বাংলারজমিন
ময়মনসিংহে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই চলছে ৭ সহস্রাধিক অটোরিকশা
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে
১৮ মে ২০২৫, রবিবার
ময়মনসিংহ নগরী থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ৩ চাকার অবৈধ মাহেন্দ্র বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চলাচল করছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৮৪টি সিএনজি’র রেজিস্ট্রেশন রয়েছে বাকি ৭ সহস্রাধিক অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নেই। এতে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি অধিকাংশ লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক এসব গাড়ি চালানোর ফলে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা ও বাড়ছে অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা। এসব গাড়ির ফিটনেসও নবায়ন করা হয় না। এদিকে গত বছর ৫ই আগস্টের সরকার পতনের পর মোটরমালিক সমিতির চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও বৈধ-অবৈধ গাড়ির সিরিয়াল দেয়ার জন্য প্রতিটি গাড়িকে দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা করে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হারে মাসে কোটি টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকা কোথায় যায় কীভাবে খরচ করা হয় তা কেউ জানে না। প্রশাসনের চোখের সামনে অবৈধ এসব গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একে-অপরকে দোষারোপ করছে। এর দায়ভার কার- এই প্রশ্ন সকলের।
বাধাহীনভাবেই চলাচল করছে এসব বৈধ ও অবৈধ গাড়ি। বিআরটিএ বলছে- অবৈধ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গত মার্চ ’২৫ মাসে ৪৪টি মোবাইল কোর্ট করে ২০১টি মামলা করা হয়েছে এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করেছেন।
ট্রাফিক বিভাগ বলেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩ মাসে ৫৬৭টি সিএনজি আটক করে জরিমানা করেছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে মামলা ও জরিমানা করার পর কেন এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করছে না। এ ব্যাপারে বিআরটিএ ও জেলা ট্রাফিক বিভাগে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বিআরটিএ জেলা কমিটি সভায় গত ২ বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ১ হাজার সিএনজিকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে। কিন্তু গত ২ বছরে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে প্রায় ৪শ’টি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরো ৬শ’টি সিএনজি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সিএনজি’র মালিকরা রেজিস্ট্রেশন করার কোনো আগ্রহ নেই। তার কারণ জানতে চাইলে সিএনজি’র মালিকরা জানান, সরকার নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি ১৪ হাজার ৭৩৯ টাকা। রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে দালালের মাধ্যমে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সরাসরি নিজেরা আবেদন করলে নানা অজুহাতে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা/কর্মচারীরা হয়রানি করে। এজন্য রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা মাঝে মধ্যে জরিমানা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন নগরীর ৬টি স্ট্যান্ড থেকে এসব গাড়ি চলে। স্ট্যান্ডগুলো হচ্ছে টাউন হল মোড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, চড়পাড়া মোড়, দিঘারকান্দা বাইপাস মোড়, আকুয়া বাইপাস মোড় ও ফুলবাড়ীয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ পরিদর্শক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, গত মার্চে ৪৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২০১টি মামলা করেছি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছি। তবু রোধ করা যাচ্ছে না। বিআরটিএ’র একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব না। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ছাড়া তো আমরা একা অভিযান চালাতে পারি না। সকলের সমন্বয়ে কাজ করলে সমাধান সম্ভব। রেজিস্ট্রেশনের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় ও দালাল সম্পর্কে বলেন, আমি দালালদের পাত্তা দেই না। গাড়ির মালিকরা দালালের কাছে না গিয়ে সরাসরি অফিসে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদন করতে পারেন। তাদেরকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।
এ ব্যাপারে জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, মামলা, জরিমানা করেও এদের রোধ করা যাচ্ছে না। গত ঈদে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে অটোরিকশার মালিক ও চালকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও আবার তারা তাদের মতো অবৈধভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এসব রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির মালিক বা চালক খুঁজে পাওয়া যায় না। রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব বিআরটিএ’র। এরপরও আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।