ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

সাবেক মন্ত্রীর ছায়ায় অঢেল সম্পদ গড়েন ওসি রবিউল

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
৯ মে ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

রংপুর তাজহাট থানার সাবেক ওসি রবিউল। বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের দলগ্রামে। বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যার পলাতক আসামি। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানের সুপারিশেই হয়েছেন অল্প সময়ে ওসি। মাদক পাচারে সহায়তা, ঘুষ, দুর্নীতি ছিল তার ব্যবসা। অবৈধ আয়ে মালিক হয়েছে ৫ বছরে ২০ কোটি টাকার উপরে। ওসি বরিউলের বাবা আব্দুল খালেক ছিলেন রংপুর জাহাজ কোম্পানি মোড়ে মিতালী রেস্টুরেন্ট কর্মচারী। ১৫ বছর আগে রবিউলের ছিল না তেমন সম্পদ। ছিল সম্পদ একটি চালা ঘর। মন্ত্রী নুরুজ্জমান, তার পুত্র রাকিবুজ্জামান ও এপিএস মিজানের সহায়তায় করেছেন অবৈধ কারবার। মানবজমিন’র সরজমিনে তার নিজ গ্রামে গেলে বেরিয়ে আসে নানান তথ্য। জানা গেছে, ওসি রবিউল ছাত্র জীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা। ছাত্রলীগের সুবাধে আ’লীগ সরকারের আমলে চাকরি পান এসআই পদে। প্রথমে ছিলেন রংপুরের হারাগাছ থানায়। আ’লীগের ক্ষমতা খাটিয়ে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মাদক পাচারের পয়েন্টে হারাগাছ দাপিয়ে বেড়াতেন। এ রুটে মাদক পাচারে ছিলেন জড়িত। মাদকে আয় করেন বিপুল পরিমাণের টাকা। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সুপারিশে পদোন্নতি পেয়ে ওসি তদন্ত হন রংপুর মেট্রো পরশুরাম থানার। পরশুরাম থানা ছিল গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী মাদক পাচারের রুট। এ রুটে মাদক পাচারের সুযোগ দিয়ে প্রতি মাসে আয় করতেন ১০/১৫ লাখ টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই থানার নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক কর্মকর্তা। মন্ত্রীর সুপারিশে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ ওসি হন তাজহাট থানার। এরপর বেড়ে যায় দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাত্রা। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল নেতা-কর্মীদের ধরে এনে করতেন বাণিজ্য। জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে। এপিএস মিজানের বিশেষ স্লিপে পাচার হতো মাদক। মিজানের স্লিপ দেখলেই মাদক ছেড়ে দিতেন ওসি রবিউল। তবে গত জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর নির্যাতন করতেন রবিউল। রংপুরের তাজহাট এলাকায় ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি হন ওসি রবিউল। হত্যা মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে যান ওসি রবিউল। জানা গেছে, রবিউলের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের দলগ্রাম এলাকায়। এলাকার রহমান মাস্টার বলেন, অল্প সময়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন রবিউল। সরজমিন জানা গেছে, ওসি রবিউল দলগ্রাম কামারপাড়া জামে মসজিদের পাশে ৪ বছর আগে আলমের ৩১ শতক জমি ২৮ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। দলগ্রাম বাজারের সঙ্গে ৩ শতক জমি ক্রয় করে যার দাম ২৪ লাখ টাকা। দলগ্রাম হাড়িশা বিলে জমি ক্রয় করেছেন ১৫ বিঘার উপরে। মূল্য কোটি টাকার উপরে। এ ছাড়াও নামে-বেনামে জমি ক্রয় করেছেন আরও ৩ কোটি টাকার উপরে। ঢাকায় কয়েকটি ফ্ল্যাট করেছেন ক্রয়। এসব তথ্য দিলেন তার বাড়ির পাশে আব্বাস আলী। এ ছাড়াও তার বাড়ির পাশে আরও ২ বিঘা জমি ২৪ লাখ টকায় ক্রয় করেন। ওদিকে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল র্পূব-গেইট ৪জন মিলে প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্য জমি ক্রয় করে। এ ছাড়াও রংপুরে ক্রয় করেছেন আরও জমি। ক্রয় করেছেন বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। তুষভাণ্ডার পাশে পুকুর  ক্রয় করেন ১০ লাখ টাকায়। জানা গেছে দলগ্রাম বাজারের ভিতরে ওসি রবিউল মার্কেট ক্রয় করে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে। পুলিশের সহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে তার আরও সম্পদের খোঁজ পেয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে পুলিশের এক ওসি জানান। তিনি আরও জানান, তার দুর্নীতি করে সম্পদের হিসাব পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রেরণ করা হয়েছে। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম জানান, তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রবিউল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি সে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। তার সম্পদের তদন্তে কাজ করছে গোয়েন্দারা। এলাকাবাসী দুর্নীতিবাজ ওসি রবিউলের শাস্তি দাবি করছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status