বাংলারজমিন
জামালপুুরে বেপরোয়া জামায়াতের পদহারা নেতা হারুন
জামালপুর প্রতিনিধি
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবারজামালপুরে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি বহাল তবিয়তে ছিলেন জেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের শাসনামলে গ্রেপ্তার আতংকে জামায়াতের সাধারণ কর্মীরা যখন একটি রাতেও বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি ঠিক সেই সময় হারুনুর রশিদ দাপটের সাথে নির্বিঘ্নে তার ব্যবসায়িক সকল কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। আর তার পেছনে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী। এই শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়তের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা হয়েও মো. হারুনুর রশিদ জামালপুর শহরে পরিচালনা করতেন গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতাল নামের একটি অত্যাধুনিক প্রাইভেট ক্লিনিক, বিসিক শিল্প নগরীতেও অটো রাইস মিল, মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এবিবি ব্রিকস্ নামের ইটভাটা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, প্লট বেচা-কেনাসহ নানা ব্যবসা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে গভীর সখ্যতার কারণে তিনি জামায়াতের দুর্দিনে দলটির নেতাকর্মীদের পাশে না থেকে কৌশলে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব কারণে দলের গুরুত্বপূর্ণ সকল পদই হারিয়েছেন ।
এছাড়াও জামায়াত নেতা হারুনের বিরুদ্ধে ক্লিনিক ও অন্যান্য ব্যবসার অংশীদারিত্বের কথা বলেও সাধারণ লোকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। একটি সি.আর মামলায় আদালত ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল হারুনকে ৮ মাসের সাজা প্রদান করলেও এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই জামায়াত নেতা। ইটভাটা নির্মাণে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করেই জোরপূর্বক তা দখল করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম বুরুঙ্গা এলাকার বাসিন্দা নয়ানগর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. নবীন বলেন,গত ২০১৮ সালে জামায়াত নেতা মো.হারুনুর রশিদ ইটভাটা করার জন্য তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জমি ২০২৩ সাল পর্যন্ত লিজ নেয়। চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও হারুন ওই জায়গা প্রকৃত মালিকদের ফেরত না দিয়ে অন্য একজনের কাছে লিজ দিয়ে দেন। এর প্রতিবাদ করলে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীকে দিয়ে তাকে ও তার এক ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন হারুন। তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের পর দেশের পটপরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি এই নেতার কার্যকলাপ। ইটভাটার জমি লিজ নেয়ার বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ৯ই জানুয়ারি হারুন দলবল নিয়ে নবীনের অনুপস্থিতিতে তার বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে নৈশ প্রহরীকে জিম্মি করে গোয়াল ঘরে থাকা আটটি গরু নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেলান্দহ থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন বলে জানান নবীন। মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে মেলান্দহ থানার ওমি মো.মাসুদুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে । এসব ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা হারুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সকল ঘটনাই মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। বৈধভাবে চুক্তির ভিত্তিতে ইটভাটা নির্মাণ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। অভিযুক্ত হারুনুর রশিদের বিষয়ে জামালপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর খলিলুর রহমান বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের কারণে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কর্মপরিষদ সদস্য পদে অবনয়ন করা হয়েছে। আর এসব কারণে তার কর্মপরিষদ সদস্যপদও ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে ।