ভয়াবহ করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে হাওর পাড়ের জেলা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়। গত ১ সপ্তাহে করোনার উপসর্গ নিয়ে কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরও মানুষের মাঝে করোনার মহামারী বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে উপজেলা শাল্লা ইউনিয়নের মনুয়া গ্রামের রাহিম মিয়ার স্ত্রী ২ সন্তানের জননী নিগলু আক্তার ( ৩০)।
এবিষয়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন নিগলু আক্তার । আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সহ অক্সিজেন দেই। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন সহ তাকে সিলেট রেফার করি। সিলেট যাবার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান রোগীর অভিভাবক জানিয়েছে প্রায় ১ সপ্তাহ যাবত তিনি জ্বর সর্দী কাশি নিয়ে তার নিজ বাড়িতেই না কি গ্রাম্য চিকিৎসক হতে ঔষধ খেয়েছেন।
অথচ পাশেই হাসপাতাল, কিন্তু এখানে আসতে অনিহা এলাকার মানুষের।
তিনি জানান মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল, কিন্তু পরিক্ষা না করায় সঠিক ভাবে করোনা রোগী বলতে পরছিনা । এমন অবস্থা এলাকার প্রতিটি গ্রামে। প্রায় প্রতি পরিবারে জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে রোগী লেগেই আছে।
এবিষয়ে আনন্দপুর গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়োয়া শিক্ষার্থী নিরাপদ আচার্য্য বলেন, এ বয়সে বহুবার জ্বর হয়েছে, তবে এবারের জ্বর ভিন্ন। আমি প্রায় ১০ দিনে সুস্থ হয়েছি। তিনি বলেন আমি নিশ্চিত পরিক্ষা করলেই আমার করোনা প্রজেটিব হতো। প্রচন্ড জ্বর সঙ্গে সর্দি কাশি এবং গায় প্রচন্ড ব্যথা ছিল। এক পর্যায়ে আমার পাতলা পায়খানাও শুরু হয়েছিল। আমি কাউকে না জানিয়ে খুব সাবধানে একা শুধু ঔষধ খেয়েছি। ঈশ্বরের কৃপায় আমি সুস্থ। কিন্তু এখনো খাবার খাইতে পারছি না। তিনি জানান বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় সঠিক ভাবে করোনা পরিক্ষা করা হলে একাধীক করোনা প্রজেটিব রোগী সনাক্ত হবে প্রতিটি গ্রামে, এতে কোন সন্দেহ নাই।
শাল্লা হাসপালের সূত্রে জানা যায় গত ১ জুলাই হতে ২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৪ জন করোনা সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন এখনও শাল্লা হাসপাতাল আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা হলেন আটগাঁও ইউনিয়নে আটগাঁও গ্রামের আলী হোসেনের স্ত্রী আইকুল বেগম, একই গ্রামের মাষিব মিয়ার ছেলে আলী হোসেন,
ইয়ারাবাদ গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে আজন নবী ও রৌয়া গ্রামের বীরেন্দ্র সরকারের ছেলে বিশ্বজিৎ সরকার। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন। উপজেলায় দ্বিতীয় দফায় ১২ জুলাই হতে ২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭ শত ৪৮ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছেন।
এনিয়ে কথা হয় শাল্লা হাসপাতাল কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডাক্তার সুমন ভূইঞা বলেন, এলাকার মানুষজন করোনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর সমালোচনা করেন যত্রতত্র । অনেকে বলে কিসের করোনা,এমন জ্বর সর্দি কাশি না কি এখানে এসময় হয়েই থাকে। ফলে টিকা নিতে লোকের সংখ্যা কম। তিনি আরো জানান এখন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার অনেকেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে।