বাংলারজমিন
সরাইল মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। উদ্বোধনের ২১ মাস পরও ঠিকাদার মসজিদটি হস্তান্তর করতে পারছেন না। অগণিত সমস্যায় পড়েছেন ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম আর মুসল্লিরা। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী, কাজের মানও ধীরগতি ছিল সর্বত্র আলোচনায় মুখর।
জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলা সদরে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিজনেস সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল (জয়েন্ট ভ্যাঞ্চার)। শুরুতে টেন্ডার ছিল ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু ৬ বছরেও কাজটি শেষ করতে পারছেন না ঠিকাদার। সংশোধনের মাধ্যমে দরপত্রের চুক্তিমূল্য করেছেন ১৪ কোটি টাকা। অনেকটা বল প্রয়োগ করেই সমগ্র দেশের সঙ্গে ২০২৩ সালের ৩০শে জুলাই লোক দেখানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে নামাজ আদায় করেন উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন। এর ফাঁকে ইমাম মুয়াজ্জিনের নিয়োগপ্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়। উদ্বোধনের ২১ মাস পরও মসজিদটির নির্মাণকাজ কাগজপত্রে উপজেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না ঠিকাদার। এখানো বিদ্যুতের মিটার সংযুক্ত হয়নি। লিফট নেই। পানির লাইন নেই। প্রয়োজনীয় মোটর বসানো হয়নি। ওজু গোসল করা ও প্রসাব-পায়খানার ব্যবস্থা নেই। শেষ হয়নি ইমাম মুয়াজ্জিনের থাকার জায়গা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সরবরাহকৃত ৬০ লাখ টাকার আসবাবপত্র ৪ মাস ধরে পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়।
এ ছাড়াও কার্যাদেশের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের মার্বেল পাথরের পরিবর্তে ফ্লোর করা হয়েছে আর্টিফিসিয়াল টাইলস্ দিয়ে। আলমিরা-বুকসেলফে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের কাঠ। দরজার কাঠ ছিটকারিসহ অন্যান্য পার্টসগুলো মানসম্মত নয়। সরবরাহ করেছেন অত্যন্ত নিম্নমানের গ্লাস, ফিনিংস ও কার্পেট। যে কয়টা ল্যাট্রিন করা হয়েছে সবগুলোতেই জমে থাকে পানি। এক বছর আগে জেনারেটর এনে ফেলে রেখেছেন। মিনারে মাইক ফিটিং থাকলেও নিষ্ক্রিয়। মসজিদের ভেতরের স্পিকারগুলো চালু হয়নি। প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ-লোকজনের হুইল চেয়ার নিয়ে উঠার সিঁড়ির ব্যবস্থাও নেই। মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রবেশদ্বারে ঘাস লাগিয়ে চারিদিকে এসএস দ্বারা বেরিকেড দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারের তত্ত্ব্বাবধায়ক মো. আবুল হোসেন বলেন, গত ৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে উপজেলা প্রশাসনের একটি গ্যাস লাইন ব্যবহার করে শ্রমিকদের রান্নার কাজ করছেন। এক টাকাও বিল দেননি তারা। এটি আমাদের নয়, ঠিকাদারের বিষয়। পেশ ইমাম মুফতি মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, নামাজ আদায় ও ইবাদতের জন্য পাকপবিত্রতা অর্জনের ব্যবস্থা মসজিদে নেই। এজন্য মুসল্লিদের অনেক কষ্ট হয়। আমার থাকার কক্ষগুলোর অনেক কাজ বাকি। আমি ভাড়া বাসায় থাকি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বারবার চেষ্টা করেও ঠিকাদারের দেখা পাচ্ছি না। পরিষদ ও প্রশাসনের তহবিলের টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে নামাজ আদায়ের কাজ চলমান রেখেছি। ঈদের নামাজে মাইক ভাড়া করতে হয়েছে।
জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব জেনারেটর ও হস্তান্তরের বিষয় এড়িয়ে গেলেও সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদার মেক্সিমাম বিলই নিয়ে গেছেন। বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগ দেখবেন। ২-১ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন অর্থ খরচ করে সাময়িক সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো আমাকে জানাননি। তবে সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। ঠিকাদার নিচ্ছেন না। আমরা বলছি প্রিপ্রেইড সংযোগ নেন। ঠিকাদার নিবেন না। এই জায়গায় আটকে আছেন।