খেলা
রোজায় ঢাকা লীগ নিয়ে অস্বস্তি
ইশতিয়াক পারভেজ
২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার
ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ দেশের ক্রিকেটার তৈরির কারখানা। এখান থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পান বেশির ভাগ ক্রিকেটার। তবে এই আসর নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ব্যবস্থাপনা থেকে আম্পায়ারিং, বড় আর শক্তিশালী ক্লাবগুলোর প্রভাব, কী নেই অভিযোগে। ম্যাচ গড়াপেটা, আম্পায়ার ও কর্মকর্তাদের পক্ষপাত, অনিয়ম সব আছে। তবুও এই লীগের ওপর নির্ভর করে ক্রিকেটের বড় একটি পাইপ লাইন। ৫ই আগস্ট দেশের সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) এসেছে বড় পরিবর্তন। নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা লীগে থাকবে না আর কোনো অনিয়ম। সেই হিসেবে এবারের আসর কি সত্যি বিতর্ক মুক্ত হয়েছে? নাকি আগের মতোই চলছে! মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরামর্শক ও বিসিবি’র কোচ মিজানুর রহমান বাবুল দৈনিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন অনেক পরিবর্তন এসেছে লীগে। আগের মতো বড় ক্লাবের প্রভাব নেই। এমনকি আম্পায়ারদের ভুলভ্রান্তি হলেও সেটি পক্ষপাতমূলক বা ইচ্ছাকৃত হচ্ছে না আগের মতো। তবে তার দাবি- ঢাকা লীগ এখনো মুক্ত হয়নি সবচেয়ে বড় অস্বস্তি থেকে । তিনি জানান, রোজার মাসে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আসর আয়োজনটাই ভুল। এতে ভালোর চেয়ে ক্ষতির দিকটাই বেশি। তিনি বলেন, ‘দেখেন অনেক কিছুতেই স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু একটা বড় অস্বস্তির কথা বলতেই হয়। সেটি হলো রোজার মধ্যে লীগ আয়োজন। এতে করে ভালো কিছু হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের। যেমন চাইলেই একজন ক্রিকেটার রোজা রেখে সেরা পারফরম্যান্স করতে পারছে না। আবার ইনজুরির শঙ্কা থাকে। ম্যাচে ভীষণ প্রভাব ফেলে বিষয়টি। বিসিবি’র কাছে আমার অনুরোধ যেন তারা ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন আনে।’ মিজানুর রহমান বাবুল ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিক্ষীত ও অভিজ্ঞ একজন কোচ। তার অধীনে এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ফরচুন বরিশাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঢাকা লীগে দীর্ঘদিন কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানিয়েছেন কেন রোজাতে ঢাকা লীগ আয়োজনে ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেখেন প্রথম কারণটা হলো দুটি দলের কিছু ক্রিকেটার রোজা রেখে খেলছে আবার অনেকেই রাখছে না। এতে করে যারা রোজা রাখছে তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ছে। তাদের শরীর ডিহাইড্রেড থাকায় নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে পারছে না। আবার যে রোজা রাখছে না তার কিন্তু এমন সমস্যা হচ্ছে না। বিশেষ করে অনেক তরুণ ক্রিকেটারই রোজা না রেখে খেলছে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। এতে করে দুটি দলের পারফরম্যান্সে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবার শরীর ডিহাইড্রেড থাকাতে বাড়ছে ইনজুরির সমস্যা। আমার দলের মুশফিকও ইনজুরিতে পড়েছে এই কারণেই। আবার কেউ অনুশীলনও করছে রোজা রেখে এতে শরীরে প্রভাব পড়ছে। যা ম্যাচকেও প্রভাবিত করে। এমনকি কারো পারফরম্যান্স খারাপ হলে রোজার কারণে তাকে কোন কিছু বলাও যাবে না। আমরা তো কাউকে রোজা রাখতে বারণ করতে পারবো না।’ তবে প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তানে অনেক ক্রিকেটারই রোজার মাসে খেলছে। এমনকি বিশ্বে নজির আছে রোজার মাসে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। তাহলে বাংলাদেশে কী সমস্যা! এ নিয়ে মিজানুর রহমান বাবুল বলেন, ‘দেখেন দ্বি-পাক্ষিক সিরিজগুলোতে খেলে দু’টা দল। এখানে ১২টা দল, ৯৫ ভাগ ক্রিকেটার মুসলিম। আমরা তো কোনোভাবেই তাদের রোজা রাখতে বারণ করতে পারবো না। তাই তারা খেলে যাচ্ছে, এরই মধ্যে নামাজও পড়ছে। কেউ কিন্তু পুরো মনটা খেলায় দিতে পারে না। আমি সেই দিক থেকে বলছি যে রোজার মধ্যে দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ আসর আয়োজন না করে অন্য কোনো সময়ে করার। হ্যাঁ,বলতে পারেন ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডার পরিবর্তন খুব কঠিন। কিন্তু করা উচিত কারণ এটা আমাদের দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় পাইপ লাইন তৈরির জায়গা।’
সরকার ও বিসিবিতে পরিবর্তনের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে শক্তির মহড়া অনেকটাই কমেছে বলে মনে করেন মিজানুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এখন ছোট বড় ক্লাবগুলোতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। বড় ক্লাবগুলো ক্ষমতার জোর দেখাচ্ছে না। আর বিশেষ করে আম্পায়ারিংয়ে যে প্রভাব ফেলতো এবার সেটি চোখে পড়েনি। হ্যাঁ, আম্পায়াররা ভুল করছে, মানুষ যেহেতু সেটি হবেই। কিন্তু আগের মতো ইচ্ছা করে বা পক্ষপাত হচ্ছে এমন না। এখন পর্যন্ত বলবো প্রভাব মুক্ত ঢাকা লীগ হচ্ছে আমার মনে হয়।’
পাঠকের মতামত
আশ্চর্য্য তো - মুসলামান খেলোয়াড়দের জন্য দুই-চার সপ্তাহ এদিক ওদিক করা যাবে না - কী এমন বারে খাঁ হয়েছো হে তোমরা?