ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

চায়ের রাজ্য আর রূপ মাধুর্যের ‘বৃষ্টি বন’

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে

(১ দিন আগে) ৪ জুন ২০২৫, বুধবার, ৭:৫৪ অপরাহ্ন

mzamin

চায়ের রাজ্যে সবুজ বন আর অনন্য প্রকৃতি। জেলার ৯২টি চা-বাগান, ঘন বন, পাহাড়ি টিলা আর হাওর নদী। চা বাগানের আশপাশ রাবার, লেবু আর আনারসের বাগান। মাধবপুর লেক, মাধবকুণ্ড ও হামহাম জলপ্রপাত। সেইসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি আর পাখি ও মাছের অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল। চা রাজ্যের পথে পথে এমনি একের পর এক বর্ণনাতীত সৌন্দর্যের আধার। আর বৃষ্টি বন লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য এ যেন মনোমুগ্ধতার এক অনন্য আবেশ। দু’চোখ জুড়ে সবুজ বন আর নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। গহীন বনে বন্যপ্রাণির হাঁকডাক আর অবাধ বিচরণ। প্রবেশদ্বার থেকেই স্বাগত জানায় সারি সারি রকমারি গাছ। আর ওই গাছের মগডালে বানরের লাফঝাঁপ, ভাল্লুক, কাঠবিড়ালি আর কতো কী প্রাণী। দূর থেকে কানে বাজে ওদের নিজেদের মধ্যে হট্টগোলের উচ্চ আওয়াজ। দেখা মিলে তাদের দৌড়ঝাঁপ আর খাবার-দাবার নিয়ে ঝগড়া-ঝাটির। জীববৈচিত্র্যের সমারোহের এমন নজরকাড়া অপরূপ প্রকৃতির আধার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান। বর্ষা আর শুষ্ক দু’ মৌসুমে তার ভিন্ন রূপ সৌন্দর্য। এই বৃষ্টি বন বা রেইন ফরেস্টটির নাম ‘লাউয়াছড়া’। যুগ যুগ থেকে আপন রূপ মাধুর্যে দৃষ্টি কাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। জাতীয় উদ্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জনের পর আপন বৈশিষ্ট্যে হয়ে উঠেছে অনন্য। দেশের অন্যতম ও জেলার একমাত্র এই জাতীয় উদ্যানটি দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছে। নানা সমস্যা ও সংকটে থেকেও এখনো ঐতিহ্য আর সম্ভাবনা ধরে রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। ওখানকার প্রকৃতির সঙ্গে মানবের দানবীয় আচরণ। তারপরও লড়াই করে কোনো রকম টিকে আছে উদার প্রকৃতির এই রাজ্য। উদ্যানের প্রবেশ পথে সারিবদ্ধ গাছ আর আঁকাবাঁকা রেলপথ আকৃষ্ট করে যে কাউকে। কী নেই ওখানে। সবুজ গাছগাছালি, বনজ-জঙ্গল আর লতাগুল্মের মধ্যেই নানা জাতের বন্যপ্রাণির আপন নিবাস। সূর্যোদয় কিংবা গোধূলীলগ্নে ওখানকার বাসিন্দারা জানান দেয় এটাই তাদের আপন ভুবন। তাদের হাঁকডাক আর  হৈ-হুল্লুড়ে টের মিলে, ওখানেই বাসস্থান গড়েছে বন্যপ্রাণিরা। নানা রঙ আর আকার আকৃতির পোকা-মাকড়ের ঝিঁঝিঁ শব্দ, বিচিত্র সব পশুপাখির কিচিরমিচির, দলবদ্ধ বানরের ভেংচি আর লাফঝাঁপ। সাপ, হরিণ, বানর, শিয়াল আর নানা জাতের বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ। এমন দৃশ্য লাউয়াছড়ায় হরদম দেখা মেলে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। সবুজ প্রকৃতির হাতছানিতে ভরপুর ‘ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট’ হিসেবে খ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এই উপভোগ্য নৈসর্গিক সুন্দর্যের টানে বর্ষা আর শুষ্ক মৌসুমে প্রতিনিয়তই পর্যটকরা ওখানে আসেন। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই উদ্যানটি পাখি, সরীসৃপ প্রাণী ও উল্লুকসহ নানা জাতের বন্যপ্রাণি দেখার জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। চায়ের দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেট বিভাগের যতগুলো দর্শনীয় স্থান আছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট অন্যতম। উদ্যানটি এখন শুধু পর্যটকদের বিনোদনেরই স্থান নয়। জীবন্ত জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক গবেষণাগারও বটে। ওখানে দেশি-বিদেশি পশুপাখি ও বন্যপ্রাণি গবেষকরা গবেষণার জন্য স্থানটিতে আসছেন। শিক্ষা, গবেষণা, ইকো-ট্যুরিজমসহ ভ্রমণবিলাসীদের কাছে চিত্তবিনোদনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট হয়ে উঠেছে এ উদ্যান। জানা যায় ১৯২৫ খিস্টাব্দে বৃটিশ সরকারের উদ্যোগে লাগানো নানা জাতের গাছগাছালি বেড়ে আজকে তা ঐতিহ্যবাহী বনে পরিণত হয়েছে। মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খিস্টাব্দে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। লাউয়াছড়া আসার পথে রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়বে চা-বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় চা-বাগান দেখে মনে হবে যেন সবুজ সমুদ্র ঢেউ খেলছে। আর ওখানে এসে ঘন সবুজের গহীনে দেখতে পাবেন বিচিত্র সব পশু-পাখি। মিশ্র চিরহরিৎ এই উদ্যানে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। জানা যায়, বিশ^খ্যাত ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট্টি ডেজ’ ছবির একটি অংশের শুটিং হয়েছিল এই লাউয়াছড়া বনে। ১৩টি দেশের ১১৪টি লোকেশনে চিত্রায়িত হয় ছবিটি।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status