শেষের পাতা
৭৮ জনকে চোখ বেঁধে সুন্দরবনে পুশইন বিএসএফের
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৭৮ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে তাদের কোস্ট গার্ড উদ্ধার করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে। তাঁদের অনেকে অসুস্থ, কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। একজনের হাত ভাঙা। বেশির ভাগই কয়েক দিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৫ দিন পর এই প্রথম থানায় এসে ভাত খেতে পেরেছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, বিএসএফ যে ৭৮ জনকে পুশইন করেছে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাটে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার তাঁদের শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। এরপর বন বিভাগ তাঁদের উদ্ধারের পর শনিবার রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে, আরও কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।
হারুন শেখ (৬০) নামের একজন বলেন, ৩৭ বছর ধরে ভারতে ভাঙারির ব্যবসা করতেন তিনি। থাকতেন আহমেদাবাদের সুরাট বস্তিতে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতেন। ২৬ এপ্রিল দেশটির ক্রাইম পুলিশ বস্তিতে বসবাসকারী ৫০০-৬০০ জনকে আটক করে। এ সময় তাঁদের সামনে বছরের পর বছর ধরে থেকে আসা বস্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর নারী, পুরুষ ও শিশুদের আলাদাভাবে করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে। তাঁদের ৭৮ জনকে একটি দলে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়। এ সময় তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হতো একটি রুটি ও পানি। অন্য সময় দুটি করে বিস্কুট। ৬ মে তাঁদের চোখ বেঁধে আহমেদাবাদ থেকে উড়োজাহাজে করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার ভারতের সন্দেহখালীতে। সেখানে দিনে রাখার পর আবার চোখ বেঁধে একটি বড় লঞ্চ তুলে ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিনে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা স্টেশনের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তাঁরা।