছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা নগদ উদ্বৃত্ত আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের চেয়ে রাজস্ব/বিক্রি খুবই কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম বছরে এই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পিঅ্যান্ডএল এবং সিএফ-এ ফ্যাক্টর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পাশাপাশি ৮ হাজার শ্রমিক ও ৫০০ পরিচালন কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হবে।
তবে আমরা যদি গত প্রান্তিকের মুনাফার গতি দেখি, তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার নগদ উদ্বৃত্ত আশা করা যায়। যদি আমরা সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদন করতে পারি, তাহলে ২০২৬ সালে ৫৩৬ কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছি।

জনতা ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালে বেক্সিমকো লিমিটেড ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে, ২০২৩ সালে যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৬ কোটি এবং ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা। 

গত নভেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা জনতা ব্যাংকের একটি চিঠি অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির কাছে বেক্সিমকোর মোট দেনা ২৩ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা; যার মধ্যে ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণিকৃত। বাকি প্রায় ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা ওভারডিউ অবস্থায় রয়েছে।

বেক্সিমকো টেক্সটাইলস অ্যান্ড পিপিই ডিভিশনের আওতায় মোট ১৫টি কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র তিনটি কোম্পানি- বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো পিপিই লিমিটেড এবং আরআর ওয়াশিং লিমিটেড চালু রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাকি ১২টি কোম্পানি ১৬ই ডিসেম্বর থেকে লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকরা কারখানা চালু করতে আন্দোলন করছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনতা ব্যাংক বেক্সিমকোর শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বাবদ অর্থ মঞ্জুর করেছে। সরকারও বাজেট থেকে এক মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। তবে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারায় রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

গত ৫ই আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের আগে জুলাই মাসে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের কারখানাগুলোতে মোট শ্রমিক-কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৬৪৯, যার মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৬৯৯ জন। এরপর থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।

ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, আমাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি খুবই বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য। গত পাঁচ বছরে আমাদের রপ্তানি পারফর্ম্যান্স দেখলে বুঝতে পারবেন, প্রতি মাসে আমাদের গড় রপ্তানি ছিল ৩২ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ২০২২ সালে মাসিক গড় রপ্তানি ছিল ৫৯ মিলিয়ন ডলার।

বেক্সিমকো টেক্সটাইল সূত্র মতে, উপকরণ বা কাঁচামালে ১ শতাংশ ব্যয় কমানো গেলে মুনাফা বাড়বে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নেরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

জনতা ব্যাংককে বেক্সিমকো জানিয়েছে, ব্যবসায়িক এই সম্ভাবনা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সচল করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ আদায় ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের বিলম্ব সাফল্যের সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দেবে। কিন্তু ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান না করা হলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।


ব্যাংকগুলোতে কেবল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুবিধা দেয়া হলেও বেক্সিমকো সরাসরি ক্রয়ের অর্ডার নিতে বা বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে শুধু কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হবে। শুধুমাত্র কমিশনভিত্তিক কাজের ভিত্তিতে বেক্সিমকো সব কারখানা পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এক্ষেত্রে বার্ষিক আয় নেমে আসবে ৫৫০ কোটি টাকায় এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় মেটানোর পর মাত্র ৬ হাজার কর্মী ও ৩০০ পরিচালন কর্মকর্তাকে চাকরিতে রাখা যাবে। 

তবে ব্যাংক কোনো ধরনের সুবিধা না দিলে কর্মকাণ্ডের অভাবে সবগুলো শিল্প ইউনিট অচল হয়ে পড়বে। এ ছাড়া বেকার হয়ে যাবে সাড়ে ৩৪ হাজার কর্মী। মোট দায় হবে ২৪ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে কর্মীদের দিতে হবে ৫৫৯ কোটি টাকা, ঋণদাতাদের ৩৬৮ কোটি টাকা এবং ব্যাংক ঋণ বাবদ ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

এসব কথা জানিয়ে বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিশ্রুতি দেন যে, সরকার যদি আমাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকিং সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে নতুন ঋণ পরিশোধে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর দেয়া আগের ঋণ পরিশোধেও একই প্রচেষ্টা থাকবে।

বেক্সিমকো লিমিটেডের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, আগস্ট পরবর্তী মাসগুলোতে কোম্পানিগুলোতে কোনো কাজ হয়নি, রপ্তানিও হয়নি। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রতিমাসে ৮০-১২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তখন থেকে জনতা ব্যাংক ও সরকার শ্রমিকদের বেতন হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। বেক্সিমকো নিজস্ব তহবিল থেকেও ৩০০ কোটি টাকা বেতন দিয়েছে, যা কারখানাগুলোর কোনো কাজে লাগেনি। কারণ, ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা দরকার, তা দেয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত

হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরও ফ্যাক্টরি চালু রাখতে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন - এ কেমন শিল্প কারখানা ।

কাজী মোস্তফা কামাল
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

৫৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ যেখানে অকার্যকর, পাচার হয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে ঋণ সহায়তা না করে বরং উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক নিলাম এর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান বিক্রয় করে ঋণের টাকা পরিশোধ করে নতুন করে শুরু হতে পারে।

Parnel
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status