শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স কোথায়! প্রশ্নের জবাবে নেপালি সিকিউরিটি গার্ড চানক্য বললেন- ‘আমার পেছনে আসো।’ সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠে দেখলাম গ্যালারি। একটু অবাক হলাম! ভাবলাম হয়তো ভুল করেছে, আমার ভাষা বুঝতে পারেনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ভুলটা ভাঙলো আমারই। এখানে কোনো কাঁচ আর কংক্রিটের দেয়ালে মোড়ানো প্রেসবক্স নেই। যা আছে তা একেবারেই উন্মুক্ত। সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সংবাদকর্মীদের জন্য কাজ করার জায়গাটি দর্শক গ্যালারির মাঝখানে। এখানে মাঠে ক্রিকেট ব্যাট-বলের প্রতিটি শব্দ জীবন্ত হয়ে উন্মুক্ত প্রেসবক্সেই সংবাদকর্মীদের কলমে রচিত হয় নানা গল্প নানা ইতিহাস। সেই ইতিহাসে জাভেদ মিঁয়াদাদ, শচীন টেন্ডুলকার, আকরাম খান, আতহার আলী থেকে শুরু করে গতকাল যোগ হলো টাইগারদের তরুণ তারকা নাঈম শেখের নামও।
হ্যাঁ, এমন উন্মক্ত জায়গাতে বসে সবশেষ সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০১৯-এ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনালে। তবে সেখানে অতিরিক্ত সংবাদিক বসানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু শারজায় আপনি লেখার সময় পাবেন বোলার-ব্যাটারের লড়াইয়ের প্রতিমুহূর্তের অনুভূতি। তবে বিশ্বে এমন প্রেসবক্স কম থাকলেও বিরল নয় বলেই জানালেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১ কভার করতে আসা দৈনিক প্রথম আলোর স্পোর্টস এডিটর ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংবাদিক তারেক মাহমুদ মনি। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘এমন প্রেসবক্স বিশ্বে আরো কয়েকটি আছে। আমার নিজেরও এমন উন্মুক্ত প্রেসবক্সে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখেছি। আসলে নতুন কিছু নয়। তবে এমন প্রেসবক্সে কাজ করার অনুভূতিটাই অন্যরকম। খেলার সঙ্গে একেবারেই মিশে যাওয়া যায়। সুবিধা যেমন আছে আবার অসুবিধাও আছে। যেমন, গ্যালারিতে দর্শকদের শব্দ, মিউজিক খেলার সময় মনোযোগ নষ্ট করে। এছাড়া বাকিটা দারুণ ব্যাপার।’
বাংলাদেশ দল শারজাহয় সর্বশেষ খেলেছে ২৬ বছর আগে। ১০৯৫ এ আকরাম খানের নেতৃত্বে সেই দলের আরেক সদস্য আতহার আলী খান। দু’জনই গতকাল ছিলেন হারানো স্মৃতির ভেন্যুতে। একজন বিসিবি পরিচালক আরেক জন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। মাঠে বসেই দেখেছেন নতুন প্রজন্মের বিশ্বকাপের লড়াই। এমন উন্মুক্ত প্রেসবক্সে যেমন অবাক এখানে আসা তরুণ সংবাদকর্মীরা। তেমনি আপ্লুত অভিজ্ঞরা। বিশেষ করে দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘দারুণ লাগছে। আমরাতো সবসময়ই কাঁচের দেয়ালে ঘেরা প্রেসবক্সে বসে লিখি। মাঠের যে ফিলিংন্স সেটা আমরা পাই না। দর্শকদের উল্লাস, হাসি কান্না থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের আবেগ অনুভূতি সবই অনুভব করা যায়। হ্যাঁ, এমন উন্মক্ত প্রেসবক্সে বসে কাজ করেছি আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে। তবে সব সময় এমন উন্মুক্ত ক্রিকেট দেখে লেখার আমাদের সুযোগ হয় না। আরব আমিরাতে আগেও এসেছি। এবারই প্রথম এখানে এমন স্বাদ পেলাম। হ্যাঁ, এখানে ভালো মন্দ দুটিই আছে। যেমন লেখার সময় দর্শকদের চিৎকার চেচামেচিতে মনোযোগ নষ্ট হয়। তবে এমন উন্মক্ত ক্রিকেট দেখে লেখার যে গল্প সেটা আমার কাজে জীবন্তই মনে হয়।’