শরীর ও মন
ত্বকের রোগ ফোস্কা ও এর প্রধান কারণসমূহ, উপসর্গ ও চিকিৎসা
ডা. দিদারুল আহসান
৫ মে ২০২৪, রবিবারফোস্কা
ফোস্কা হলো একটি ছোট দেহস্থ থলি বা আবরণের মধ্যে বা ত্বকের উপরে একটি দাগ বিশেষ যার মধ্যে তরল সংগৃহীত হয় যেটি ত্বকের উপরের স্তরে (ত্বকের উপরিতলে) দেখা যায়। শরীরে হাত এবং পায়ে সব থেকে বেশি ফোস্কা পড়ে। ফোস্কা সাধারণত পরিষ্কার তরল (সিরাম) দ্বারা, রক্ত বা পুঁজ দ্বারা ভর্তি থাকে। সবসময় চুলকানো অথবা ত্বক রগড়ানো হলে ত্বকের উন্মুক্ত জায়গার ক্ষতি হয় এবং তার ফলে তরল সংগৃহীত হয়, যা এই স্থানের ত্বকের নিচে অবস্থিত শরীর কলাকে পুনরায় ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
এটি হওয়ার কারণের উপর নির্ভর করে, ফোস্কার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো বিভিন্ন হয়ে থাকে। ফোস্কাতে সাধারণভাবে ব্যথা এবং লালভাব দেখা যায় (যেমন ভুল মাপের জুতা পরা, পুড়ে যাওয়া, আঘাত ইত্যাদি)। পুড়ে যাওয়ার কারণে হওয়া ফোস্কাতে, অটোইমিউন রোগে (এপিডারমলিসিস বুলো বু সা) লালভাব এবং চামড়া উঠে যেতে দেখা যায়। ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে জ্বর আসার ফলে ঠোঁটের কাছে ফোস্কা হয় (জ্বর ফোস্কা)। একজিমা ত্বক সংক্রমণের ফলে যে ফোস্কা হয় তাতে চুলকানি হয়ে থাকে। ফ্রস্টবাইট ফোস্কার ক্ষেত্রে চামড়া সাদা এবং চকচকে হয়ে যায় এবং অসাড়ভাব দেখা দেয়। রোদে পোড়ার কারণে যে ফোস্কা হয় তাতে চামড়ার উপর বলিরেখা ও তামাটে ভাব দেখা দেয়। কোঁচ দাদ (হারপেস জস্টার), চিকেন পক্স ইত্যাদিতে ফোস্কায় জ্বালাভাব সঙ্গে যন্ত্রণা হয় ও তার সঙ্গে একটি খোস দেখা দেয়।
ফোস্কার প্রধান কারণসমূহ
চামড়ার উপর ফোস্কার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে ত্বক ঘর্ষণ বা মার্জন। তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে, রাসায়নিক, অতিবেগুনী রশ্মি, হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা ইত্যাদি কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া। চিকেন পক্স, হারপিস জস্টার এবং ত্বক সংক্রমণ প্রভৃতি রোগ।
কীভাবে ফোস্কা নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা হয়?
শারীরিক পরীক্ষা, উপসর্গের ইতিহাস এবং বিভিন্ন পরীক্ষা ফোস্কা নির্ণয় করতে ডাক্তারদের সাহায্য করে। পরীক্ষা এবং ইতিহাস অবয়ব- পরিষ্কার তরল, রক্ত বা পুঁজ দ্বারা ফোস্কা গঠিত হয় অবস্থান - শরীরের একপাশে বা নির্দিষ্ট অবস্থানে বা পুরো শরীরের উপর ফোস্কা উপসর্গের ইতিহাস - ফোস্কা ব্যথা, চুলকানি, জ্বর, ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরীক্ষা
সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা আইজিই স্তর নির্ণয় অ্যালার্জি শনাক্তকরণে, আইজিজি, আইজিএম এবং অন্যান্য উন্নত পরীক্ষাগুলো অটোইমিউন রোগ নির্ণয়ের জন্য। ফোস্কা থেকে নেয়া তরলের নমুনায় থাকা ব্যাকটেরিয়ার অনুশীলন করে শনাক্ত করা যায় সংক্রমণের কারণ যে ব্যাকটেরিয়া সেটিকে এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকটি। ফোস্কার কারণ যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসটি সেটিকে শনাক্ত করতে পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর করা হয়। অ্যালার্জির কারণগুলো শনাক্ত করতে রক্তের অ্যালার্জি পরীক্ষা এবং ত্বকের অ্যালার্জি পরীক্ষা করা হয়।
ত্বকের বায়োপসি- ফোস্কার কারণ শনাক্ত করতে এবং অন্যান্য কারণগুলো জানতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ত্বকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শনাক্ত করতে বিশেষ পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয় যেটি ফোস্কা গঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বংশগত সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে জিনগত পরীক্ষাগুলো করা হয়। ফোস্কা সাধারণত ওষুধ ছাড়া নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। ওষুধ যে সব পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয় তা হলো: অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় ফোস্কা যদি পূঁজপূর্ণ হয় তবে সংক্রমণের চিকিৎসা করতে যখন ফোস্কা বার বার হয় অ্যালার্জি, আলোক-সংবেদনশীলতা, অথবা পুড়ে যাওয়ার কারণে যদি ফোস্কা মারাত্মক আকার ধারণ করে যদি মুখের ভেতর অথবা অন্য কোনো অস্বাভাবিক জায়গায় ফোস্কা হয় অ্যান্টিভাইরাল বা সংক্রমণরোধী ওষুধ চিকেন পক্স, হারপিস জস্টার বা জ্বর ফোস্কার কারণে হওয়া ফোস্কার জন্য। কর্টিকোস্টেরয়েডস এবং ইমিউনিটি মডিউলেটিং ওষুধ অটোইমিউন রোগের কারণে হওয়া ফোস্কায় ব্যবহৃত হয়। প্রদাহনাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়। অ্যালার্জিরোধী ওষুধ চুলকানি কমাতে ব্যবহার করা হয়। সানস্ক্রিন লোশন ত্বককে রোদে পোড়ার হাত থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়। ফোস্কার অবস্থা মারাত্মক হলে এবং ত্বকে এর কারণে বিকৃতি সৃষ্টি হলে সার্জারি এবং ত্বক গ্রাফটিং প্রয়োজনীয়, বিশেষত অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। নিজের যত্ন ফোস্কাটি ফাটানো এবং সেই স্থানের ত্বক নির্মো চন এড়িয়ে চলতে হবে। ফেটে যাওয়া ফোস্কা থেকে তরল বের করে দেয়ার পর এটিকে নরম ড্রেসিং বা আবরণের দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। ফোস্কা হতে পারে এমন ভুল মাপের জুতা ব্যবহার না করা। বিশেষত পায়ের ফোস্কার ফেটে যাওয়াকে এড়াতে, যথাযথ জুতোর সোল ব্যবহার করতে হবে।
লেখক: চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌন বিশেষজ্ঞ,
আল-রাজী হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড।
১২, ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন: ০১৭১৫-৬১৬২০০