শেষের পাতা
এমসি’র ঘটনায় সিলেটে উত্তাপ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার
ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় সিলেটে উত্তাপ চলছে। শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেছে ছাত্রদল। অন্যদিকে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে ছাত্রশিবিরের নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মিছিল হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মহানগর ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে নগরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে; বুধবার মধ্যরাতে এমসি কলেজের ১ম ব্লকের ১০১ নম্বর কক্ষে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদকে বেধড়ক মারধর করেছে শিবির কর্মীরা। আহত রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- কলেজ ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২ জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে রিয়াদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনার পর রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে রিয়াদকে। রিয়াদ এমসি কলেজ তালামীযে ইসলামিয়ার কর্মী। প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশ জানিয়েছে- ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো পক্ষই এজাহার দাখিল করেনি। এমসি কলেজ তালামীযের সভাপতি আহবাব হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পট পরিবর্তনের পর থেকে এমসি’র ছাত্রাবাস ছাত্রশিবিরের দখলে রয়েছে। ছাত্রলীগ চলে যাওয়ার পর শিবির ছাত্রাবাস দখলে নেয়। রিয়াদের ওপর হামলার পর শিবির কর্মীরা ছাত্রাবাসেই রয়েছে। তাদের ভয়ে তটস্থ আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজ অধ্যক্ষ শক্ত অবস্থান না নিলে হোস্টেলে শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ হয়ে উঠবেন বলে জানান তিনি। রিয়াদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, গুরুতর আহত অবস্থায় রিয়াদকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও স্বস্তি নেই। নজরদারি করছে শিবির কর্মীরা। এ কারণে তারা গতকাল সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রিয়াদকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। রাতে তাকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হতে পারে। রিয়াদের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতে সিলেট নগর উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল। রাত ৮টার দিকে কিছু সংখ্যক যুবক হাতে মশাল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ছাত্রলীগ ও তালামীযের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে স্লোগান দেয়। ১০-১৫ মিনিট অবস্থানের পর ওই যুবকরা চলে যায়। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। রাত ৯টার দিকে ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর তারা সমাবেশ করে। সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাজী দিনার আহমদ বলেন- যারা ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরাচ্ছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাতে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের ও সাধারণ সম্পাদক দিনারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে আহত ছাত্রকে দেখে আসেন। এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় একটি টিমও তাদের সঙ্গে ছিল। এ সময় তারাও অভিযোগ করেন হাসপাতালে নানাভাবে আহত ছাত্রকে চাপের মুখে রাখা হয়েছে। রাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট মহানগরের নেতারা আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। এ সময় তারা আহত ছাত্র রিয়াদকে দেখে আসেন। পরে সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ বলেন- ‘কোনো তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় দেয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক।
বিশেষত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী, যারা ইতিমধ্যেই শিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার নির্দেশ দান ও প্রতিপালনের ঘটনায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন ও হচ্ছেন। তারা এ ঘটনায় যেভাবে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। একে তিনি ’২৪-এর ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ বলেও অভিহিত করেন। তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদেরকে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।’ এদিকে কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সিলেট এমসি কলেজে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ওপর অন্যায়ভাবে দায় চাপানো ও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্রের ওপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু সহ নেতৃবৃন্দ। এদিকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ঘটনায় কলেজ প্রশাসন থেকে ইসলামী ইতিহাসের অধ্যাপক হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যদের আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ আবুল আনাম মোহাম্মদ রিয়াজ। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত
ছাত্রলীগের প্রেতাত্তা এই আদু ছাত্রদল