ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ

সড়কে দুর্ভোগ, ভাড়া অতিরিক্ত, আকাশপথে ট্রেনে টিকিট মিলে না

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

ঢাকা-সিলেট যাতায়াতে নতুন করে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সিলেট থেকে ঢাকায় যাওয়ার যে তিনটি মাধ্যম রয়েছে সেগুলোতে রয়েছে চরম ভোগান্তি। ৬ লেনের কাজ চলমান থাকায় ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। গত এক যুগে এই সড়কে গাড়ির চাপ দ্বিগুণ বেড়েছে। নির্মাণকাজের কারণে বিভিন্নস্থানে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। এ কারণে ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে এখন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগছে। রাত দশটায় সায়েদাবাদ থেকে যাত্রীবাহী বাস ছাড়লে সিলেট পৌঁছে পরদিন সকাল ১০টায়। সড়ক ভাঙাচুরা থাকার কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনাও। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে সিলেট আসার জন্য বাসের টিকিট খুঁজছিলেন সিলেট নগরের বাসিন্দা লোকমান আহমদ। জানালেন- এসি বাসের কোনো টিকিট পাননি। শেষদিকে নন এসি একটি বাসের টিকিট কেটে ১২টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছেন শুক্রবার সকাল ১০টায়। সড়কে কাজ চলার কারণে পথে পথে ভোগান্তি। হবিগঞ্জে কয়েক ঘণ্টার যানজটের আশঙ্কায় ভোররাতে চালক তেলিয়াপাড়া রুট দিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে আসেন। ভৈরব, আউশকান্দি ও শেরপুর টোলপ্লাজাও বিরক্তির অন্যতম কারণ।  টোল দেয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তিনি সহ কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন; ঢাকা-সিলেট রুটে গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে। যানজট লাগলেই হাজারো গাড়ির জটলা লাগে। সহজেই এ যানজট যায় না।

 সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল হোসেন ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে জানিয়েছেন- সায়েদাবাদ কিংবা ফকিরেরপুল থেকে গাড়ি ভৈরব আসতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এর অন্যতম কারণ- যানজট। কাঁচপুর থেকে মাধবদী পর্যন্ত যদি সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল থাকে তাহলে সময় কমবে। আর গোটা সড়কই খানাখন্দে ভরপুর। পাশাপাশি টোলপ্লাজাগুলোতে টোল আদায়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয়। সব মিলিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তিনি বলেন- ৬ লেনের সড়কের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই। তবে- ট্রাফিকিং সিস্টেম ভালো থাকলে দুর্ভোগ কিছুটা কমবে। ঢাকা-সিলেট রুটে বিমানের টিকিট মূল্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় টিকিট মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-সিলেট আকাশ পথে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা, নভোএয়ার, এয়ার এস্ট্রো ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু প্রতিটি ফ্লাইটের টিকিট মূল্য এখন বেশি। এ নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত সিলেটের যাত্রীরা। এ নিয়ে বিমানের চেয়ারম্যান আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর জন্য তিনি অনুরোধ করলে বিষয়টি চেয়ারম্যান দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ঘণ্টায় ঘণ্টায় উড়োজাহাজ কোম্পানি তাদের ফ্লাইটের দাম বাড়াচ্ছে। এতে করে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সকল উড়োজাহাজ কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করছেন বলে জানিয়েছেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন- সিলেট থেকে বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো ঢাকায় খালি যায়।

 এ কারণে বিমানের টিকিটমূল্য কিছুটা সহনশীল। কিন্তু সব সময় বিমান পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর উড়োজাহাজগুলোর দাম বাড়িয়ে দেন। ইউএস বাংলা’র সিলেটের ম্যানেজার সৈয়দ বেলায়েত হোসেন লিমন জানিয়েছেন, ঢাকা-সিলেট রুটের ফ্লাইটে এখন যাত্রী চাপ অনেক বেশি। এ কারণে শেষ সময়ে এসে যারা টিকিট কিনেন তারা উচ্চমূল্যে টিকিট কিনেন। তবে- আগে টিকিট কিনলে সেই মূল্য অনেক বেশি কমে আসবে। তিনি বলেন- ইউএস বাংলার টিকিট মূল্য শুরু হয় ৪৭০০ টাকা দিয়ে। সর্বশেষ ১১,৫০০ টাকায়ও ওয়ান টিকিট বিক্রি হয়। তিনি জানান-  এটি কেবল সিলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। গোটা বিশ্বেই এ মৌসুমের টিকিটের দাম  বেড়ে যায়। তবে কয়েকদিন আগে টিকিট ক্রয় করে রাখলে যাত্রীদের শেষ সময়ে এসে বেশি অর্থ দিয়ে টিকিট কেনার ভোগান্তি কমে আসবে।

 এদিকে যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে সিলেটের ট্রেনের টিকিট এখন সোনার হরিণ। অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন; নির্ধারিত সময়ে অনলাইলে টিকিট মিলেনি। ওই সময়ে সার্ভার ডাউন থাকে। এতে করে টিকিট কেনা সম্ভব হয় না। কাউন্টারে গেলেও টিকিট মিলে না। তবে  ট্রেনের কালোবাজারিরা আগের মতোই সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে টিকিট মিলে। ট্রেনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কালোবাজারিদের সংযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ টিকিটই কালোবাজারিরা অনলাইনে বুকিং করে রাখে। পরে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করে। এই সংকট কাটাতে কয়েক মাস আগে টাঙ্গুয়া নামে একটি ট্রেন সিলেট-ঢাকা রুটে চালু করার প্রস্তাব ছিল। ট্রেনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ওই ট্রেনটি প্রস্তুত করা হলেও পরবর্তীতে সেটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিলেটবাসীকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট রুটে যেসব ট্রেন চলাচল করে সেগুলোর বগি নিম্নমানের। ফলে বৃটিশ আমলের সাপোর্ট নিয়ে এখন সিলেট থেকে ঢাকা ট্রেনযাত্রা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

পাঠকের মতামত

সিলেট রুটে ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো উচিত, এবং ট্রেনের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করুন ।

Ataur Rahman
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

অনলাইনের টিকেটের নামে অপকর্ম চলছে। ুর প্রতিকার অতি জরুরি। সংস্কার, দুর্নীতি দমন, দালাল নির্মুল ইত্যাদি কি শুধু কাজের কথা! ট্রেনের এইসমস্ত অনলাইন ভোজর বাজি বাদ দিয়ে আগের মত কাউন্টারে টিকিট ছারুন প্লিজ। টিকিট চোর দমন করতে পারলেন না! অন্য সব বড়চুরি থামাইবেন কিভাবে? কিছু একটা করুন।

মোঃ মনিরুল ইসলাম সরক
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status