শেষের পাতা
বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত
নুরুল আমিন, চুনারুঘাট থেকে
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন বাল্লা স্থলবন্দর প্রাথমিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের স্থলবন্দর কার্যকর, অকার্যকরের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি এ সুপারিশ করেছে। সোমবার (১০ই ফেব্রুয়ারি) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ কমিটি নির্ধারিত স্থলবন্দরগুলোর সরজমিন পরিদর্শন করার পর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উপস্থাপন করে। সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের আমলে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা রাষ্ট্রের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য যেটি মঙ্গলজনক হবে সে সকল স্থলবন্দরগুলো সচল রাখা হবে। বাল্লা স্থলবন্দরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম না থাকা এবং রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক না হওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করা হয়। দেশের ২৩তম বাল্লা স্থলবন্দর। এখানে সরকারের ৪৯ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। মূলত সরকারি অর্থ লুটে নেয়ার জন্যই বাল্লা স্থলবন্দরের নাম করে অপ্রয়োজনীয় কাঠামো নির্মান করেছে প্রভাবশালী মহল। এতে সরকারের অপচয় হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাল্লা স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৬ মাস আগে। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাল্লা স্থলবন্দর। এটি বাংলাদেশের ২৩তম স্থল বন্দর যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারত মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি, ইমিগ্রেশন -চেক পোস্টসহ নানান সুবিধা সম্বলিত একটি স্থলবন্দর।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে হবিগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত-বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট এলাকায় ১৩ একর জমির ওপর ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাল্লা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্মাণকাজ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। সরকার প্রাথমিকভাবে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর ২০২১ সালের ৭ই অক্টোবর বন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, উভয় দেশে স্থলবন্দের নির্মাণকাজ সমানভাবে এগিয়ে গেলে ২০২৪ সালের মধ্যেই বন্দর চালু করা যাবে। কিন্তু বাল্লা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা সরকার প্রহড়মুড়া ভারতে স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মিত না হওয়ায় বাল্লা স্থলবন্দরের সুফল কবে নাগাদ ভোগ করা যাবে তা নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধে। ১৯৫১ সালে বাল্লা শুল্ক স্টেশন চালু হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হয়।
২০১২ সালের ১১ই জুন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোর্ট এলাকাটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ওই এলাকায় স্থলবন্দর করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত হন। এরপর বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। কিন্তু ভারত অংশে ছিটেফোঁটা কাজও শুরু হয়নি।
কেদারাকোর্ট এলাকায় প্রায় ১৩ একর জমির উপর বাল্লা স্থল নির্মানের লক্ষ্যে বন্দরের জমি অধিগ্রহণ শেষে অবকাঠামো তৈরীর করা হয় কিন্তু দৃষ্টিনন্দন সেই স্থলবন্দরটি ১৬ মাস অতিবাহিত হবার পরও চালু না হওয়ায় বর্তমান সরকার বাল্লা স্থলবন্দর স্থগিতের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।