বাংলারজমিন
ঘোড়া-মহিষের গাড়ি জুগিয়েছে বৈশাখী আনন্দ
পালকি সাপুড়ে ও লোকজ মেলা অনন্য
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার“ও কি গাড়িয়াল ভাই, কতো রবো আমি পন'পানে চাইয়ারে”... গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের এমন গান স্মরণ করে দেয় মহিষ আর ঘোড়ার বাহনে। মাথায় সুতি রঙিন গামছা। হাতে মহিষ তাড়ানোর ছোট লাঠি। কালো রঙের এক জোড়া মহিষ। কাঠ-বাঁশের তৈরি গাড়ি। কণ্ঠে অবলীলায় গ্রামবাংলার গান। মেঠোপথের গায়ের ধেঁয়ে চলা। রাখালের পাশে বসা কয়েকজন সহযাত্রী। ধিকে ধিকে চলছে গ্রামের পর গ্রাম। দূর থেকে ভেসে আসছে গাড়ির চাকার কিচির-কিচির শব্দ। এমন চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়লো এ নববর্ষের প্রথম দিনে। এমন আয়োজন ছিল মধুপুর উপজেলা প্রসাশনের বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে। গাড়িয়ালের স'ানে ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোস্তফা হোসাইন ও থানার ওসি ইমরানুল কবির। মাথায় গামছা বেঁধে রাখালের গাড়িতে বসে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন, উপজেলা স্বাস'্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত বাংলা নববর্ষের উদ্যাপনের কথা। গত সোমবার উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত নববর্ষের ওই অনুষ্ঠান সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। মুক্তমঞ্চে জাতীয় সংগীত ও “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” বৈশাখী এ গানের মধ্যদিয়ে নববর্ষের কর্মসূচি শুরু হয়ে লোকজ মেলার উদ্বোধন হয়। নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মাথায় গামছাবাঁধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়ার নেতৃত্বে ঘোড়া, মহিষের গাড়ি, পালকিসহ আনন্দ শোভাযাত্রা হয়ে আনারস চত্বর প্রদক্ষিণ করে পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। আয়োজন ছিল লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দিনব্যাপী এমন নানা কর্মসূচিতে উদ্যাপিত হয়েছে বাংলা বর্ষবরণের পহেলা বৈশাখ।
হারিয়ে যেতে বসা এমন দৃশ্য নববর্ষের আয়োজনে আসা সবাইকে আনন্দে দারুণ মাতিয়েছে। হাসিমাখা মুখে বর্ণীল ছড়িয়েছে উপজেলা ক্যাম্পাস জুড়ে। আগের দিনের গ্রামীণ ঐতিহ্যে মেতে উঠে ছিল সকালের কচি রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব বয়সী মানুষেরা। এ ছাড়া আয়োজনে বাড়তি আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে জেলে তাঁতীদের নানাপর্ব। মাথায় গামছা পরে কাঁধে জাল-জালি, কোমড়ে খালই, চাক, বরশী। কৃষকের কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল, লোকজ মেলা, গণনাটক ও নাগর দোলা। এমন দৃশ্য জানান দেয় বাংলা আর বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির কথা।
বাঙালির সকালের খাবারো যেন হুবহু। পানতা, কাঁচা মরিচ। ইলিশ, আলুভর্তা, পাট শাকসহ নানা খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পাসের উঠোন জুড়ে বসে ছিল নানা পণ্যের দোকান। পসরা সাজিয়ে ছিল নানা জাতি গোষ্ঠীর ব্যবহার্য জিনিসপত্রের। মাটির জিনিসপত্র, কাপড় পোশাকের দোকানও ছিল দর্শনীয়।
এদিকে বিকালে লোকজ মেলা ছিল সকল বয়সের লোকজনে সমাগম। ১৩টি স্টলে বসে ছিল পসরা সাজিয়ে। মেলা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মঞ্চায়িত গণনাটক ‘সিট খালি আছে’ দারুণ উপভোগ্য ছিল। মধুপুর শিল্পকলা একাডেমি, মধুপুর নৃত্যাঙ্গন সংস'া ও স'ানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় নাচ ও গানের আয়োজন ছিল।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনও নববর্ষের আয়োজন করে। উপজেলা বিএনপি সকালে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করে থানা মোড় ঘুরে আসে। উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সরকার, সহসভাপতি এম রতন হায়দার এ সময় বক্তব্য রাখেন। শোভাযাত্রায় তাদের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে।