শেষের পাতা
১২০ নয়, ২৩৮ কোটি টাকা ব্যাংকে জামানত রেখেছেন ফারুক
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
১২০ কোটি টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ- এমন সংবাদে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় ক্রিকেট অঙ্গনে। আসেলই কি তাই? যার হাতে বিসিবিকে দুর্নীতিমুক্ত করার দায়িত্ব তিনিই এমনটা করেছেন? তবে গতকাল জানা গেলে ভিন্ন সংবাদ। ১২০ কোটি নয়, ২৩৮ কোটি টাকার এফডিআর ফারুক আহমেদ স্থানান্তর করেছেন ১৩টি ভিন্ন ব্যাংকে। বিসিবি’র আগের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এই টাকাগুলো রেখেছিলেন দুই-তিনটি ব্যাংকে। যেখান থেকে খুব একটা লভ্যাংশ পাচ্ছিলো না বিসিবি। যে কারণে নতুন সভাপতি বেশি লাভের আশায় ২৩৮ কোটি টাকা ১৩টি ভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করে রেখেছেন। এ নিয়ে গতকাল বিসিবি’র পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। যে যে ব্যাংকে রাখা হয়েছে সেগুলোর স্টেটম্যান্ট পাঠানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনকে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘১২০ কোটি নয়, প্রায় ২৩৮ কোটি টাকার এফডিআর আমরা ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে রেখেছি। যেখান থেকে আমরা অধিক মুনাফা পাচ্ছি। পাশাপাশি এই ব্যাংকগুলো আমাদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে স্পন্সর করছে।’ তবে অভিযোগ রয়েছে অন্য পরিচালকদের পাশ কাটিয়ে নির্বাহী ক্ষমতা বলে কাজটি করেছেন ফারুক আহমেদ। এ বিষয়টি নিয়েও দ্বিমত করেছেন ফারুক। তিনি জানিয়েছেন বোর্ডের ফিন্যান্স কমিটি চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা এবং টেন্ডার ও পারচেজ কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনামের স্বাক্ষরেই বিসিবি’র ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিসিবি সভাপতি ব্যাংকিং বিষয়ে স্বাক্ষর প্রদানকারী নন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফাহিম সিনহা বলেন, ‘আমাদের বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন। আমরা তার কথা শুনেছি, তবে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়নি। হলে হয়তো আরও কিছু পরামর্শ দেয়া যেতো আমানত রাখার ক্ষেত্রে। তবে বিসিবি’র স্বার্থে এফডিআর বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা অনৈতিক কিছু নয়। সত্যি কথা বলতে আমাদের আলোচনাগুলো অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাইরে কথা বলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।’ তবে এ বিষয়ে মাহবুবুল আনামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কয়েকদিন ধরে জাতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশে বোর্ডের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নজরে এসেছে। বিসিবি’র মতে এসব প্রতিবেদন ভুল তথ্যভিত্তিক এবং বোর্ড ও এর সভাপতি ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে এফডিআরের টাকা স্থানান্তরের ব্যাখ্যাও দিয়েছে বোর্ড। বিসিবি বলেছে, ‘গত ২০২৪ সালের আগস্টে বিসিবি’র সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ফারুক আহমেদ বিগত বছরগুলোর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণআন্দোলনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বোর্ডের আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন।’ ‘এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিসিবি তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ‘গ্রীন’ ও ‘ইয়েলো’ জোনভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বোর্ড আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিসিবি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং এরমধ্যে ২৩৮ কোটি টাকা গ্রীন ও ইয়েলো জোনভুক্ত ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করে। অবশিষ্ট ১২ কোটি টাকা বিসিবি’র বিবিধ পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।’ প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বোর্ড সভাপতি কোনো একক সিদ্ধান্তবলে বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাংক পরিবর্তনের অথবা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না। পার্টনার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিসিবি’র আর্থিক বিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষরপ্রদানকারী হিসেবে দু’জন বোর্ড পরিচালক আছেন বোর্ডের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা, টেন্ডার ও পারচেজ কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এসংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরদাতা নন। বিসিবি অবগত যে, কিছু সুবিধাভোগী মহল এবং ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, যারা ক্রিকেট প্রশাসনের ভিতরেও সক্রিয়, বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিবি’র আর্থিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করার এটিও অন্যতম কারণ। সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তার অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকের হাতে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিসিবি’র আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ প্রতিযোগিতামূলক মুনাফা প্রাপ্তির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বিসিবি’র স্থায়ী আমানত থেকে ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।’ ‘গত ছয় মাসে বিসিবি তার বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার স্পন্সরশিপ পেয়েছে। এ ছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিসিবি’র অংশীদার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা এই আর্থিক সম্পর্কগুলোর দৃঢ়তা ও গভীরতা নির্দেশ করে। বিসিবি সর্বোচ্চ মানের আর্থিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রকৃত ও তথ্যভিত্তিক উৎস থেকে তদন্ত ও পর্যালোচনাকে স্বাগত জানায়।’