ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক

আবাহনীর এই শিরোপার স্বাদ অন্যরকম

সৌরভ কুমার দাস
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

বাজেট নেই, একের পর এক তারকা ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের (ডিপিএল) এবারের আসর শুরুর আগে আবাহনী লিমিটেডের অবস্থা ছিল ঠিক এমন। কোচ হিসেবেও খালেদ মাহমুদ সুজনের জায়গায় হান্নান সরকারকে বেছে নেয় তারা। লিটন কুমার দাস থেকে শুরু করে জাকের আলী, আফিফ হোসেনদের টাকার অভাবেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ক্লাবটি। তারকা বলতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন আকাশী-নীলের ডাগআউটে। শান্তকে তো সুপার লীগেও পায়নি তারা। ৫ই আগস্টের পর প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় একের পর এক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে আবাহনীকে। সেসব অতিক্রম করেই ডিপিএল-এ হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে হান্নান সরকারের দল। অঘোষিত ফাইনালে অধিনায়ক সৈকত আর মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটিংয়ে মোহামেডান পাত্তাই পায়নি। এসব কারণেই ষষ্ট আসরে পঞ্চম শিরোপা জিতলেও এবারের শিরোপাটা আবাহনীর জন্য অন্যরকম তৃপ্তির। 
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল ডিপিএল’র অঘোষিত ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী। প্রতিপক্ষের ২৪০ রান তারা পেরিয়ে গেছে ৫৬ বল বাকি থাকতে। হার দিয়ে আসর শুরু করা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সফলতম দলটি ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ১৫ জয়ে ধরে রাখলো মুকুট। সব মিলিয়ে ডিপিএল-এ আবাহনীর এটি ২৪তম শিরোপা। ২০১২-১৩ মৌসুমে লিস্ট ‘এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাদের সপ্তম ডিপিএল শিরোপা এটি, যার মধ্যে ২০১৯-২০ আসর হয়েছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এই সময়ে অন্য কোনো দলের নেই একাধিক শিরোপাও। আর ঢাকার শীর্ষ ক্লাব ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে এ নিয়ে পঞ্চমবার শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করল আবাহনী। ফাইনালে ২ উইকেট নেয়ার পর রান তাড়ায় ৫ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৫ বলে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ম্যাচসেরা হন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার সঙ্গী মিঠুন অপরাজিত থাকেন ৭৯ বলে ৬৬ রানে। আর ডিপিএল শিরোপা জয়ের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো মোহামেডানের। ২০১৯ সালের পর এই লীগে আর শিরোপা জেতেনি মতিঝিল পাড়ার দলটি। 
গেল ১৫ বছরে আবাহনীর শিরোপা জয়ে নানা বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে। কখনো ম্যাচ পাতানো, কখনো আম্পায়ারদের উপর প্রভাব খাটানোসহ নানা অভিযোগ ছিল দলটির বিরুদ্ধে। গত ৫ই আগস্ট দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দলটি। যেখানে অন্যবার আনলিমিটেড বাজেট ছিল সেখানে এবার সেটা কমে অর্ধেকেরও কমে চলে আসে। ফলে শুরুতেই দল সাজানোতে বড়সড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয় তাদের। ম্যাচ শেষে আগের বছরগুলোর শিরোপার সঙ্গে এবারের শিরোপা জয়ের পার্থক্য নিয়ে কথা বলতে হয় আবাহনীর হেড কোচ হান্নান সরকারকে। আগের শিরোপার বিতর্ক নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে না চাইলেও এবারের শিরোপায় যে বাড়তি তৃপ্তি কাজ করছে সেটা স্বীকার করে নেন। হান্নান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ঢাকা ক্রিকেট লীগে আবাহনী বা মোহামেডানের জার্সি পড়লে বাড়তি মোটিভেশন চলে আসে। এর আগে আবাহনীর চ্যাম্পিয়নশীপকে অনেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে আলোচনায় এনেছে। এবার দেশের প্রেক্ষাপট বদলানোর পর সব দলকে নিউট্রাল জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারেন। অনেক দিক থেকে বিতর্ক হয়েছে, আম্পায়ারিং নিয়ে কথা হয়েছে তবে দিন শেষে সবাই যার যার জায়গায় ফেয়ার থাকার চেষ্টা করেছে। ঠিক একই ভাবে মাঠের ক্রিকেটে সবাই সেরা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মাঠের ক্রিকেটে যদি ভালো খেলে যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় তাতে আলাদা তৃপ্তি কাজ করে। আমার মনে হয় এবার আবাহনীর সেভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার অনেকে মন থেকেই আবাহনীর জন্য দোয়া করেছে। এটা নিশ্চয়ই অন্যরকম ফিলিংস, বিতর্ক ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলাদা ভালো লাগা থাকে।’
আগের শিরোপা জয়ে নানা বিতর্ক থাকায় এবার কলঙ্কমুক্ত হলো কিনা আবাহনী, এই প্রশ্নে হান্নান বলেন, ‘আগে আবাহনী অনেক টাকা খরচ করে টিম করত, জাতীয় দলের সব প্লেয়ারদের নিতো, চ্যাম্পিয়ন মোটামুটি ধরেই নেয়া যেত, প্লেয়ার্স কোয়ালিটি দেখে। আমার মনে হয় আগের আবাহনী যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আপনি তাদের মাঠের ক্রিকেটে ছোট করে দেখতে পারবেন না। নামগুলো দেখলেও পাবেন, পারফরম্যান্স দেখলেও পাবেন। এবার মাঠের ক্রিকেটে ওই রকম ভারী নামগুলো পাবেন না, ওইভাবে স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে হয়েছে। এটার তৃপ্তি অন্যরকম।’
আচরণবিধি ভেঙে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়কে পায়নি এদিন আগে ব্যাটিং করা মোহামেডান। তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করা রনি তালুকদার ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৯ চারে এই ওপেনার করেন ৪৫ রান। অন্য দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তৌফিক খান (২ চারে ১৬) ও আনিসুল ইসলাম (১ চারে ১৫) দ্রুত ফিরলে শুরুতেই চাপে পড়ে মোহামেডান।  একপ্রান্তে কিছুক্ষণ লড়াই করে ৬ চারে ৪২ রান করেন ফরহাদ হোসেন। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুলের ব্যাটে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় মোহামেডান। তাদের যুগলবন্দিতে আসে ৯০ রান। নিজের পরপর দুই ওভারে থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন মোসাদ্দেক। রিয়াদ ৬২ বলে আর আরিফুল ৫৭ বলে ৫০ রান করেন। আবাহনীর হয়ে সমান ২টি করে উইকেট নেন মোসাদ্দেক ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। 
রান তাড়ায় প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন শাহরিয়ার কমল। এরপর পারভেজ হোসেন ইমন ও জিসান আলমের ৫৬ রানের জুটিতে শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দেয় আবাহনী। ৩ ছক্কা ও ১ চারে ২৮ ইমন আর ১ চারে ১০ রান করা মেহরাব দ্রুত ফিরলে আবার চাপে পড়ে তারা। এরপর ৫৩ বলে ৫৫ রান করা জিসান ফিরলে ১০৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে আবাহনী। এরপর অধিনায়ক মোসাদ্দেক ও মিঠুন মিলে দলকে এগিয়ে দেন। ১২২ বল স্থায়ী ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আবাহনীকে জয় এনে দেন তারা দু’জন।

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status