অনলাইন
আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন : সবুজ হয়ে উঠছে সাহারা
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ সপ্তাহ আগে) ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৫:৪৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:২৮ অপরাহ্ন
সাহারা মরুভূমিতে খুব বেশি সবুজ নেই। তবে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পর মহাকাশ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক স্থানগুলির কিছু অংশে সবুজ রঙ দেখা যাচ্ছে। মৌসুমি ঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সাহারায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ব্যাপক বেড়েছে। এমনকি মাঝে মাঝে বন্যাও দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন জীবাশ্ম জ্বালানি দূষণের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়ন এর জন্য দায়ী। জলবায়ুর পরিবর্তনে কেবল মরুভূমি সবুজ হচ্ছে তা নয়, এর ফলে আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি প্রভাবিত হয়েছে। ফলে নাইজেরিয়া, ক্যামেরুনসহ বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে বৃষ্টিপাত ও বন্যা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে জার্মানির লাইপজিগ ইউনিভার্সিটির জলবায়ু গবেষক কার্স্টেন হাউস্টেইন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মরুভূমির সবুজ হয়ে যাওয়া এলাকা অন্য অংশের চেয়ে ছয় গুণ বেশি ভেজা থাকে। তাছাড়া এল নিনো (উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতের পরিবর্তন) থেকে লা নিনোর (বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ) রূপান্তরের প্রভাব তো রয়েছেই।’ হাউস্টেইন ব্যাখ্যা করেছেন -'আন্তঃট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোন, যা (আফ্রিকার) সবুজায়নের কারণ, পৃথিবী যত উষ্ণ হয় ততই উত্তর দিকে চলে যায়, অন্তত, বেশিরভাগ মডেলের ক্ষেত্রে এটিই দেখা গেছে ।" এই জুনে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই অঞ্চলে উত্তরমুখী স্থানান্তর পরবর্তী কয়েক দশকে আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। স্থানান্তরটি কেবল মরুভূমিকে সবুজ করে তুলছে না, এটি আটলান্টিক হারিকেন মৌসুমকে ব্যাহত করেছে এবং বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের জন্য গত কয়েক মাসে করুণ পরিণতি ডেকে এনেছে। সাধারণত নাইজার, চাদ, সুদান, লিবিয়া ও দক্ষিণ মিসরের কিছু অংশে প্রতিবছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত দেখা দিচ্ছে। সাধারণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে যা ৪০০ শতাংশ বেশি। এতে এ অঞ্চলে প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। চাদের উত্তর অংশ নিন, যা সাহারা মরুভূমির অংশ। এখানে সাধারণত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত মাত্র এক ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এই বছর একই সময়সীমার মধ্যে ৩ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে চাদে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জাতিসংঘের একটি তথ্য অনুসারে, এই গ্রীষ্মে দেশে বন্যায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রভাবিত হয়েছে এবং কমপক্ষে ৩৪০ জন নিহত হয়েছেন।ভয়ঙ্কর বন্যায় নাইজেরিয়ায় লক্ষাধিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ২২০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। আগস্টের শেষের দিকেও মারাত্মক বন্যায় সুদান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত ১৩২ জনের মৃত্যু হয় এবং ১২,০০০ এরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় । গোটা বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে আর্দ্রতা বাড়বে। হাউস্টেইন ব্যাখ্যা করেছেন যে এতে সামগ্রিক বর্ষা আরো আর্দ্র হতে পারে এবং এই মৌসুমের মতো আরও বিধ্বংসী বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে প্রতিটি বন্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা ভূমিকা পালন করেছে তা নির্ধারণ করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন হাউস্টেইন।
সূত্র :সিএনএন