ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

হাড়ের যত্ন-আত্তি ও বয়স্ক মানুষের করণীয়

ডা. মো. বখতিয়ার
২৫ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার

হাড় ভাঙার পর  প্রাথমিক চিকিৎসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখনই ফ্র্যাকচার হবে, বিশেষ করে হাত বা পায়ের ক্ষেত্রে, হাড় মোটামুটি সোজা করে কোনো শক্ত কাঠ, লাঠি বা কার্ড বোর্ডের সঙ্গে কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালো করে পেঁচিয়ে দিতে হবে, যাতে জায়গাটা সোজা থাকে। অনেক সময় হাড় ভাঙার পর হাত বা পা বেঁকে যায়। চলার পথে দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু কেমন হবে। বয়স্ক মানুষের হাড়ের যত্নে কী কী মানতে হবে এসব বিষয় জানা খুবই প্রয়োজন।  
হাড় ভাঙার প্রধান কারণ: বাংলাদেশে হাড় ভাঙার অন্যতম কারণ হলো দুর্ঘটনা। যার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া গাছ বা উঁচু দালান থেকে পড়ে যাওয়া, কলকারখানার দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে হাড় ভাঙতে পারে। বয়সজনিত বা হাড় ক্ষয়জনিত কারণেও অনেক সময় হাড় ভাঙতে পারে। দুর্ঘটনাজনিত হাড় ভাঙা সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। শুধু হাড় ভাঙা এবং হাড় ভাঙা ও তার আশপাশের সফট টিস্যু বা মাংসপেশিসহ ইনজুরি বা ক্ষত। দুই ধরনের ভাঙাতেই প্রাথমিক সাবধানতা ও শুরুর চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক করণীয়: শরীরের কোথাও কোনো হাড় ভেঙে গেলে সাধারণত প্রথমে তীব্র ব্যথা বোধ হয়, জায়গাটা ফুলে যায় এবং নড়াচড়া কমে বা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও শুধু এ লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এক্স-রে করলে নিশ্চিত বোঝা যায় ভেঙেছে কি-না। কোথাও ভেঙে গেলে বা আঘাত পেলে প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো আঘাতে হাড় ভেঙে গেলে ব্যথায় রোগী স্থির থাকতে চায় না। আশপাশে যারা থাকেন, তারাও অস্থির হয়ে পড়েন। কেউ আবার গিয়েই টানাটানি শুরু করে, হাড় জোড়া বা সোজা করতে চায়। কিন্তু এতে ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে। হাড় ভাঙার ক্ষতির চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে এ টানাটানি। কারণ, ভাঙা হাড় নড়াচড়া করলে ভাঙা অংশ আশপাশের মাংসপেশি, রক্তনালি ছিঁড়ে ফেলতে পারে।

ব্লান্ট ট্রমা বা শুধু হাড় ভাঙলে প্রাথমিক অবস্থায় যতটা পারা যায়, কম নড়াচড়া করানো উচিত। রোগীকে স্থির রাখতে হবে, আঘাতপ্রাপ্ত অঙ্গ বা হাত পা নাড়ানো যাবে না। কোনো অবস্থায় শক্ত করে বাঁধা যাবে না। ব্যথা ও ফোলা কমাতে বরফ দিয়ে সেঁক দেয়া যেতে পারে। এক পা ভাঙলে অন্য পায়ের সঙ্গে বেঁধে নড়াচড়া বন্ধ করে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া যায়। হাড় জোড়া বিশেষজ্ঞের কাছেও পাঠিয়ে দেয়া যায়।

অনেক সময় হাড় ভেঙে গেলে তীব্র ব্যথা নাও হতে পারে। আদতে হাড় ভেঙেছে কিনা, রোগীকে দেখে অনুমান করা দুরূহ হয়ে পড়ে। হাড় ভাঙার পরও স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে পারছেন বলে অনেকেই অবহেলা করে, তখনই হাসপাতালে যান না কিংবা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। যার পরিণাম হয় খুব খারাপ। দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা করালে যত তাড়াতাড়ি হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা থাকে, দেরি করলে সেটি ক্ষীণ হয়ে যায়। এমনকি হাড় ঠিক জায়গায় জোড়া না লেগে বাঁকাভাবে জোড়া লাগতে পারে বা জোড়া নাও লাগতে পারে। সারা জীবনের জন্য তখন ভোগান্তি সহ্য করতে হবে।
বয়স্ক মানুষের কোমর ভাঙা বা হিপ ফ্র্যাকচার  হলে যেভাবে  প্রতিরোধ: বয়স্কদের হাড় ভাঙার একটি বড় কারণ অস্টিওপোরোসিস। অস্টিওপোরোসিসেরও অনেক কারণ আছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। সাধারণত ৫০ বা তার বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। মেয়েদের মেনোপজের পর হঠাৎ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এ কারণে হাড় হয়ে যায় পাতলা এবং ভঙ্গুর। এ রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো সারা জীবন সক্রিয় থাকা, নিয়মিত শারীরিক ব্যয়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। যাদের ঝুঁকি আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্টিওপোরোসিসরোধী ওষুধ দেয়া যায়। ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
তরুণ বয়স থেকেই হাড়ের যত্ন নিতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। 

বয়স্কদের ফিমার হাড়ের নেক মানে কোমরের হাড় বা তার আশপাশ ভেঙে যায়। সুস্থ মানুষ দাঁড়ানো বা হাঁটা অবস্থায় অথবা সামান্য একটু চোট খেয়ে মাটিতে পড়ে কোমর ভেঙে ফেল। ধরা হয় যে, আছাড় খেয়ে বা পড়ে ভেঙে গেছে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাড় ভেঙে তারপর বৃদ্ধরা পড়ে যান। কোনো কোনো সময় অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যায় বা ফেটে যায়।

বয়স্কদের হাড়ের যত্ন: দেশের মানুষের গড় আয়ু যেমন বাড়ছে, তেমনি বয়স্কদের হাড় ভাঙার সংখ্যাও বাড়ছে, যার মধ্যে ফিমারের নেক ফ্র্যাকচার বা কোমরের হাড় ভাঙা অন্যতম। এ হাড় ভাঙলে শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়। আবার জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ অস্ত্রোপচার বিধায় অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন যে অপারেশন করে যদি উপকার না পাওয়া যায়। তবে অপারেশন করলে রোগীরা দ্রুতই হাঁটতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বয়স তেমন কোনো বাধা নয়।
তবে আমাদের বৃদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই হাড়ের যত্ন নেয়া উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবারই হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি কমতে থাকে। অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা আজকাল বেড়েছে। এ সমস্যায় হাড়ের ঘনত্ব যায় কমে, ফলে সহজেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। কৈশোর থেকে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এতে হাড়ের শক্তি বাড়ে। ২০ বছরের কাছাকাছি বয়সেই হাড়ের ঘনত্ব নির্ধারিত হয়ে যায়। তরুণ বয়স থেকেই তাই হাড়ের যত্ন নিতে হবে। যেমন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। ছোটবেলা থেকেই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থায়, স্তন্যপান করানোর সময় এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নারীদের বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম খেতে হবে। পাশাপাশি এ সময় প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি বড়ি খেতে হবে। 
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক 
খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status