ঢাকা, ৭ জুন ২০২৫, শনিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বাজেটে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নেই: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে বলে 
অভিযোগ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কেমন বাজেট করবে এবং কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেবে তারও একটি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে দলটি। বুধবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেটের ওপরে বিএনপি’র আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে বলা হয়, বিএনপি সর্বক্ষেত্রে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারতো, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতো। তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হতো। দেশের বিভিন্ন কণ্ঠের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারতো এ বাজেট। কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগানো হয়নি, করা হয়নি। বাজেট প্রণয়ন একমুখী, অংশগ্রহণহীন ও গতানুগতিক ধারার হতো না, নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটতো।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির। বিশাল সুদের হারের সঙ্গে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্যম ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্যবিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও স্কুলগুলোকে করের আওতায় আনা, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো কিছু না করা, অপ্রয়োজনীয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ না করাসহ বিভিন্ন খাতে বাজেটের প্রস্তাবনার সমালোচনা করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার। কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে। আয়কর স্লাবে কর হারের পরিবর্তন অধিকাংশ করদাতাদের ওপর আরও অভিঘাত ফেলবে। কর ফাঁকি ও জালিয়াতি রোধ এবং কর জাল সম্প্রসারণ না করে ভ্যাট বৃদ্ধির মাধ্যমে বরাবরের মতো করের বোঝা সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে। পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জীবনযাত্রার মান কমছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডাবল ডিজিট’। তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেতো। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে ১৮ লাখ নারী। মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় প্রকৃত আয় কমেছে। দারিদ্র্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা ব্যয়ের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হওয়ায় আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক প্রায় সব খাতেই কর্মসংস্থান কমেছে। ফলে সমাজে ভাঙন ধরেছে; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ যা আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি। খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। অপর্যাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে। আজ অবধি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলো অধিকারভিত্তিক হলো না।

ক্ষমতায় গেলে  প্রথম ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা কী? 
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা কী হবে তাও ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মপরিকল্পনার একটা সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মানুষের আস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি গড়তে প্রয়োজন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। গতানুগতিকতা ছেড়ে সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। তাহলেই জাতির জন্য আশা, আস্থা ও পুনর্গঠনের দিগন্ত উন্মোচন হবে। বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে কী কী কাজ করবে তার পরিকল্পনা প্রকাশ করে। জনগণের ক্ষমতায়নের দল হিসেবে বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি বাস্তবসম্মত সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে চায়।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮০ দিনের (ছয় মাস) মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্বাচনের আগেই নির্ধারণ করা হবে। এই ১৮০ দিনের পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন সেক্টরে বিএনপি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আমরা সেগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাই।

দলের ১৮০ দিনের ভেতরে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থসেবা, নারীর ক্ষমতায়, শহীদদের স্বীকৃতি, কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়ন, শিল্প খাত, তথ্য প্রযুক্তি খাত, প্রবাসী কল্যাণ, নগর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা এই ১১টি খাতকে বিএনপি অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে করণীয় ঠিক করার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।
 

পাঠকের মতামত

জনগনের মতামত বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন? কোন সরকারের আমলে কি জনগনের মতামত নিয়ে বাজেট পেশ হয়?

মিলন আজাদ
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status