অনলাইন
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: অস্ত্র প্রতিযোগিতায় মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রয়াস
রঞ্জন সেন
(৯ ঘন্টা আগে) ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৫১ অপরাহ্ন

মাকিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সরকারি সফরে মধ্যপ্রাচ্যে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন এই সফরে তিনি দেশের জন্য রেকর্ড বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারবেন। পাশাপাশি তার এই সফরে আধুনিক সময়ের অন্যতম অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে চলেছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সৌদি আরবের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি, যাতে প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, হারকিউলিস পরিবহন বিমান, যুদ্ধ হেলিকপ্টার এবং পরিবহন হেলিকপ্টার কেনার ব্যবস্থা থাকবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, চুক্তির কেন্দ্রবিন্দু হবে F-15EX যুদ্ধবিমান। সৌদি আরব বর্তমানে F-15s এর একটি বৃহৎ বহর পরিচালনা করে, যার দুটি মডেল রয়েছে: কয়েক বছর আগে কেনা ৮৪টি F-15SA বিমান এবং কয়েক ডজন F-15SR মডেল, যা এখন পুরনো বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রায় এক বছর আগে, সৌদি আরব ৫৪টি F-15EX জেট কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে পুরনো মডেলের পরিবর্তে আরও আটটি স্কোয়াড্রন যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। নতুন চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব প্রায় ২০০টি F-15EX জেট কিনতে চলেছে।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে তার সাথে রয়েছেন বিশিষ্ট আমেরিকান শিল্পপতি, প্রযুক্তিবিদ এবং অস্ত্র নির্মাতারা, যার মধ্যে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক সিকোরস্কির সিইও পল লেমো এবং বোয়িং সিইও কেলি অর্টবার্গ। সফরে , দুই সিইও কুয়েত, বাহরাইন, কাতার এবং ওমানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে বিমান, হেলিকপ্টার এবং অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে আলোচনা করবেন। F-15EX এই আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
F-15EX হল মার্কিন সামরিক বাহিনীর পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, যা কাতারি বিমান বাহিনীর জন্য F-15QA নামে তৈরি করা হয়েছে।
বোয়িং-এর এই নতুন বিমান তৈরির পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে, পেন্টাগন দ্রুত এটিকে F-15 পরিচালনাকারী তিনটি মার্কিন বিমান বাহিনীর ডিভিশনের আদর্শ বিকল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই জেটটি আকর্ষণীয় উড়ান ক্ষমতা, ১৭.৫ টন অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র বহন করার ক্ষমতা এবং এর অত্যাধুনিক রাডার সিস্টেমের জন্য পরিচিত। এটি দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং অন্যান্য বিমান এবং স্থলভিত্তিক অস্ত্র ব্যবস্থায় তথ্য দিতে পারে।
ইসরাইলও আগামী কিছু দিনের মধ্যে F-15EX জেটের প্রথম স্কোয়াড্রন কেনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে।
ইসরাইল আগামী কয়েক বছরে প্রায় ২৫টি বিমান পাবে, যার দাম $২.৫ বিলিয়ন, প্রতি জেট $১০০ মিলিয়ন।
নতুন এই F-15EX যুদ্ধবিমান সামরিক বিমান চলাচলে বিপ্লব আনতে প্রস্তুত। বিশ্বব্যাপী সংঘাত এবং উন্নত অস্ত্রের চাহিদার কারণে বহু দেশ F-15EX কিনতে আগ্রহী। ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ , ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ, ইসরাইল-হামাস সংঘাতকে ঘিরে উত্তেজনা এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উস্কে দিয়েছে।
F-15EX-এর জন্য বোয়িংয়ের ক্লায়েন্ট তালিকায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিশর আর কাতার। মূলত কাতার প্রথম দেশ যারা জেটটি কিনেছিল। পাশাপাশি সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন এবং ওমান সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশও এ তালিকায় রয়েছে।
ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে। তারা F-15EX জেটের একাধিক স্কোয়াড্রন কেনার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ৮৬টি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার কিনেছে তারা।
ট্রাম্প স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ক্ষেত্রেই মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সামরিক চুক্তির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র কেবল সৌদির সাথে $৬০০ বিলিয়ন থেকে $১ ট্রিলিয়ন মূল্যের বেসামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা, পর্যটন প্রকল্প এবং আরও অনেক কিছু। রিপাবলিকান বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ মনে করেন, এই সপ্তাহে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের মধ্যে অস্ত্র এবং বাণিজ্য প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারেন, যা মার্কিন শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।