খেলা
হতশ্রী পারফরম্যান্স নিয়ে নান্নুর ‘ময়নাতদন্ত’
ইশতিয়াক পারভেজ
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার
একের পর এক উইকেট নিচ্ছেন আল্লাহ্ মোহাম্মাদ গাজানফার। শুরুতেই তানজিদ হাসানকে আউট করে লাফিয়ে উঠলেন আকাশপানে। এরপর মুশফিকুর রহীমকে ঘোল খাইয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো উদযাপন করলেন। তাসকিন আহমেদকে বোল্ড করে দৌড়ে ছুটলেন দিগবিদিক। একেকটি উইকেট নিচ্ছেন আর একেক ভাবে উদযাপন করছেন। হয়তো তার ভাবানাতেই ছিল না টাইগার ক্রিকেটাররা তার কাছে এভাবে আত্মসমর্পণ করবেন। তাই উদযাপনের স্টাইলটাও যেন ঠিক করতে পারছিলেন না কিভাবে কী করবেন। চোটের কারণে মুজিব উর রহমান না থাকলেও ‘নতুন মুজিব’ পেয়ে গেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬.৩ ওভারে ২৬ রান খরচ করে ৬ উইকেট নেন ১৮ বছর বয়সী স্পিনার। আফগান তরুণ স্পিনার যখন বিশ্বকে তার আগুনঝরা আগমন বার্তা দিয়েছেন তখন টাইগারদের অভিজ্ঞ আর তরুণদের করুণ ব্যাটিং দিচ্ছে হতাশার বার্তা। টাইগারদের এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ের কারণ কী! সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ময়নাতদন্ত বলছে- ‘অপ্রত্যাশিত’। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করাই যায় না। এটি ভয়ঙ্কর রকম হতাশার। এমন ব্যাটিং করবে তা চিন্তা করা যায় না। ব্যাটিং কৌশল, মানসিকতা, মনোযোগ সবকিছুতেই ঘাটতি মনে হচ্ছে। সবেচেয়ে বড় সমস্যা যেটা চোখে পড়ছে বাংলাদেশ দল যেন স্পিন খেলতে ভুলে গেছে!’ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এর পর দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও একই ফল। দুটি সিরিজেই হারের অন্যতম কারণ নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। ওপেনার, টপ অর্ডার যেন ব্যাট চালাতেই ভুলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজাতে নিজেদের সবচেয়ে সফল ফরম্যাট ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াবে দল। কিন্তু তা আর হলো কই, উল্টো সিরিজের প্রথম ম্যাচেই লজ্জার হার। দলীয় সংগ্রহ ১২০ রানে ২ উইকেট থেকে ১৪৩-এ গুটিয়ে যায় টাইগাররা। হারে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে। ২৩ রানে শেষ ৮ উইকটের পতন। এমন ব্যাটিং নিয়ে মিনহাজুল আবেদিন বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বেশির ভাগ ক্রিকেটার ফর্মে নেই। এটা সহজ কথা, কতদিন দেখা গেলো টপ অর্ডার ব্যর্থ এবার দেখলাম মিডল অর্ডারেও বাজে অবস্থা। ধারাবাহিকতা নেই বললেই চলে। দায়িত্ব নিয়ে কেউ ব্যাট করছে না, বল সিলেকশন যা করছে তা বেশ বাজে। কোন বলে কিভাবে খেলতে হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। উপরের বল কিভাবে মারতে হবে পিছনের বল কিভাবে খেলা উচিত, বা সামনের বল কিভাবে খেলবে কোনটাই ঠিক নেই। ফুটওয়ার্ক টলমলে। তার মানে টেকনিকে সমস্যা। আরেকটা বিষয় চোখে পড়ার মতো- মানসিকভাবেও তারা স্থির নয়। আগের ম্যাচের ভুলগুলো পরের ম্যাচে শুধরাচ্ছে না। তার মানে মনোযোগের অভাব। এর মানে মানসিকভাবেও তারা স্ট্যাবল নেই। আরেকটা বিষয় বেশ ভয়ঙ্কর আমরা মনে হয় স্পিন খেলা ভুলে গেছি। এটাতে মনোযোগ দিতে হবে যতদ্রুত সম্ভব।’ বলাবলি হচ্ছে, প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের চলে যাওয়া, নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস, ক্রিকেটারদের মধ্যে নানা রমকম অভ্যন্তরীণ সমস্যা দলের ওপর প্রভাব ফেলছে, দল হিসেবে গ্যাপ তৈরি করছে। তবে সাবেক প্রধান নির্বাচক নান্নু বলেন, ‘মনে হয় না দলের অভ্যন্তরে গ্যাপ আছে। ক্রিকেটীয় সমস্যাটাই বেশি। বোলিংটা ভালো হচ্ছে। কিন্তু দেখেন ব্যাটিংয়েই ধারাবাহিকতা নেই। হারের কারণটা ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতা।’ তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এত টাকা খরচ করে ব্যাটিং কোচ আনছে তারা কি কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না। নাকি ক্রিকেটাররাই তাদের কাছ থেকে নিতে পারছেন না? নান্নু বলেন, ‘এটা আমরা ভুলে যাই কোনো কোচই ক্রিকেটারকে পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারবে না। এখানে ক্রিকেটারকে শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগী হতে হবে। নিজের আগ্রহ না থাকলে কেউ গুলিয়ে খাইয়ে দিতে পারবে না। কারণ, শেখার পর সেটি প্রয়োগ করার দায়িত্ব ক্রিকেটারের। আমার কাছে মনে হচ্ছে ক্রিকেটাররা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করছে না।’
তাহলে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব? দীর্ঘদিন প্রধান নির্বাচক ছিলেন, সাবেক অধিনায়ক ও দেশের ব্যাটারদের মধ্যে সফল একজন। তাহলে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কী পরামর্শ থাকবে দলের জন্য? নান্নু বলেন, ‘ব্যাটারদের মনোযোগী হতে হবে, দায়িত্ব নিয়ে খেলার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। সবচয়ে বড় কথা শুধু ব্যাটার নয়, তিন বিভাগে (ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং) সব কিছু নিয়ে কাজ করতে হবে। যেন দল হিসেবে মাঠে পাফরম্যান্স করতে পারে। এর কোন বিকল্প নেই।’
পাঠকের মতামত
খুব বড় বড় কথা। বাংলাদেশের বারোটা বাজিয়েছেই তো এই নান্নুরা।
ক্রিকেট টিম বাতিল চাই। অযথা কোটি কোটি টাকা নষ্ট করছে সরকার। দেশের যে দুরাবস্থা তাতে এই বিশ্রি ক্রিকেটে টাকা ঢালা এক প্রকার বিলাসিতা।
আসলে আমাদের ক্রিকেটে নতুন সেট দরকার। পুরোনোরা এখনো 'বড় দলের' বিপক্ষে ভয়ের জুজু দূর করতে পারেনা। তাদের দায়িত্বশীলতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়।