খেলা
‘বাবা-মায়ের জন্য এতদূর আসতে পেরেছি’
স্পোর্টস ডেস্ক
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
প্রথম ম্যাচে হাত খুললেও ইনিংসটা বড় হয়নি বৈভব সূর্যবংশীর। কাঁদতে কাঁদতে ছেড়েছেন মাঠ। পরের ম্যাচেও জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) তৃতীয় ম্যাচে রেকর্ড বুক তোলপাড় করে ফিরলেন এই ১৪ বছর বয়সী বিস্ময়বালক। সোমবার গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে ৩৮ বলে ১১ ছক্কায় খেলেছেন ১০১ রানের ইনিংস। ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চোখ কপালে তুলেছেন গোটা ক্রিকেট বিশ্বের। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে যেসব ত্যাগ করেছেন তার বাবা-মা, রেকর্ড গড়া ম্যাচের পর সেই গল্পই শোনালেন বৈভব।
লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান বৈভব, খেলেন ২০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। সেদিন আউট হয়ে যাওয়ায় পর চোখে পানি নিয়ে ছাড়েন মাঠ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুটা আলোচনাও হয়। গুজরাটের বিপক্ষে বৈভব দেখালেন কেনো সেদিন তার চোখে পানি ছিল। যোগ্যতা যখন আকাঙ্ক্ষা পর্যন্ত ডানা না মেলতে পারে, তবে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়াটা স্বাভাবিক। বৈভব হয়তো জানতেন তিনি কী করতে পারেন। এবার তো করেই দেখালেন। ৩৫ বলে বৈভবের হাঁকানো সেঞ্চুরিটি আইপিএলে দ্বিতীয় ও ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম। ইন্ডিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেই সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরির মালিক এখন এই বাঁহাতি ব্যাটার। সোমবার আইপিএলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করার দিন তার বয়স ছিল ১৪ বছর ৩২ দিন। ধারাভাষ্যকাররা তো তার নামই রেখে দিয়েছেন ‘বস বেবি’। স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনেও ভেসে ওঠে সে নাম। সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকার তিনে আছে বাংলাদেশের পারভেজ হোসেন ইমন (১৮ বছর ১৭৯ দিন)। আইপিএলে সবচেয়ে কম বয়সে এবং সবচেয়ে কম ১৭ বলে ফিফটির রেকর্ডও এখন বৈভবের খাতায়। দু’টি রেকর্ডের আগের মালিক ছিলেন যথাক্রমে রিয়ান পরাগ (১৭ বছর ১৭৫ দিন) ও যশস্বী জয়সওয়াল (১৯ বল)। এক ইনিংসে ১১টি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি মুরালি বিজয় ছাড়া নেই আর কোনো ভারতীয়র। এদিন আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে নির্ধারিত ওভারে গুজরাট পুঁজি গড়ে ২০৯ রানের। জবাবে ২ উইকেটে ২৬ বল হাতে রেখে জিতে যায় রাজস্থান রয়্যালস। ব্যাট হাতে বৈভব যতটা না বিধ্বংসী, মাইক্রোফোনের সামনে ততটাই নম্র। ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতেও গিয়েও খুব একটা উচ্ছ্বাস নেই। বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে, আইপিএলে তৃতীয় ইনিংসেই আমার প্রথম সেঞ্চুরি। খুব ভালো লাগছে। এতদিন ধরে, গত তিন-চার মাস ধরে আইপিএলের জন্য যে অনুশীলন করে আসছি, সেটিরই ফল মাঠে দেখা যাচ্ছে। আইপিএলে সেঞ্চুরি করা স্বপ্নের মতোই।’ বৈভবকে নিয়ে আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে তার বাবার নাম। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন বাবা সঞ্জীব। সে প্রসঙ্গে ছেলে বৈভব বললেন, ‘আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি বাবা-মায়ের জন্য। ভোরে আমার অনুশীলন করতে হবে, সে জন্য মা রাত দুটোয় ঘুম থেকে উঠে যেতেন। ঘুমাতেন স্রেফ ঘণ্টা তিনেক। উঠে আমাদের জন্য খাবার বানাতেন। বাবা আমার জন্য কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেটা বড় ভাই সামলাতেন। সংসার অনেক কষ্টে চলছিল। তবে বাবা আমার পেছনে লেগেই ছিল।’