শরীর ও মন
হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরি ও খেলোয়াড়দের করণীয়
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবারনানা রকম দুর্ঘটনার জন্য হতে পারে হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরি। এটা হলে কী করণীয়, তা নিয়ে বিস্তারিত জানা থাকলে এবং এ সমস্যা হলে কী করতে হবে বা করণীয় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হাঁটুর ভেতরে দু’টি এবং বাইরে দু’টি লিগামেন্ট এবং দু’টি মিনিস্কাস থাকে, যা একে স্থিতিশীল করে রাখে। একজন খেলোয়াড় খেলতে গেলে বাইরে থেকে ভেতরের লিগামেন্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাইরের লিগামেন্ট অল্প, মধ্যম এবং তীব্র পর্যায়ের আঘাত পেতে পারে। বাইরে যদি তীব্র আঘাত পায়, তাহলে সাধারণত ভেতরের লিগামেন্টেও ওই তিন রকমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনেক আশঙ্কা থাকে। এমনকি হাঁটুর ভেতরে লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে যেতে পারে। এ সমস্যায় প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসায় অবশ্যই বরফ দিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। এরপর এক্স-রে ও এমআরআইয়ের মাধ্যমে আঘাতের পরিমাণ বের করতে হয়। বাইরের লিগামেন্টের আঘাত কম হলে কয়েক দিন বিশ্রাম এবং কিছু ব্যায়াম করলেই হয়। ভেতরের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে একজন খেলোয়াড়ের খেলায় ফিরতে সময় লাগবে। এগুলো একেবারে ছিঁড়ে গেলে জোড়া লাগার কোনো সম্ভাবনা নেই। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন লিগামেন্ট লাগাতে হবে। আর্থোস্কপি সার্জারির মাধ্যমে হাঁটু বা গোড়ালির পাশ থেকে লিগামেন্ট নিয়ে লাগিয়ে দেয়া যায়। লিগামেন্ট লাগানোর পর নির্দিষ্ট একটা সময় রিহ্যাবিটিলেশনের দরকার হয়। আপনি যদি একজন খেলোয়াড় হন তাহলে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফিটনেস। আর ফিটনেস ধরে রাখার জন্য শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। ব্যায়াম, খাওয়া ও বিশ্রামের রুটিন যদি ঠিক থাকে, তাহলে খেলোয়াড় ইনজুরিতেও কম পড়েন। ডায়েটের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কিছু উপসর্গ আছে। যেমন, হাঁটতে গেলে হাঁটু বেঁকে যাওয়া, হাঁটুতে শক্তি না পাওয়া, পায়ের মাংস শুকিয়ে যাওয়া। এসব দেখার পর ভালোভাবে ডায়াগনোসিস করে নিশ্চিত করা হয় কোন লিগামেন্ট কী পরিমাণে ছিঁড়েছে। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ইনজুরি শনাক্ত করা হয় উপসর্গ দেখে। বাকি ১০ থেকে ১৫ ভাগ এমআরআই করে। এরপর দেখা হয় কোন রোগীর সার্জারির প্রয়োজন।
আর্থোস্কপি সার্জারির একটি সুবিধা হচ্ছে, সকালে রোগী ভর্তি হয়ে দুপুরে অপারেশন হলে রাতেই তিনি বাড়ি চলে যেতে পারবেন। এতে খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় না। মাত্র দুু’তিনটি ছোট ছিদ্র করে আর্থোস্কপি যন্ত্র ঢুকিয়ে লিগামেন্ট ঠিক করা হয়। একজন সাধারণ মানুষের এমন ইনজুরি হলে অপারেশনের সাতদিনের ভেতর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হবে কিছুদিন। খেলোয়াড়দের শুধু ব্যায়াম আর সঠিক রিহ্যাবিলিটেশনের দরকার হয়। রিহ্যাবিলিটেশন ঠিকভাবে না হলে হাঁটু জমে যেতে পারে। আর শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ ভাগ সম্ভাবনা আছে ইনফেকশন হওয়ার।
অপারেশনের তিন মাসের মধ্যে খেলোয়াড়েরা স্বাভাবিক চলাফেরা, ওয়ার্মআপ করতে পারবে। আমরা বলে দিই কী কী ব্যায়াম করতে হবে। ফিজিওথেরাপিস্টদের সাহায্যে সেটা করতে হবে। আর একটা লিগামেন্ট হাড়ের সঙ্গে মিশতে ছয় থেকে নয় মাস লাগবে। এরপর স্বাভাবিক খেলাধুলা করতে পারবে। যেকোনো ইনজুরি এড়ানোর জন্য শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি মানসিক ফিটনেসের দরকার আছে। আর যাদের লিগামেন্ট খুব লুজ, তারা খুব সহজে ইনজুরিতে পড়েন। কারণ, তাদের জয়েন্টের ব্যালান্স থাকে না, তাদের পেশির কো-অর্ডিনেশন কম। এজন্য অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। খেলা অনুযায়ী ওয়ার্মআপ করতে হবে। আর একজন খেলোয়াড়কে খেলার সময় অবশ্যই নিজের হাত-পা রক্ষার কৌশল জানতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা
চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., শ্যামলী মিরপুর রোড, ঢাকা-১২০৭, হটলাইন-১০৬৩৩, ০১৭৪৬৬০০৫৮২