খেলা
বাফুফে’র অনুরোধে সিএনজি মোটর সাইকেলে এসে ম্যাচ চালালেন রেফারিরা
স্পোর্টস রিপোর্টার
১০ মে ২০২৫, শনিবারপ্রায় দুই কোটি টাকা পারিশ্রমিক বকেয়া রেফারিদের। এই বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন রেফারিরা। ‘নো বিল, নো গেম’- এই কঠিন পথও বেছে নিয়েছিলেন তারা। তাদের এই আন্দোলনের মাঝেই বুধবার ফেডারেশন কাপের বকেয়া ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আগামী সোমবারের মধ্যে আরও ১৬ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলে মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন রেফারিরা। গতকাল দুপুরে মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কিংস অ্যারেনায় তিন ভেন্যুতে শেষ মুহূর্তে গিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করেন তারা। ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ এ দুই মৌসুমের প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বকেয়া রেফারিদের। বিপিএল, বিসিএল, বয়সভিত্তিক ক্লাব ফুটবল ও মহানগর লীগ কমিটির অধীনস্ত লীগগুলো ম্যাচ পরিচালনা করে এই বকেয়া বুঝে পাননি তারা। একবার শোনা গিয়েছিল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার মধ্যে রেফারিদের ফেডারেশন কাপের ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। রাত ১০টা পার হলেও রেফারিদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই ঢুকেনি। পরে জানা যায় ১৬ লাখ টাকা ব্যাংকে দিয়েছে বাফুফে।
আগামী সোমবার রেফারিদের অ্যাকাউন্ডে ঢুকে যাবে। তবে এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না রেফারিররা। কারণ বাফুফে তাদের জানিয়েছে ফেডারেশন কাপের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফেডারেরশন কাপ পরিচালনা করেছেন ২৫ জন রেফারি। কিন্তু বকেয়া আছে প্রায় ৫০ জনের। তারা পুরো ৫০ জনের বকেয়া চাইছেন। যদিও রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমান রেফারিদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপে অর্থ প্রদানের রসিদ দিয়ে গতকালের ম্যাচ এলটমেন্ট দিয়েছেন। সেই এলটমেন্টে রেফারিরা সাড়া দেননি। বাধ্য হয়েই গতকাল রেফারিদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন বাফুফের দুই সহ-সভাপতি। তাদের অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ পরিচালনা করতে রাজি হন তারা। তবে আগের দিনের এলটমেন্টে নয়।
যারা ভেন্যুর কাছে ছিলেন তারা ওই ভেন্যুর ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। কেউ মটর সাইলেকেলে, কেউ সিএনজিতে কেউবা প্রাইভেটকার ভাড়া করে ভেন্যুতে পৌঁছে ম্যাচ চালিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি জানান, সকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম আমরা। শেষ মুহূর্তে বাফুফে আগামী সোম মঙ্গলবারের মধ্যে আরো ১৬ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি লীগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা বলেছে। সবদিক বিবেচনা করে দেশের ফুটবলের স্বার্থে আমরা ম্যাচ চালাতে রাজি হয়েছি। তবে মঙ্গলবারের মধ্যে ১৬ লাখ টাকা না দিলে আমরা আরো কঠোর হবো।’ এক সপ্তাহ ধরে আলটিমেটাম দিয়ে আসছিলেন রেফারিরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো তৎপরতা ছিল না বাফুফের। রেফারিদের সঙ্গে আলোচনারও প্রয়োজন বোধ করেননি তারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেক রেফারি। তাবিথ আউয়ালের বর্তমান কমিটির কাছে যেন আরো বেশি অবহেলিত হচ্ছেন জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি বলেন, আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। ম্যাচ বয়কট ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। এমন অবস্থানে যাওয়ার পরও ফেডারেশনের কেউই আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেনি।
আসলে তাদের যোগাযোগ করার অবস্থাও নেই। ৯ই এপ্রিল সভাপতি আমাদের সাথে বৈঠকে সম্মানী প্রদানের একটা সময় দিয়েছিলেন, সেটা অতিবাহিত হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার সময় দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ বলেছিলেন, বুধবার (গতকাল) যেভাবেই হোক দেবেন। সেটা ব্যর্থ হওয়ার পরই আমরা খেলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ বিসিএল চলতি লীগের প্রথম পর্বের ৪৫ ম্যাচ, ফেডারেশন কাপ সম্পূর্ণ, চলতি বিপিএল এর প্রথম পর্বের ২০ ম্যাচের বিল একসঙ্গে পরিশোধ করার দাবি ছিল রেফারিদের।
এসব নিয়ে গতকাল বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা শেষে কথা বলেছেন তাবিথ আউয়াল।
ফর্টিজ জলসিড়িতেই ইন্টার স্কুল সিটির ফাইনাল ছিল। সেই ফাইনাল শেষে বাফুফে সভাপতি রেফারি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের ফুটবল বড় পরিবার। রেফারিরা আমাদের পরিবারের অংশ। রেফারিদের সেক্রিফাইসকে আমরা সম্মান করি। তারা অনেক সময় অর্থ দেরিতে পায়। খেলা পরিচালনায় তারা অনেক কষ্ট করে। রেফারিদের বিষয়ে আমরা সমাধানের পথে চলে এসেছি।’ রেফারিদের বকেয়া তো থাকেই, পাশাপাশি রেফারিরা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে ভেন্যুতে গিয়ে খেলা পরিচালনা করেন মাসের পর মাস। আর ফেডারেশনের দিকে তাকিয়ে থাকেন বিলের জন্য। এই বিষয়ের পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়ে তাবিথ বলেন, ‘আমরা স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে চাই। আমরা শর্টটাইম অনেক সমাধান দিতে পারি, পরে যদি সেই সমস্যাই থাকে তাহলে আর লিগ্যাসি থাকল না। আমরা রেফারিদের ফিউচ্যার পেমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছি।’ ১৬ বছর বাফুফে সভাপতি থাকা কাজী সালাউদ্দিন তাবিথ আউয়ালের ঘাড়ে এক কোটি টাকার ওপর রেফারিজ বিল বকেয়া রেখে গেছেন। তাবিথ আউয়াল ও ফাহাদ করিমরা ঘরোয়া ফুটবলে বেশ উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। নির্বাচনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো রেফারিজ কমিটি গঠন করতে পারেনি ফেডারেশন। রেফারিদের সমস্যা সমাধানে স্পষ্টত ব্যর্থ। এখন দেখার বিষয় রেফারিদের এই সংকট শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়ায়।