বাংলারজমিন
দেওয়ানগঞ্জে যমুনার ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অসময়ে যমুনার ভাঙন চলছে অবিরত। নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে এলাকাবাসী। উপজেলার বড়খাল থেকে চরডাকাতিয়া হয়ে খোলাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙছে ক্রমাগত। এতে অর্ধশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিলামে তুলে ভেঙে ফেলা হয়েছে নদীর পাড় ঘেঁষা চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন হুমকিতে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সরজমিন দেখা যায়, যমুনা নদীর বামতীর ঘেঁষে প্রচণ্ড স্রোতে একের পর এক বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরগুলোও ঢলের পানির স্রোতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। চর ডাকাতিয়ার সালমান হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙনে বিলীন হয়েছে নদীর পশ্চিম খানপাড়া ও আদর্শ গ্রাম নামে দুইটি গ্রাম। উপজেলা ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা যায়, বিলীন হয়ে যাওয়া ওই দুইটি গ্রামে অন্তত চার হাজার পরিবারের বসতি ছিল।
এ ছাড়া, যমুনায় ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, মসজিদ ও মাদ্রাসা। হুমকির মুখে রয়েছে টাকিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্র্যাক স্কুল, স্লুইসগেট, এলজিইডি সড়ক, খানপাড়া জামে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, নুরানি কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসা ও একটি মন্দিরসহ প্রায় তিন হাজার পরিবারের বাড়িঘর ও বসতভিটা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক যুগ ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হলকারচর, কেল্লাকাটা, ডাকাতিয়াপাড়া। এ ছাড়াও বড়খাল, বওলাতলী , চরডাকাতিয়াপাড়া ও খোলাবাড়ি এলাকার অধিকাংশ ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। ভিটেমাটি আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। একসময় যাদের সব ছিল আজ তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে, রেলের সরকারি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে। জীবন-জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর কাটছে তাদের দিন।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতিমধ্যে ওই স্থানে ১১ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।
চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, নদীর তীব্র স্রোতের কারণে অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চিকাজানীর মণ্ডল বাজারটিও ভাঙনের কবলে পড়বে।
নদী ভাঙন বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান বলেন, ওই স্থানে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আপাতত নেই। ওই স্থান নিয়ে একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। সেই স্টাডি পাস হলে প্রজেক্ট গ্রহণ করা হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ। আপাতত ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।