অর্থ-বাণিজ্য
ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি না হওয়া কারণ জানালেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৩ সপ্তাহ আগে) ৮ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৭:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২২ পূর্বাহ্ন
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সার্টিফিকেশন না পাওয়ার কারণে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানি করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।
বুধবার রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত। আগামী ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)।
অনুষ্ঠানে ব্রুনাই রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওসমান, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. বশির আহমেদ, ঢাকাস্থ ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন লিওনার্দো ডি অলিভেইরা জানুজ্জি, কৃষি অ্যাটাশে সিলভিও লুইজ রদ্রিগেজ টেস্টাসেক্কা, ডাচ বাংলা চেম্বারঅব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জি এম চৌধুরী, ও ইমপালস ফ্যাশনের সিইও হাসান আরিফ সাকিল ও রুবেল গুডস লিমিটেডের সিইও আনিস উল ইকরাম উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল আলম। আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. জয়নাল আবদিন।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জানান, অনেক দিন যাবত ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানি করার কথা থাকলেও পূর্বের সরকারের সময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সার্টিফিকেশন না পাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি হয়নি। বিগত সরকারের সময় বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে অনুমতি নেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাই। বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে আসা কর্মকর্তারা বাংলায় নানান নীতিমালা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত গরুর মাংস আমদানির অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে এখন অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাম যদি ৫ ডলার হয়, ব্রাজিলে তা ৫ সেন্ট। এই এক্সপোর মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশি পণ্যই ব্রাজিলে প্রদর্শিত হবে না বরং টেকনোলজি ট্রান্সফারের সুযোগও সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি গরু দিনে ৫ কেজি দুধ দেয় কিন্তু ব্রাজিলের একটি গরু দিনে ৪৫ কেজি দুধ দেয়। আমরা বাংলাদেশে প্রযুক্তি সহায়তা করতে পারি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। আর এরজন্য ব্যক্তিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জানান, বিশ্বের অনেক মুসলিমপ্রধান দেশেই ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুমতি নেই। ওই অনুমতি পাওয়ার জন্যই ব্রাজিল চেষ্টা করছিল বলে রাষ্ট্রদূত জানান। তিনি বলেন, ব্রাজিলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কর্মসূচি রয়েছে। এ জন্য ব্রাজিল সরকার প্রচুর পরিমাণে ওষুধ কিনে থাকে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সনদ বা সার্টিফিকেশনের জটিলতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক নয়, বরং সহায়তামূলক। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন-২০২৫’ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী উন্নিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রদর্শনীতে প্রায় ১০০-১৫০ জন বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য ব্রাজিলে ব্যবসায়িক জোট গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন চিনি এবং শিল্প যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য অন্বেষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথমবারের মত চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৮ই জুন ব্রাজিলে বাংলাদেশি পণের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ, চামড়া, টেক্সটাইলসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে আশা করছে আয়োজক সংগঠন।
প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরে বিবিসিসিআই মহাসচিব মো. জয়নাল আবদীন জানান, ব্রাজিলে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ফার্মাসিটিক্যালস, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি ব্রাজিল থেকে মিনারেল, ফুয়েল, অয়েল, বিফ, পোল্ট্রি, আমদানি করা যেতে পারে। বাণিজ্যের পাশাপাশি ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন এই এক্সপোর মাধ্যমে।
আমিষের চাহিদা মেটাতে গরুর মাংসের বিকল্প নেই,দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা মাংসের চাহিদা পুরন করতে অবিলম্বে মাংস আমদানির সকল প্রতিবন্ধক দূর করতে হবে।
ব্রাজিল থেকে 'হালাল' জবাই নিশ্চিত করে সরকারের উচিত গরুর মাংস আমদানিতে উদ্যোগ নেওয়া। ৫ সেন্টের মাংস দুই ডলার দাম পড়লেও গরীব মানুষের প্রোটিনের সংস্থান হবে।