খেলা
যে উপলব্ধি বদলে দিয়েছে নাঈম শেখকে
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৪ মার্চ ২০২৫, সোমবার
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে (ডিপিএল) প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে মোহাম্মদ নাঈম শেখ খেললেন ১৭৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। সঙ্গে সতীর্থদের কার্যকর অবদানে চারশ’ ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। যা ঢাকা ক্লাব ক্রিকেটের ইতিহাসে এতদিন কোনো দলই করতে পারেনি। যার ব্যাট ধরে এই ইতিহাস সে অবশ্য তা জানতো না। শুধু নয় এনসিএল টি- টোয়েন্টি, বিপিএলের পর এখন ডিপিএল। নাঈমের রান উৎসব যেন থামছেই না। টানা ২৫-৩০টা ম্যাচে ধারাবাহিক পারফর্ম করা চাট্টিখানি কথা না। অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে ২০২৩-এর পর তার আর মাঠে নামা হয়নি। এবার কি তাহলে লাল সবুজের জার্সিটা আবারো পরানোর সুযোগ পাবেন তিনি! তার চেয়ে বড় প্রশ্ন তার ফর্মে ফেরা আর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। মূলত উপলব্ধি আর ডিসিপ্লিনটাই নাকি তাকে বদলে যেতে সাহায্য করেছে বলে দাবি করেছেন নাঈম। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ শেষ এনসিএল ও বিপিএল থেকে ডমিনেট করে খেলার চেষ্টা করছি। যদি নির্দিষ্ট করে বলতে চান তাহলে বলবো আমার পার্সোনাল ও প্রফেশনাল লাইফে ডিসিপ্লিন থাকার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে নিজের কাজগুলো বুঝে বুঝে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করছি। মূলত পজেটিভ মানসিকতা নিয়ে কাজ করছি এটি না থাকলে আসলে এই ধরনের ক্রিকেটে উন্নতি করতে পারবো না।’
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৪২২ রান করে প্রাইম ব্যাংক। ঢাকা লীগে তো বটেই, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের মাঠে যেকোনো দলের এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এই ইতিহাস গড়ার নায়ক ছিলেন নাঈম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১২৫ বলে ১৮ চারের সঙ্গে ৮টি ছক্কা মারেন ২৫ বছর বয়সী ওপেনার। স্ট্রাইকরেট আর ধারাবাহিকতা নিয়ে অনেক লম্বা সময় ধরেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে নাঈম শেখের বিপক্ষে। তবে এবার এনসিএল টি-টোয়েন্টি, বিপিএল এখন ডিপিএল। নাঈমের রান উৎসব যেন থামছেই না। ছিলেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি ও বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই বিরল কীর্তি গড়েছিলেন তিনি মাস দুয়েক আগে। সেই ধারাই বজায় আছে চলতি ডিপিএলেও। অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো তার ২০২২-এ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেটি ছিল তার শেষ ও একমাত্র আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ। ২০১৯-এ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে দেশের হয়ে ২০২২ পর্যন্ত খেলেছেন ৩৫ ম্যাচ। পরের বছরই ওয়ানডে অভিষেক হয় সব শেষ ২০২৩ এই ফরম্যাটে খেলেছেন তিনি। কোনো ফরম্যাটেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি ধারাবাহিকভাবে। এবার নিজেকে বদলে ক্যারিয়ারে ডিসিপ্লিন এনে ফের ফিরেছেন ফর্মে। দেখছেন জাতীয় দলের ফেরার স্বপ্নও। নিজের এই পরিবর্তনের যে উপলব্ধি করেছেন তা নিয়ে নাঈম বলেন, ‘দেখেন প্রফেশনাল ক্রিকেটে ভালো খেলতে হলে ব্যক্তিগত জীবনে ডিসিপ্লিন বেশি প্রয়োজন। যেমন আমি যদি ঠিকমতো ঘুমাতে না পারি সেটি আমার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে, মাঠে আমি স্ট্রাগল করি। শুধু ঘুম না খাওয়ার অভ্যাসটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বলতে চাইছি মাঠে বাইরের বিষয়গুলো পারফরম্যান্সে বেশ বাজে প্রভাব ফেলে। তাই দুই জায়গাতেই ডিসিপ্লিন থাকাটা বেশ জরুরি। এই বিষয়গুলো নিজের মধ্যে ছিলো না জানালেও মানা হতো না। এখন যা আমি উপলব্ধি করতে পারছি।’
অন্যদিকে নাঈম শেখকে নিয়ে ট্রল আর সমালোচনার শেষ নেই। খারাপ করলেই শুরু হয় নানা ধরনের তির্যক মন্তব্য। ক্যারিয়ারে উত্থান-পতনে এমন সমালোচনাও বেশ কঠিন বিষয়। কীভাবে নিজেকে সেই সময়টাতে ধরে রাখেন নাঈম? এ নিয়ে এই ওপেনার বলেন, ‘দেখেন খারাপ সময়টাতে আসলে পরিবার ছাড়া আর কাউকে কাছে পাওয়া যায় না। তাই আপনি যদি তখন খারাপ বিষয়গুলো নিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন না। আর হ্যাঁ, এমন সমালোচনা ও ট্রল তো মাঝে মাঝে নিজের মধ্যে প্রভাব ফেলেই। তবে এ নিয়ে বসে থাকা যাবে না। বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেটাররা এমন নেগেটিভ বিষয়গুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় আমিও সেই কাজটি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’