অনলাইন
নিশ্চয় তখন মুখ টিপে হাসতেন
শামীমুল হক
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
প্রিয় হাসু আপা, আপনাকে হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা। অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা। আজ আপনার মন কেমন জানি না। তবে, ভালো থাকার কথা নয়-এটা হলফ করে বলা যায়। কারণ আপনি যাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে মনের আক্রোশ মিটিয়েছেন। যাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আবার লোক দেখানো শর্তের বিনিময়ে বাসায় থাকতে দিয়েছেন। তার ছেলের ওপর রাগ করে মিটিংয়ে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবো। সেই খালেদা জিয়ার এমন বিরল সম্মান আর দেশবাসীর ভালোবাসা দেখে নিশ্চয় নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে চাইছেন। কারণ বিগত ষোল বছর আপনার কথাবার্তা শুনে এ ধারণাই পোষণ করছে দেশের মানুষ।
আপাগো, এসব কথা আসতো না, যদি না আপনি আপনার আক্রোশের কথা সবার সামনে ফলাও করে বলতেন। আর এটা বলতে পেরে গর্ববোধ করতেন। এক আলোচনা সভায় বলে বসলেন, যেদিন আমাকে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। মামলা দেয়। তখন আমি বিরোধীদলীয় নেতা। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনোদিন সুযোগ পেলে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া করবো। আরও বলেছেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল। আর স্বাধীন করেছিল বলেই তো ক্যান্টনমেন্ট হয়েছে। জিয়াকে মেজর জেনারেল পদবি তো আমার বাবাই দিয়েছে। ঠিক বলেছেন আপা। আপনার বাবা এই পদবি না দিলে তো জিয়া মেজরই থেকে যেতো। তাই না? আপা একবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার কথা মনে আসলো না? যেখানে শপথ নিয়েছেন, রাগ- অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবো না। অথচ ষোলটি বছর রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়েই একের পর এক কাজ করে গেছেন। আপনার এসব কর্মে মানুষ খালেদা জিয়াকে আরও বেশি করে হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। আপনি যত অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছেন তার দ্বিগুণ মানুষ খালেদা জিয়াকে আপন করে নিয়েছে। আচ্ছা আপা, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করবেন ভালো কথা। কিন্তু যে পন্থায় বের করেছেন তা ছিল এক পৈশাচিক কাহিনীর মতো। আর খালেদা জিয়া যখন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার কাহিনী বলছিলেন সাংবাদিকদের কাছে তখন নিশ্চয় আপনি গণভবনে বসে মুখ টিপে হাসছিলেন। আরে না! মুখ টিপে কেন বলছি? নিশ্চয় অট্টহাসি হেসেছিলেন। আর আপনার এ হাসিতে সঙ্গ দিয়েছে আপনার চ্যালা চামুণ্ডারা। যেমন করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে গণভবন থেকে খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। আশেপাশে আপনার সাঙ্গপাঙ্গরা ছিল। সেই কথোপকথনের রেকর্ড আবার ফাঁস করে দিয়েছিলেন। মানুষকে বুঝাতে চেয়েছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন করেছি আলোচনায় বসার জন্য। আচ্ছা আপা, আপনার কাছে কি মনে হয় দেশের সব মানুষ বোকা। কেউ কিছু বুঝে না? যদি সেটাই মনে করেন তাহলে তো আপনি বোকা রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। এটা শুনতে কেমন শোনায় না?
হাসু আপা, নিশ্চয় মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার বীরের বেশে দেশে প্রত্যাবর্তনের খবর শুনেছেন। কী মনে হয়েছে আপনার? এটা কী শুধু লোক দেখানো? না, আপা না। এটা দেশের মানুষের মন উজাড় করা ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন খালেদা জিয়া- সেই ভালোবাসা আপনি কখনো অর্জন করতে পারবেন কী? আমার তা মনে হয় না। কেন হয় না জানেন? আপনার চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার আচরণ সবকিছুতেই কৃত্রিমতার ছাপ পাওয়া যায়। যা কেবল লোক দেখানো। আর খালেদা জিয়া যা করেন দেশের জন্য মন থেকে করেন। আপনি আপনার আমলের শেষদিকে এসে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে গেছেন। দেশের মানুষ আপনার কাছে ছিল তুচ্ছ। আপনি যা মনে করেছেন তাই করেছেন। আপনার অভিনয় দেখতে দেখতে মানুষ হয়ে পড়ে ত্যক্ত- বিরক্ত। এখন আপনার কথা কেউ মনে করে না। আপনার দুই/চারজন চামুণ্ডা ছাড়া। আপনাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে ভোট দিয়েছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনে। আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেন। একে একে আপনার অপকর্ম যখন দেখতে থাকলাম তখন মন আপনার দিকে টানে না। এরপর তিনটি নির্বাচনে তো কাউকে ভোটই দিতে দিলেন না। অথচ ভোটের পরের দিন হাসিমুখে জাতির সামনে বলতেন জনগণ আমাকে ভালোবাসে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দেখে জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। আর বলতেন, এদেশে যেন বিএনপি-জামায়াত আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। আপাগো সেই ব্যবস্থা তো আপনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে মুছে দিয়ে করে ফেলেছেন। বিএনপি-জামায়াত তো জীবনেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। আবার প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা তো রয়েছেই। আপনার ক্ষেত্রে সম্ভবত তা হয়েছে। তা না হলে, সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে আপনার একটি ভুলে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে হলো আপনাকে! আশ্চর্যই বটে। ওদিকে মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার রাজসিক ফেরায় সারা দেশ যেন জেগে উঠেছে। লাখো জনতা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন। এ এক এলাহি কাণ্ড। ওইদিন সারা দেশের চোখ ছিল বিমানবন্দরের দিকে। অন্যদিকে পালিয়ে গিয়ে দূর দেশ থেকে এসব দৃশ্য দেখে নিশ্চয় আপনার কলিজা ছারখার হয়ে যাচ্ছে। যাকে ধ্বংস করতে ষোল বছরের শাসনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে নানা কূটকৌশলে- সেই কিনা আজ আপনার চোখের সামনে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান নেত্রী হয়ে উঠেছেন। এর জন্য আপনার অবদান সবচেয়ে বেশি- এটা বলতেই হয়। আপনি কারাগারেই শুধু পাঠাননি। আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত অনুমতি দেননি।
আপা, আপনার ষোল বছরের সকল অপকৌশল একদিনেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। আপনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া মুক্ত আকাশ দেখছেন। আপনি যে এত আইন আইন বলতেন সেসব গেল কই? এখানেও মানুষ আপনার ছলাকলা বুঝে গেছে। আপনি ইচ্ছা করে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়েছেন-মানুষ এমনটাই বলাবলি করছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর আপনার আমলের পুরোটা সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। তার মুক্তিতে প্রমাণিত হয়েছে এখানেও আপনার কারসাজি ছিল।
আচ্ছা হাসু আপা, আপনি কেন নিজেকে স্বৈরাচারী বানাতে গেলেন? ক্ষমতার এত লোভ কেন আপনার? ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনো জোরালো বক্তব্যও দিতে শুনিনি। একবার খালেদা জিয়া পরের বার আপনি এভাবেই তো ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছিল। তাহলে কেন এতসব অপকর্ম করতে গেলেন। আপা, জানতে ইচ্ছা করে আপনার এতসব অপকর্মের জন্য আপনি কি নিজে নিজে ভাবেন? দেখুন আপা আমি কতো বোকা। আপনি ভাবতে যাবেন কেন? আপনি তো এ জাতির পিতার কন্যা। আপনার কি কাউকে গোনার সময় আছে? নাই বলেই তো এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। আপনার লোকজন অঘটন ঘটিয়ে এলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে বলতেন এসব বিএনপি-জামায়াতের কাজ। আপনার শিবির নিধন কর্মসূচিতে কতো মায়ের বুক যে খালি হয়েছে তাকি জানেন? কতো মায়ের সন্তানকে জামায়াত ট্যাগ লাগিয়ে আপনার পুলিশ লীগ জেলে পাঠিয়েছে তা জেনেও আপনি চুপ ছিলেন। প্রকাশ্যে আপনার ছাত্রলীগ খুন করে এলেও বলতেন এসব ছাত্রদল আর শিবিরের কাজ। এমন কথা বলে ছাত্রলীগকে আরও উস্কে দিতেন। আসলে আপা, আপনি কি করে গেছেন বাংলাদেশটাকে চোখ বুজে চিন্তা করে দেখুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। অর্থনীতিতে যেভাবে ধস নামিয়েছিলেন তা কল্পনা করলেও শিউরে উঠতে হয়। এমন অনেক শিউরে ওঠার কাহিনী বলবো সামনের দিনগুলোতে। আজ এ পর্যন্তই থাক। আপনার ভবিষ্যৎ মঙ্গলময় হয়ে উঠুক।
সূত্র- জনতার চোখ
পাঠকের মতামত
একবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার কথা মনে আসলো না? যেখানে শপথ নিয়েছেন, রাগ- অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবো না। অথচ ষোলটি বছর রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়েই একের পর এক কাজ করে গেছেন।