ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শিক্ষাঙ্গন

ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে ‘বিতর্কিত’ ভাস্কর্য ‘অঞ্জলি লহ মোর’

কামরুল হাসান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

(১ সপ্তাহ আগে) ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৮:৪৪ অপরাহ্ন

mzamin

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে নির্মিত ভাস্কর্য ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে  প্রচারিত হলেও মূলত ভাঙা নয় ভাস্কর্যটি পূর্বের নকশায় ফিরছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। 
১৭ জুন (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পাশের পুকুরে নির্মিত এই  ভাস্কর্যটি মূল নকশায় নিতে কিছু অংশ ভাঙা হয়। পরে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এর পরই ভাস্কর্যটি ভাঙার পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের  উদ্যোগে শতাধিক গাছ কেটে প্রায় ৪ কোটির অধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। নির্মাণের আগে স্থাপনাটির একটি নকশা প্রকাশিত হলে সেই স্থাপনাটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেলেও  স্থাপনাটি নির্মাণের পর দেখা যায় ভিন্নচিত্র। স্থাপনার নকশার সাথে বাস্তবের ছিলো না কোনো মিল। ভাস্কর্যতে বসানো হয়েছিল ‘অদ্ভুত’ দুটি হাতের স্থাপনা।

অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে শেষ সময়ে নকশা পরিবর্তন করে দুই হাতের একটি স্থাপনা যুক্ত করা হয়। সেসময় স্থাপনাটিকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িক স্থাপনা’ হিসেবে আখ্যা দেন।  ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলার দাবি তোলেন অনেকেই। সেই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্থাপনাটিকে ভেঙ্গে পূর্বের নকশায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 
এ নিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অঞ্জলি লহ মোর শব্দের ভিতরে আগেরকার দুর্নীতিবাজ ভিসি সৌমিত্র শেখর সাহেবের পার্শ্ব দেশের প্রতি ও সনাতন ধর্মের প্রতি প্রেম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখানে না আছে আমাদের ভূখণ্ডের কোনো নির্যাস, না আছে আমাদের জাতি সত্ত্বার কোনো পরিচয়। অর্থাৎ এটা স্পষ্টতই একটা সাম্প্রদায়িক প্রতীক।’
স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রনি বলেন, ‘যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য কিছু বিষয় আগে থেকেই ভাবতে হয়। প্রথমত, এই উন্নয়ন পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে কি না, পরিবেশের জন্য উপকারী কি না, অথবা আদৌ সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। কিন্তু আমার মনে হয়, ‘অঞ্জলি লহ মোর’-এর ক্ষেত্রে এসব কোনো দিকই বিবেচনা করা হয়নি। অনেকে দেখছি নজরুলের গানের সাথে ভাস্কর্যটির সামঞ্জস্য খুঁজতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা কি হতে পারে না যে, ভাস্কর্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যই এর নাম দেয়া হয়েছিল  ‘অঞ্জলি লহ মোর’।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান  উপাচার্য অধ্যাপক ড.  মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভাঙা নয় বরং মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের যে কয়েকটি দাবি ছিল সেগুলোর মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দাবি ছিল। কিন্তু আমরা অনন্যা দাবিগুলো পূরণে উদ্যোগ নিলেও সেসময় ভাস্কর্যটি নিয়ে তখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা এখন এটি সংস্কারে কাজ হাত দিয়েছি। ভাস্কর্যটির মূল যে ডিজাইন ছিল, সেই ডিজাইনে এখন ফিরবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। তাই ৫ আগস্টের পর এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমানে সেটি ভেঙে নতুন করে সংষ্কারের কাজে হাত দেওয়া হলে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাস্কর্যটি সংস্কার করছি যেন জলাধারটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। আজকেও ডিনস কমিটির একটি মিটিং ছিল, সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের সময়ে তার উদ্যোগে কলা অনুষদের সামনের পুকুরটির উপর নির্মিত হয়েছিলো ‘সিন্ধু সারোস’ নামের একটি স্থাপনা। অনেকেই প্রমোদ তরী বা ভাসমান ঘরও বলতো যার সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হওয়ার পর  ‘সিন্ধু সরোস’ স্থাপনাটি ভেঙে স্থাপন করেন ‘অঞ্জলি লহ মোর ‘ভাস্কর্য।

শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শিক্ষাঙ্গন সর্বাধিক পঠিত

পাশের হার ৮৫ দশমিক ৬১/ বাউবির এইচএসসি’র ফল প্রকাশ

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status