অনলাইন
‘চুরির অপবাদ’ দিয়ে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, সিসিটিভির ফুটেজে নির্যাতনের দৃশ্য
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
(১৬ ঘন্টা আগে) ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ৩:১৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কাশিমপুর রোডে একটি পোশাক কারখানায় ইলেকট্রিক মেকানিককে ‘চুরির অপবাদ’ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টা থেকে শনিবার বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রথমে গোপন করার চেষ্টা করায় বিলম্বে ঘটনাটি প্রকাশ পায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিহত ইলেকট্রিক মেকানিক হৃদয় হোসেন (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের শুকতারবাইদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। তিনি কোনাবাড়ীর হারিনাবাড়ী এসরার নগর হাউজিং এলাকায় মিরাজের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয় গ্রীণল্যান্ড ফ্যাক্টরিতে ডাইং সেকশনের ইলেকট্রিক মেকানিক হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করতেন হৃদয়।
এ ঘটনায় হাসান মাহমুদ মিঠুন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর হাদিরা বাজার এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর কুদ্দুস নগর এলাকায় আয়নালের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুরির অপবাদ দিয়ে গত শনিবার সকালে গ্রীণল্যান্ড গার্মেন্টসের মেকানিক সেকশন ও নিরাপত্তাকর্মীরা হৃদয়ের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে দুপুরের দিকে হৃদয় মারা যান। ঘটনার খবর আশপাশের অন্যান্য গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রায় ৪০০-৫০০ শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন এবং গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হৃদয় হত্যার বিচার দাবি করে তারা কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ গার্মেন্টসের মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কয়েকজন হৃদয়কে দড়ি দিয়ে পিঠ মোড়া করে বেঁধে কারখানার ভেতরের একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। পরে ওই কক্ষে তার ওপর অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে কারখানা ভেতরে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়। মৃত অবস্থায় হৃদয়কে নিয়ে ১০টা ২১ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স কারখানা ত্যাগ করে। হৃদয় মারা যাওয়ার পর তার শরীরের একাধিক ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তাতে তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় এবং মুখমণ্ডলে রক্তাক্ত ও কালচে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই লিটন বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসে একজন চোর ফ্যাক্টরির দেয়াল টপকে ভেতরে আসার সময় ড্রেনে পড়ে আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল থেকে জানায়, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা শোনার পর কারখানায় অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ এবং হত্যায় ব্যবহৃত অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটি হত্যাকাণ্ড।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার পরে কারখানার ভেতরে হৃদয়কে নির্যাতন করার ফুটেজ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতেই হৃদয় মারা যান। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শনিবার সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে হৃদয়ের লাশ শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে কারখানার সবাই পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনা জানতে পেরে বিক্ষোভ করে।’
পাঠকের মতামত
Imagine he did steal. What punishment does the law prescribe? Does it prescribe beatings by mob? Does it prescribe such terrible beatings by mob? Does it prescribe death by mob beatings? In order to stop such CRUELTIES we need to arrest everyone who took part in that beating and charge them for murder (with an alternative charge of manslaughter).