ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

মলদ্বারে ফিসার

ডা. মো. তানভীর জালাল
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার

মলদ্বার ফিসার
নিম্ন মলদ্বার রাস্তার ভেতরের মিউকোসাল প্রাচীরের একটি ছোট জটিলতাই হলো অ্যানাল ফিসার বা ফিসার-ইন-অ্যানো। এটি ডিম্বাকৃতির আকৃতির যা সাধারণত পায়ুপথে উপস্থিত থাকে। পায়ুপথে ফিসারে ব্যথার পাশাপাশি মলত্যাগের সঙ্গে রক্তপাত হয়। কখনো কখনো যথেষ্ট বড় হতে পারে।
মলদ্বার ফিসারের কারণ
বেশ কয়েকটি কারণ মলদ্বার ফিসারের বিকাশ ঘটাতে পারে যেমন:
১. মল যাওয়ার সময় অত্যধিক চাপ।
২. দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা বারবার ডায়রিয়া।
৩. কিছু প্রদাহজনক অবস্থার কারণেও ফিসার-ইন-অ্যানো হতে পারে- যেমন ওইউ (ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ), ক্রোনস রোগ ইত্যাদি।
৪. পায়ু অঞ্চলে রক্ত সরবরাহ হ্রাস।
৫. মলদ্বার স্ফিঙ্কটার পেশি সংকুচিত।
৬. পায়ু সঙ্গম।
৭. প্রসবের সময় আঘাত।
৮. পায়ু অঞ্চলের কার্সিনোমা।
৯. যক্ষ্মা।
১০. যৌনবাহিত রোগ যেমন সিফিলিস।
মলদ্বার ফিসারের লক্ষণ 
১. পায়ু অঞ্চলের চারপাশে একটি ছোট টিয়ার বা একটি দৃশ্যমান আলসার।
২. মলদ্বার অঞ্চলের চারপাশে কম্পনকারী ব্যথা যা মলত্যাগের সময় খারাপ হয়।
৩. মল যাওয়ার সময় রক্তের দাগ, যা উজ্জ্বল লাল। হেমোরয়েডসে, রক্তপাতের বৈশিষ্ট্য হলো প্যানে একটি স্প্ল্যাশ।
৪.  আলসার চারপাশে ত্বকের ট্যাগ বা টিস্যুর পিণ্ডের বিকাশ।
৫. পায়ু অঞ্চলের চারপাশে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া।
কখন  ডাক্তারকে দেখাতে হবে ও চিকিৎসা
অনেক সময় বাড়িতে যত্ন নেয়ার পরে বেশির ভাগ ফিসারসমূহ নিজেরাই সেরে যেতে পারে। যাই হোক, যদি একটি ফাটল আট সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী ফিসার হতে পারে। এই ধরনের মলদ্বারের ফিসার শুধুমাত্র সহায়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা যায় না, কারণ ফিসারগুলো সংক্রমিত হতে পারে এবং এর ফলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, খারাপ হয়, মল যেতে অসুবিধা হয়, বারবার রক্তপাত হয়, অত্যধিক অস্বস্তি হয় এবং ঠিকমতো বসতে বা হাঁটতে না পারে তাহলে অবিলম্বে অ্যানাল ফিসারের চিকিৎসার জন্য আপনার ডাক্তারকে দেখানো উচিত। কার্সিনোমা, হেমোরয়েডস ইত্যাদির মতো অন্যান্য অবস্থা থেকে ফিসার বাদ দিতে আপনার ডাক্তার কিছু পরীক্ষা- যেমন অ্যানোস্কোপি, উজও (ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা), কোলনোস্কোপি ইত্যাদি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
ফিসারের ঝুঁকির কারণসমূহ
মলদ্বার ফিসারের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত কিছু ঝুঁকির কারণ হলো:
১. হেমোরয়েডের ইতিহাস।
২. ভারী ওজন উত্তোলন।
৩. দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা বারবার ডায়রিয়া।
৪. আঘাত (প্রসবের সময়)।
চিকিৎসা
বেশির ভাগ পায়ু ফাটলে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ১০টির মধ্যে প্রায় ৯টি ফিসার নিজেরাই সেরে যেতে পারে যদি ফিসারের জন্য যথাযথ সহায়ক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ঘরোয়া চিকিৎসা
বাড়িতে অ্যানাল ফিসারের চিকিৎসার জন্য এখানে কিছু সেরা টিপস রয়েছে- যা আপনার লক্ষণগুলোকে উন্নত করতে এবং রোগের অগ্রগতি বন্ধ করতে নিজের দ্বারা চেষ্টা করা সম্পূর্ণ সহজ:
১. ফিসার সমাধানের সর্বোত্তম উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা যা মলের ধারাবাহিকতাকে নরম করতে সাহায্য করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় এবং মল ত্যাগ করার সময় চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা আলসারের দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।
২. সিটজ বাথ: টবে বা গরম জলে ভরা বড় বালতিতে বসলে শুধুমাত্র ফিসার দ্রুত নিরাময় হয় না বরং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিস্তার বন্ধ করে। আপনি পানিতে ২-৩ ফোঁটা বেটাডাইন দ্রবণও যোগ করতে পারেন যা মলদ্বারের ফাটল দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।
৩. আপনার ডায়েটে প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্যপণ্য বা সম্পূরক যোগ করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো চলে যেতে পারে এবং নরম অন্ত্রের গতিবিধিকে উৎসাহিত করে।
৪. জোলাপ গ্রহণ করা কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে নরম মলত্যাগের সঙ্গে চিকিৎসা করতে সাহায্য করবে যা মল যাওয়ার সময় অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং নিরাময়কে উৎসাহিত করে।
৫. আলসারে দিনে অন্তত ৩-৪ বার লিগনোকেইন বা লিডোকেনের মতো হালকা টপিকাল অ্যানেস্থেটিক এজেন্ট প্রয়োগ করা কার্যকরভাবে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। ব্যথার জন্য মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন; কারণ এটি কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়।
৬. যক্ষ্মা, ঝঞও্থং, ওইউ, ঈৎড়যহ্থং ফরংবধংব-এর মতো ফিসার সৃষ্টির জন্য আপনি যে রোগটিকে দায়ী বলে মনে করতে পারেন তা চিহ্নিত করুন এবং শুধুমাত্র একজন পেশাদার চিকিৎসক/ডাক্তারের নির্দেশনায় অবিলম্বে ওষুধ শুরু করুন।
এই পদ্ধতিগুলো ফিসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো- যেমন ব্যথা, রক্তপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমাধানে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি ভালো নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি এবং একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করেন তবে প্রায় সমস্ত ফিসারগুলো কোনো জটিলতা নিয়ে চিন্তা না করেই বাড়িতে সহজেই নিরাময় করা যেতে পারে।
 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।
যোগাযোগ: ০১৭১২-৯৬৫০০৯।  

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status