ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

সংলাপে ঐকমত্য না হওয়ায় পেছাচ্ছে জুলাই সনদ

অনলাইন ডেস্ক

(২২ ঘন্টা আগে) ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:৫৭ অপরাহ্ন

mzamin

সমকাল

‘সংলাপে ঐকমত্য না হওয়ায় পেছাচ্ছে জুলাই সনদ’-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কারের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ জুলাই হচ্ছে না ‘জুলাই সনদ’। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই ‘জুলাই সনদ’ সই সম্ভব নয়। তবে এখনও আশা করছি, জুলাইয়েই হবে সনদ।

সংস্কার তথা জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মত চায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম ধাপের সংলাপে মতামত দেওয়া ৩৩ দল ও জোটের সঙ্গে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ৪৫টি বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম ধাপে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে সংলাপ করে কমিশন।

গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপে ১৪৫ সংস্কার প্রস্তাবের নিষ্পত্তি হয়। বাকি ২১টি নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলছে। ৩ জুন থেকে সাত দিনের সংলাপে মাত্র ৯টি বিষয় আলোচিত হয়েছে।

এর মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল করা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার প্রস্তাবে দ্বিতীয় দফার সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল ও জোট মোটামুটি একমত হয়েছে।

এদিকে ‘জনগণ সকল প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ে চলছে’ শিরোনামে কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ফরহাদ মজহারের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে সমকাল। 

সাক্ষৎকারটি তুলে ধরে হলো-

কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ফরহাদ মজহার দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা-উবিনীগ এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সম্পাদনা করছেন ‘চিন্তা’। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঔষধশাস্ত্রে স্নাতক এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন’, ‘মোকাবিলা’, ‘এবাদতনামা’, ‘সাম্রাজ্যবাদ’, ‘মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত’, ‘ক্ষমতার বিকার’ ইত্যাদি। ফরহাদ মজহারের জন্ম ১৯৪৭ সালে নোয়াখালীতে। এই সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ আজ প্রকাশ হচ্ছে; বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় অংশ। সমকালের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম।

সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল; বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে এগোচ্ছে?

ফরহাদ মজহার: প্রশ্নটা কিন্তু বিমূর্ত হয়ে গেল। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, তা বুঝতে হলে আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় নিতে হবে।

সমকাল: একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন?

ফরহাদ মজহার: প্রথমে ৫ আগস্টের পরে ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ‘সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব’ ঘটেছে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের যে গাঠনিক ক্ষমতা বা ‘কনস্টিট্যুয়েন্ট পাওয়ার’ জনগণ পেয়েছিল, জনগণের সেই ক্ষমতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রক্ষমতা ও কাঠামো রক্ষার শপথ নেওয়ার পর পুরোনো আইন ও প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের নামে তামাশা চালানো হয়েছে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে যাদের যুক্ত করা হলো, তাদের খুব কমই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন; কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানের সমর্থকও ছিলেন না। গণবিচ্ছিন্ন এলিট বা অভিজাত শ্রেণির নেতৃত্বে সংস্কার চলছে। এর একটা গালভরা নামও আছে; ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’। অর্থাৎ লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণিসহ দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী ও করপোরেট শক্তির মধ্যে নতুন বোঝাপড়া। পুরোনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে নতুন রংচং মেখে হাজির করা।

সমকাল: নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কি তাহলে কথাই থেকে যাবে?

ফরহাদ মজহার: জনগণ সকল প্রকার ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে। এটাই বাস্তব ইতিহাস। জনগণ নতুনভাবে বাংলাদেশ গঠনের জন্য অকাতরে শহীদ হয়েছে, আর পঙ্গু হয়ে পড়ে রয়েছে– এদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। বিস্ময়কর যে খোদ জনগণকেই এই তথাকথিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সমকাল: জনগণ বিক্ষোভ করতে পারছে; মত প্রকাশ করতে পারছে কি? 

ফরহাদ মজহার: আপনি দেখবেন, যখন ‘মব’ একের পর এক মাজার ভাঙা শুরু করেছিল– তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। উল্টা কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা লেখার জন্য কারাগারে পাঠানো হলো। অর্থাৎ একদিকে জনগণকে অস্বীকার, তাদের গণতান্ত্রিক সামষ্টিক শক্তি বা গাঠনিক ক্ষমতাকে দমন করা হলো, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়বার গণতান্ত্রিক অভিপ্রায়কে নস্যাৎ করে সংস্কারের নামে পুরোনো ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষার চেষ্টা দৃঢ়ভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 
গণঅভ্যুত্থান হয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ‘রেজিম চেঞ্জ’। মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক জেফরি স্যাকস ১৮ আগস্ট দাবি করলেন, ‘দ্য ভেরি স্ট্রং এভিডেন্স অব দ্য ইউএস রোল ইন টপলিং দ্য গভর্নমেন্ট অব ইমরান খান ইন পাকিস্তান রেইজেজ দ্য লাইকলিহুড দ্যাট সামথিং সিমিলার মে হ্যাভ অকারড ইন বাংলাদেশ’ (পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার খুবই শক্ত প্রমাণ রয়েছে। এ থেকে ধারণা তৈরি হয়, একই রকম কিছু বাংলাদেশে ঘটে থাকতে পারে)। কথাটা তো ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।

সমকাল: তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ পরিস্থিতি কীভাবে বিচার করব?

ফরহাদ মজহার: আরেকটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হতে শুরু করেছে। সেক্যুলার বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের বিপরীতে বাংলাদেশকে ধর্মীয় জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের উর্বর ভূমিতে পরিণত করা। প্রথমত, দীর্ঘকাল ইসলামবিদ্বেষ ও ইসলাম নির্মূল রাজনীতির ফলে ইসলামের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক বোঝাপড়া আমরা করিনি। পাশ্চাত্যে গ্রিক দর্শনের আশ্রয়ে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টীয় সমাজে চিন্তা ও রাজনৈতিক পরিসরে যে রূপান্তর ঘটেছে, আমরা আমাদের সমাজে সেই ইতিবাচক রূপান্তর ঘটাতে পারিনি। নামাজ-কালাম, এবাদত-বন্দেগি ছাড়া ইসলাম থেকে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষা গ্রহণ করবার কোনো শক্তিশালী ধারা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। এমনই যে নানান ফেরকা, মতবাদ এবং পরস্পরকে কাফের-মুরতাদ প্রমাণ করার ছড়াছড়ির নাম ইসলাম হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত, লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির লুটপাট এবং আন্তর্জাতিক বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে আমরা একটি অনুন্নত ও সস্তায় শ্রম বেচাবিক্রির দেশে পরিণত হয়েছি। ফলে ইহলৌকিক জীবন মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও বাসনা পূরণ করতে পারে, সে ভরসা গরিব ও প্রান্তিক জনগণ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষ পরকালাশ্রয়ী; অর্থাৎ পরকালই সত্য, ইহলোক মিথ্যা এবং ইহলোকে কিছু পাবার আশা নেই– এই বিশ্বাস গরিব ও প্রান্তিক জনগণের মধ্যে প্রবল হয়েছে। ধর্মচর্চাও ক্রমশ এক শ্রেণির পরকাল ব্যবসায়ীর হাতে চলে গিয়েছে। ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনাও ইতিবাচকভাবে নয়, ইহলোকে অবিশ্বাসী বা পরকালবাদী তত্ত্বে পর্যবসিত হচ্ছে। সমাজ ও রাজনীতির জন্য এটা ভয়াবহ হতে পারে। বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির পরাজয়ের পর নতুন ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক শর্ত বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। 

সমকাল: এই পরিপ্রেক্ষিতে ভূরাজনীতির পরিগঠন কেমন হবে বলে মনে করছেন? 

ফরহাদ মজহার: খেয়াল করুন, আগস্টের পর কয়েক মাসজুড়ে যে ভূরাজনৈতিক অবস্থা ছিল, সেটা এখন সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করেছি, সেটা আগের চেয়ে পরিষ্কার। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে, গাজাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া এবং জায়নিস্ট ইসরায়েলের রিয়েল টাইমে গণহত্যার দৃশ্য সারা দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। ইরান হামলার মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরও পরিণত রূপ গ্রহণ করেছে। এক মেরুর যে বিশ্ব, সেখান থেকে পৃথিবীর তিন মেরুর একটা লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধের লড়াই দেখুন। জায়নবাদের বিরুদ্ধে ইহুদি-খ্রিষ্টান-মুসলিমসহ আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে যে লড়াই, সেটা বৈশ্বিক লড়াই হিসেবে হাজির হয়েছে। দেখুন, নিউইয়র্কে মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মুসলমান, নাকি সমাজতন্ত্রী– তা নিয়ে ভোটারদের মাথাব্যথা নেই। দুনিয়াব্যাপী যে ব্রুটাল পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা জারি রয়েছে এবং তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসরায়েলকে সামনে রেখে যে মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স দাঁড়িয়ে আছে, তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান সেই বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ; বাইরের কিছু না। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

সমকাল: এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কী করণীয়?

ফরহাদ মজহার: ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে বাংলাদেশের জন্য সঠিক রাজনৈতিক কৌশল ও নীতি ঠিক করতে সক্ষম কোনো রাজনৈতিক দল আমরা দেখছি না। আমি মনে করি, ছাত্র-তরুণদের যত ব্যর্থতাই থাকুক– গণমানুষের সামষ্টিক অভিপ্রায়কে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া এবং তা বাস্তবায়নের জন্য গণরাজনৈতিক ধারা তারা অবশ্যই গড়ে তুলতে পারবে। সামনে অনেক ওঠাপড়া, বাধা-বিপদ আছে। তবে ৫ আগস্ট প্রমাণ করে দিয়েছে, এটা ঘটে যাচ্ছে। ঘটবে। আমি এবং আমার বন্ধুরা সেই প্রক্রিয়ার ভেতর কিংবা বাহির– সকলভাবেই হাজির থাকব। 

সমকাল: এই বাস্তবতায় বর্তমান সরকারকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ফরহাদ মজহার: ড. ইউনূসকে আমরা কেন চেয়েছি? আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক রূপান্তরের কেন্দ্রে থেকে তিনি যেন জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন। কাজটা তো সহজ নয়। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক নয়। তিনি তাঁর মতো চেষ্টা করছেন। ভারতকে তাৎক্ষণিক মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে সমঝোতা তিনি করতে পারবেন– এই আস্থা আমাদের আছে। ভারত যেন আমাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্রের রূপান্তরে হস্তক্ষেপ করতে না পারে এবং বাংলাদেশকে লুটপাটের ক্ষেত্র মনে না করে, সে জন্য ড. ইউনূসকে আমাদের দরকার ছিল। এর কুফলটা হচ্ছে এই, জেফরি স্যাকসরা এখন বলছেন– বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য রেজিম চেঞ্জ হয়েছে। এই হাল আমরা সহজে বদলাতে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন করে রেজিম চেঞ্জ করতে চেয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও রেজিম চেঞ্জ হয়েছে কি? এই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তিনি ব্যর্থ হলে জেফরি স্যাকসের মূল্যায়ন সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। জেফরি স্যাকস আমাদের গণআকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছেন বটে, কিন্তু কথা পুরোটা মিথ্যা নয়। ইতিহাসের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে ড. ইউনূসকে অনেক প্রজ্ঞাবান ও সতর্ক হতে হবে।

সমকাল: তাহলে বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যৎ কেমন হবে?

ফরহাদ মজহার: ওপরে যা বললাম, সেই সকল কারণে আমাদের ভবিষ্যৎটা খুব ভালো বলে আমি মনে করছি না। ফলে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। একদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তি– আওয়ামী লীগ নামে যেটি হাজির ছিল, বাঙালি জাতিবাদ আকারে হাজির ছিল; আমাদের দুর্বলতার সুযোগে পরাজিত শক্তি শক্তিমান হবে। পাশাপাশি তার সঙ্গে জোট বাঁধবে জাতিবাদী ইসলাম। জাতিবাদী ইসলাম ফ্যাসিবাদের অপর নাম। ফলে জনগণের গণসার্বভৌমত্ব বা গণআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে যে একটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশের সুযোগ ছিল, সেটি অনেক বেশি রুদ্ধ হবে। 

সমকাল: তাহলে আমাদের করণীয় কী?

ফরহাদ মজহার: আগামীর লড়াইটা কঠিন হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু ভীতির কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি, এই পোলারাইজেশনটা ভালো। এই পোলারাইজেশন তরুণদের বিশাল একটা অংশকে অনুপ্রাণিত করবে যে জুলাইয়ের বিপ্লবী স্পিরিটকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে কী করা দরকার। এখন যাদের আমরা ভুল করতে দেখছি, এদিক-সেদিক করছে, এরা ঠিকই আবার রাস্তায় থাকবে। আমি এদের ওপর আশা ছাড়তে রাজি না। কারণ এরাই গণঅভ্যুত্থানটা করেছে। এই লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমরা বুদ্ধিজীবী হিসেবে যেমন এগিয়ে যেতে পারি, একই সঙ্গে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও।

সমকাল: আপনার এত আস্থার কারণ কী? 

ফরহাদ মজহার: যদি গণসার্বভৌমত্ব কায়েমই গণতন্ত্র হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে হলে জনগণের ওপর আস্থা রাখতেই হবে। আর লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির পক্ষে থাকলে আপনি নির্বাচনকেই গণতন্ত্র বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে থাকবেন। জনগণের ওপর আস্থা তো থাকতেই হবে। জনগণের যে অংশটা রূপান্তর চায়, তারা না খেয়ে হলেও তাদের নেতাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

সমকাল: গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখতে হলে এই মুহূর্তে কী করণীয়?

ফরহাদ মজহার: আমাদের মনে রাখতে হবে, ৮ তারিখে একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। এই প্রতিবিপ্লবের পরে যদি আমরা এগোতে চাই, তাহলে সাময়িক হলেও জনগণের গাঠনিক শক্তিকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এটা তো সহজ কাজ নয়। একবার যখন গাঠনিক মুহূর্ত বেহাত হয়, চলে যায়, তখন ফিরিয়ে আনা কঠিন কাজ। সমাজে যে শ্রেণি লুটেরা-মাফিয়াদের পক্ষে ছিল, তারাই কিন্তু কাজটা করেছে। সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ও তার পক্ষে যেসব মতাদর্শ সমাজে কার্যকর এবং যে এলিট ও ধনীরা মিলে লুটেরা-মাফিয়াদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নতুন বন্দোবস্ত দ্বারা চালু রাখতে চায়, তাদের ধরে ধরে এনে আপনি কমিশন বানাবেন। আর নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বানাবেন না; জনগণকে বানাতে দেবেন না। তথাকথিত সংস্কার করবেন– এই সংস্কার তো এমনিতেই ব্যর্থ হবে। যে সাংবিধানিক কাউন্সিলের কথা বলা হয়েছে, আজকের পত্রিকায় দেখলাম, সেই ক্ষেত্রে ঐকমত্য সম্ভব হবে না। এটা তো আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম। লড়াইটা জনগণ বনাম ফ্যাসিস্ট শক্তির। 

সমকাল: এই সংকট থেকে বেরোনোর কি কোনো পথ নেই? 

ফরহাদ মজহার: এখান থেকে বেরোবার একমাত্র পথ হচ্ছে বুঝতে পারা যে, লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আত্মঘাতী পথ। এখান থেকে বেরুতে হবে। এখান থেকে বেরুতে হলে প্রথমত আমাদের গণসার্বভৌমত্বের ধারণাটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার তৈরি হয়ে আছে। সেটা হলো, গণসার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন। বিপরীতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তথাকথিত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া গণঅভিপ্রায় নস্যাৎ করা, প্রতিবিপ্লবী রাজনীতিকে বৈধকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা ইত্যাদি।

সমকাল: তাহলে সরকার যে নির্বাচনের কথা বলছে, তার কী হবে?

ফরহাদ মজহার: নির্বাচন যে বাংলাদেশকে একটা ভালো জায়গায় নেবে– এটা সাধারণ মানুষ তো বিশ্বাস করে না। তাহলে জবরদস্তি করে এটা চাপিয়ে দেওয়া ভুল। আবার সাধারণ মানুষ এই আস্থাও হারিয়েছে যে, ড. ইউনূস তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন। এটা হলো রাজনৈতিক বাস্তবতা। জনগণ যা চাইছে তা বোঝার মতো মানসিকতা অন্তর্বর্তী সরকারের চাই। নির্বাচন করার ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের আছে কি নেই? নির্বাচন করতে হলে আপনি কাকে দিয়ে নির্বাচন করবেন? যাদের দিয়ে নির্বাচন করাবেন, তারা নিজেদের লোকদের নির্বাচন করিয়ে আনবে। এই নির্বাচনে জনগণ কী পাবে? ঠিক ২০০৮ সালে বিএনপি যে ভুলটা করেছে, এটা হবে সেই ভুলেরই পুনরাবৃত্তি। 

সমকাল: তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকবে?

ফরহাদ মজহার: না। আমি সে কথা বলিনি। সরকার তো গঠনের প্রক্রিয়াই শুরু করেনি। গঠন প্রক্রিয়া মানে একটা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়া। সেদিকে সরকারকে যেতে হবে।

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ফরহাদ মজহার: সমকালকেও ধন্যবাদ।

ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘জুলাই ঘোষণাপত্র আদায়ে অনড় এনসিপি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে শহিদ আবু সাঈদের সমাধিতে জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রার উদ্বোধন করেছে। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এনসিপি নেতৃবৃন্দ দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। আবু সাঈদের স্বপ্ন, জুলাইয়ের স্বপ্ন তারা মানুষের কাছে তুলে ধরবেন, এমনটাই জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি তাদের এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আবু সাঈদরা যে কারণে শহিদ হয়েছিল আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরব। আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের গুলির সামনে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেটাই ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান, আবু সাঈদের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এ তিনটি দাবি আবারও করছি। নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আসবে নতুন বন্দোবস্ত। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব। আমরা বাংলার প্রতি প্রান্তরে যাব। সব মানুষকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করব।’

জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনড় থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নাহিদ ইসলাম। জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে চলমান তালবাহানার বিরুদ্ধে আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক। আগামী ৩ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার রাজপথে পদযাত্রা করবে এনসিপি।

তিনি বলেন, ‘ আবু সাঈদের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান এ তিনটি দাবি আবারও করছি। নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আসবে নতুন বন্দোবস্ত। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব।’

প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণে ২৫ দল একমত হলেও বিএনপিসহ পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে সম্মতি জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি কে হবেন প্রস্তাবে, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির একজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন– এ বিষয়েও দলগুলোর অবস্থান প্রায় কাছাকাছি। বাকি পাঁচ বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি।

কমিশন প্রস্তাব করেছে, সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। উচ্চকক্ষ হবে ১০৫ আসনের। পাঁচজন মনোনীত হবেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তিতে তা বাদ পড়েছে। দুটি ছাড়া সব দল ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠনে একমত হয়েছে।

তবে কীভাবে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে– এ নিয়েই সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ চলছে। বিএনপি চায়, সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বাকি দলগুলো চাইছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন হোক। সাত দিনের সংলাপে চার দিন এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি।

বিএনপির ভাষ্য, আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ হলে সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দল কখনোই পাবে না। অন্যান্য দল বলছে, তারা এটাই চায়, যেন কখনও সরকার এককভাবে সংবিধান পাল্টে ফেলতে না পারে।

গত রোববারের সংলাপে গণসংহতির জোনায়েদ সাকি জানতে চান, সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান করা হলে বিএনপি আনুপাতিক পদ্ধতি মানবে কিনা? কমিশন এবং রাজনৈতিক দলের সূত্র জানিয়েছে, এ প্রস্তাব ছাড়াও বিএনপিকে রাজি করাতে উচ্চকক্ষের অর্ধেক নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে, অর্ধেক ভোটের অনুপাতে করা যায় কিনা– এ আলাপও রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, আলোচনার টেবিলে এমন প্রস্তাব নেই।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সমকালকে বলেন, আনুপাতিক নির্বাচনই মৌলিক সংস্কার। কারও জন্য তা আটকে থাকতে পারে না।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন সমকালকে বলেন, উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব এলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। উচ্চকক্ষ আনুপাতিক এবং সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান থাকতে হবে।

বিএনপি রাজি না হওয়ায় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে কমিশন ‘সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেছে।

প্রধানমন্ত্রী, সংসদের উভয় কক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল বাদে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা অন্য দল থেকে একজন এমপি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সাত সদস্যের এ কমিটি নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মানবাধিকার কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনে নিয়োগ দেবে।

বিএনপি এতে রাজি না হলেও অন্যরা একমত। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে যুক্তিতে নিয়োগ আইনগুলোর সংস্কার চায় দলটি।

কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, কমিটি না করে অন্য কোনো পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবমুক্ত করা যায় কিনা, তা ভাবা হচ্ছে। 
অপর দুই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এবং মূলনীতি নিয়েও ঐকমত্য হয়নি।

আলী রীয়াজ সমকালকে বলেন, মৌলিক সংস্কারের একটিতে ঐকমত্য হলে দেখা যাবে, অন্যগুলোতেও দলগুলো কাছাকাছি এসেছে। সনদ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা– এমন প্রশ্নে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা বলেছেন, এর ভেতরেই নির্বাচন হবে বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশন ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করছে।

সংলাপে ঢিলেমি আছে বলে মনে করলেও সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সনদের কারণে নির্বাচন আটকে থাকার কারণ নেই। বিএনপি ১৬৬ সুপারিশের ৯০ শতাংশের বেশিতে আগেই একমত হয়েছে। বিএনপি সংস্কারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আশা করছি, চলতি মাসেই সনদ হয়ে যাবে।

অন্য দলগুলোর নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, সংস্কারের বিষয়ে ফয়সালা ছাড়া সনদে সই হবে না। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়ে দিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছে, সংস্কার না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বলছে, নির্বাচন আয়োজনের আগে সংস্কার হতে হবে। জামায়াতের ডা. তাহের বলেছেন, নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সংস্কার হতে হবে।

প্রথম আলো

দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর বিপুল সম্পদের খোঁজ’। খবরে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী শাহিদ সিদ্দিকের বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিপুল জমির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের এসব সম্পদ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধান এখনো চলছে। আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। ব্যাংকে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর টাকা আছে কি না, কত লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া এখনো বাকি।

দুদকের নথি অনুযায়ী, তারিক সিদ্দিকের নামে গাজীপুরে বাগানবাড়ি আছে দুটি। ঢাকার গুলশানে রয়েছে একটি সাততলা বাড়ি। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিনটি প্লট রয়েছে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর।

বারিধারায় রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট ও একটি ফ্ল্যাটের একাংশ। গাজীপুরে আরেকটি সাততলা বাড়ির চার ভাগের এক ভাগের মালিকানা তারেক সিদ্দিকের নামে। এর বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৪৮ বিঘা জমি রয়েছে।

বাগানবাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে তারিক সিদ্দিকের সম্পদের দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৮ কোটি টাকার বেশি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে যে দামে সম্পদের দলিল দেখানো হয়েছে, বাজারমূল্য তার কয়েক গুণ।

যুগান্তর

‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাই ঐক্য বজায় রাখুন’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘ঐক্য বজায় রাখা’র আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যেকোন মূল্যে বীরের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আসুন সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি, বাস্তবায়িত করি কোটি মানুষের নতুন বাংলাদেশের নির্মাণের স্বপ্ন।

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা দেশের ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে কিনা তা গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখার জন্য সব রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ জানান।

ভিডিওবার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে।

কালের কণ্ঠ

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ‘সুযোগ থাকলেও বিসিএসে বঞ্চিত মেধাবীরা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরির কোটা ঘিরে গত বছর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বিসিএসের কোটা ঘিরে এই আন্দোলনের শুরু। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতন হয়। সেই বিসিএসেই এখন বঞ্চনা চলছে বলে অভিযোগ করছেন চাকরিপ্রার্থী ও জুলাই আন্দোলনকারীরা।

ফলে চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; চার লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ শূন্য। এর মধ্যে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে।

এসব পদের বিপরীতে কর্মরত এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন, ফাঁকা ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ। আগের কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে বেশি প্রার্থী সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এতে সায় দেয়নি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ফলে বিজ্ঞাপিত পদ ধরেই গত সোমবার রাতে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

বণিক বার্তা

‘বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ৬ মাস পরিচালিত হবে নিউমুরিং টার্মিনাল’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় নতুন করে অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ছয় মাসের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এজন্য মাসিক ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা হারে ছয় মাসে মোট ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কার্যক্রম অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন করেছে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সুলতানা সালেহা সুমী স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬-এর ৬৮ ধারা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও সংশ্লিষ্ট ওভারফ্লো ইয়ার্ড পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন অপারেটর নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এনসিটি পরিচালনার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য বন্দরকে নির্দেশনাও দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

নাম না প্রকাশের শর্তে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এনসিটির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হবে। পরবর্তী অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ছয় মাস মেয়াদে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটির সভায় এটা অনুমোদিত হয়েছে।’

আজকের পত্রিকা

দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘অনড় অবস্থানে সংলাপে জট’। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই সনদ চলতি মাসেই দেওয়া এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভাবনা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক পদ্ধতি সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগ দল মোটামুটি একমত হলেও দুটি বিষয়ে প্রায় অনড় অবস্থান নিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে সংলাপে বেশ ভালোই জট লেগেছে।

যে দুই বিষয়ে বিএনপির প্রবল আপত্তি, তার একটি হলো সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কমিটি গঠন, অন্যটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের গঠন পদ্ধতি ও এর এখতিয়ার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কমিটি গঠনের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অনেক দল এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে। কিন্তু বিএনপি সংবিধানে এই বিধান যুক্ত করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দলটি মনে করছে, এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে সাংবিধানিক বিধিবিধান যুক্ত করা হলে তা নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার বেশ সীমিত করে দেবে। এতে যে দলই ভোটে জিতে আসুক, তাদের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিএনপির এ অবস্থান সমর্থন করছে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও লেবার পার্টি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, এলডিপি, সিপিবি, বাসদসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বাকি ২৪টি দল সংবিধানে নিয়োগ কমিটির বিধান চায়।

দেশ রূপান্তর

মুজিববর্ষের নামে বেবিচকে ‘হরিলুট’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুজিববর্ষ আয়োজনের নামে রাষ্ট্রের সবকটি প্রতিষ্ঠানে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অনুষ্ঠান করার নামে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। এসব টাকা ‘নয়ছয়ের’ মূল রহস্য উদঘাটন করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে নেমেছে।

গত ২২ মে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে খরচের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে দুদক। শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণসহ নানা অনুষ্ঠান করে অর্থ হরিলুট করার তথ্য পেয়েছে দুদক। এতে সংস্থাটির অন্তত ১৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফেঁসে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, মাস চারেক আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, মুজিববর্ষ ঘিরে কীভাবে একটা উন্মাদনা হয়েছে। মুজিববর্ষে কী ধরনের কাজ হয়েছে, কত টাকা অপচয় হয়েছে সেটা নিয়ে ডকুমেন্ট করার কথা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। মুজিববর্ষের নামে কোন কোন মন্ত্রণালয় কত কোটি টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে ডকুমেন্টেশন হবে, সেগুলোর একটা লিস্ট করা হবে। এরপরই অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচের তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে সরকার। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিচ্ছে সরকারের সবকটি সংস্থা। অন্য সংস্থাগুলোর চেয়ে দুদক আলাদাভাবে চিঠি পাঠাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার খবর ‘চতুর্মুখী সংকটে রপ্তানি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বহির্বিশ্বের নানামুখী চাপের পাশাপাশি একের পর অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত স্থলপথে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নিয়ে এখনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি সরকার। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের প্রকোপ আরও বাড়ছে। বৈশ্বিক অস্থিরতায় ইউরোপের ক্রেতারা সংশয়ে আছেন নতুন অর্ডার নিয়ে।

বহির্মুখী এসব চাপের পাশাপাশি রয়েছে অভ্যন্তরীণ সংকট। এনবিআর সংস্কার নিয়ে কর্মকর্তাদের ডাকা শাটডাউনের কারণে কাস্টমস পণ্য ছাড়পত্রের যে জট তৈরি হয়েছে তাতে ক্রেতাদের অর্ডার করা পণ্য সময়মতো সরবরাহ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘরে-বাইরে চতুর্র্মুখী সংকটে পড়েছে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য। বিকেএমইর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি নানামুখী চাপে পড়েছে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য। বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে এমনিতেই সংশয়ে আছেন পশ্চিমা ক্রেতারা।

ফলে তারা নতুন অর্ডারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমস্যা রপ্তানি খাতে চতুর্মুখী সংকট তৈরি করেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, এলসি জটিলতা, ডলারের দাম বৃদ্ধি পুরোনো সমস্যা। এরই মধ্যে এনবিআর নিয়ে প্রশাসনিক সংকটের কারণে রপ্তানি খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। শাটডাউনের কারণে কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তাতে করে ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন দেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধাও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে।

পাঠকের মতামত

একাত্তর বিরোধীদের বিচারও করতে হবে, তাহলে চব্বিশের বিচারও পরিপূর্ণতা পাবে।

Mohiuddin Palash
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

নবীজীর সাহাবীদের নিয়ে কটূক্তি/ মৌলভীবাজারে নারী আইনজীবী আটক

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status