অনলাইন
'ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে'
মানবজমিন ডিজিটাল
(৪ সপ্তাহ আগে) ২৪ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ২:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১১ পূর্বাহ্ন

ওয়াশিংটন তার নীতি পরিবর্তন না করলে আলোচনা চালানো অসম্ভব। একথা সাফ জানিয়ে দিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইরানকে দু’মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউস থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার পরেই আমেরিকাকে পাল্টা বার্তা দিল ইরান। ট্রাম্প এই মাসের শুরুতে খামেনিকে লেখা চিঠিতে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ইরানকে দুটি উপায়ে মোকাবিলা করা যেতে পারে: সামরিকভাবে অথবা চুক্তির মাধ্যমে'। খামেনি আলোচনার জন্য মার্কিন প্রস্তাবকে ‘প্রতারণা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে আলোচনা করা ‘নিষেধাজ্ঞার গিঁট শক্ত করবে এবং ইরানের উপর চাপ বাড়াবে’। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়ে দিয়েছেন, তেহরান শীঘ্রই চিঠির ‘হুমকি ও সুযোগ উভয়েরই জবাব দেবে।’ তেহরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির দরজা খোলা রেখেও, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার প্রথম মেয়াদে প্রয়োগ করা ‘সর্বোচ্চ চাপ’ পুনঃস্থাপনের কৌশল নিয়েছেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনা।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ইরানের তেল বিক্রির ওপর চার দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরাকচিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘নির্দিষ্ট নীতির পরিবর্তন না হলে, এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার সাথে আর আলোচনা করা সম্ভব নয়।'
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল আমেরিকা-সহ ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চীন। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে জাতিসংঘ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানান, এই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টা লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তার নির্দেশে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। ২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করার পরে ট্রাম্প মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করেছিলেন যা ইরানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তেহরান এবং ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।
আরাকচি বলছেন, ‘আমার মতে, ২০১৫ সালের চুক্তিটি বর্তমানে একইভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। এটি আমাদের স্বার্থে হবে না কারণ আমাদের পারমাণবিক পরিস্থিতি বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়েছে এবং আমরা আর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘২০১৫ এর চুক্তি এখনও আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি এবং মডেল হতে পারে।'
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর লাগাম টেনে ধরার জন্য চুক্তির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে ত্বরান্বিত করছে। যদিও তেহরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে এই কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
সূত্র : রয়টার্স