ঢাকা, ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

দিল্লি থেকে সিলেট

যেভাবে দেশে ওরা

ওয়েছ খছরু, সিলেট, মুফিজুর রহমান, কানাইঘাট থেকে
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা। দিল্লি জুড়ে রেড অ্যালার্ট। অনেক বাংলাদেশি বসবাস করে ওখানে। কাজের সন্ধানে গিয়ে তারা আর ফিরেনি। রেড অ্যালার্ট চলাকালে দিল্লি পুলিশ চালায় চিরুনি অভিযান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে। আর এতে ধরা পড়ে ১৪৭ জন বাংলাদেশি। ভারতে বসবাসের তাদের কোনো বৈধ পারমিট ছিল না। এ কারণে সবাইকে একসঙ্গে সিলেট সীমান্তে বিএসএফের কাছে প্রেরণ করে দিল্লি পুলিশ। গতকাল এসেছেন ১৬ জন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় কানাইঘাটের আলোচিত ডোনা সীমান্তে তাদের আটক করে বিজিবি। কানাইঘাটের সুরমা বাজারের একটি দোকানে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্ধ্যায় হস্তান্তর করা হয় কানাইঘাট পুলিশের কাছে। রহিম আলী। বয়স ৪০। বাড়ি বাগেরহাটে। প্রায় ১৬ বছর আগে সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। কিছুদিন পর চলে যায় দিল্লি। ওখানে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতো। বসবাস করতো একটি কলোনিতে। পাক-ভারত যুদ্ধের দামামার সময় দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছিলেন বাসাতেই। ৬ দিন আগে দিল্লি পুলিশ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে রহিম আলীকে। নিয়ে যায় পুলিশ ক্যাম্পে। ওখানে গিয়ে দেখেন অনেক নারী-পুরুষ। আছে শিশুও। তাদের সঙ্গে রাখা হয় রহিমকে। কানাইঘাটে আটক হওয়া ১৬ জনের একজন তিনি। রহিম আলী জানান, তার বাড়িও সীমান্ত এলাকায়। পরিচয় থাকায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যায় ভারতে। ওখান থেকে যায় ত্রিপুরা রাজ্যে। কয়েকদিন অবস্থান করে সেখানে। এরপর সঙ্গে থাকা লোকজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দেখা হয় ভারতীয় কয়েকজন খাসিয়ার সঙ্গে। তাদের গাড়িতে করে চলে যান দিল্লিতে। ওখানে খাসিয়াদের একটি হোটেল রয়েছে। সেই হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেয়। আর ওই হোটেলেই তার কেটে যায় ১৬ বছর। মঙ্গলবার তাদের নিয়ে আসা হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উখিয়াং এলাকায়। তাদেরকে বিএসএফ’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনিসহ ১৬ জনকে সমঝে দেয় সীমান্তে ওপারে ভারতীয় চোরাকারবারিদের কাছে। সন্ধ্যার পর ভারতীয় চোরাকারবারিরা তাদের তুলে দেয় বাংলাদেশের চোরাকারবারিদের কাছে। বাংলাদেশে আসার বিবরণ দিয়ে রহিম আলী বলেন- তারা বাংলাদেশ ও ভারতের ডোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে কানাইঘাটে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় চোরাকারবারিরা তাদের মালামাল লুট করে। সঙ্গে যা ছিল সব ছিনিয়ে নেয়। ভোররাতের দিকে তারা ডোনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে  নিয়ে এসে আটগ্রামের পথ দেখিয়ে বলে ওদিকে চলে যাও। এরপর থেকে তারা একসঙ্গে হাঁটা শুরু করেন। দেশে ফিরেছেন এই স্বস্তিতে ছিলেন। কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের মধ্যবর্তী সুরমা বাজারে আসামাত্র স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিজিবি’র সদস্যরা তাদের আটক করেন। রহিম আলী জানান- তার সঙ্গে দেশে ফেরা সবাই দিল্লি ও হরিয়ানাতে ছিলেন। মহিলারা কাজের বুয়ার চাকরি করতেন। আর পুরুষরা কাজ করতেন দোকানে। দিল্লি থেকে চারদিনের জার্নি শেষে দেশে ফেরায় সবাই ক্লান্ত। কানাইঘাটের পূর্ব লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আসাব উদ্দিন আটকের সময় এলাকায় ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি সেখানে আসেন। আসাব জানান- সীমান্ত চোরাকারবারিদের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরেছেন। তাদেরকে বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাদের একেক জনের গল্প একেক রকম। সবাই কাজের সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার পর দিল্লিতে চলে যান। ওখান থেকেই তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি বলেন- তাদের সঙ্গে যারা মেঘালয়ের উখিয়াং পর্যন্ত এসেছেন তাদের সবাইকে একদিনে পুশব্যাক করা হয়নি। ধাপে ধাপে করছিলো। প্রথম ধাপে যারা এসেছেন তারা সবাই আটক হয়েছে। আরও শতাধিক নারী-পুরুষ সীমান্তে ওপারে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে আটককৃতরা জানিয়েছেন। তবে তাদেরকে ডোনা সীমান্ত দিয়ে পুশব্যাক করা হবে কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের নেতা মীম সালমান কানাইঘাটের সুরমা বাজারে যান। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটের আলোচিত সীমান্ত ডোনা। এই সীমান্তে সিলেটের রায়হান হত্যার আসামি সাবেক এসআই আকবর ও গণ-অভ্যুত্থানের পর বিচারপতি মানিক ওই সীমান্তে আটক হয়েছিলেন। এখন ভারত থেকে এ সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে পুশব্যাক করা হয়েছে। স্থানীয়রা বিজিবি’র সঙ্গে সহযোগিতা করে দেশে ফেরা ১৬ জনকে আটক করেছেন। এদিকে সিলেটের ১৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছেন- যারা আটক হয়েছে তারা দিল্লি ও হরিয়ানা থেকে এসেছেন। দেশে ফেরার পর বিজিবি’র সদস্যরা আটক করেন। তাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর বিকালে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তাদের ব্যাপারে আইনি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন- সীমান্তে বিজিবি’র সদস্যরা সতর্ক রয়েছে।  
 

পাঠকের মতামত

১ নং লক্ষীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এর মেম্বার সাহেবের নাম জনাব নুরুল ইসলাম।

আব্দুল কুদ্দুস
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১:৪৬ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status