ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক

নির্বাচন দেয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো দেখছে না জামায়াত

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ মে ২০২৫, সোমবার

নির্বাচন দেয়ার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি, নির্বাচন কমিশনের কিছু বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী জাতীয় নির্বাচন সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে হওয়ার মতো 
পরিস্থিতি এখনো দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ পুরো সংস্কার প্রক্রিয়া গণভোটের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বর্ধিত বৈঠকে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে, কারণ নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী নির্বাচনও একেবারে সঠিক সুষ্ঠু হবে- এমন পরিস্থিতি এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কারণ কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পাবনায় আটঘরিয়া এলাকায় জামায়াতের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কিছু মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এখনো নির্বাচনের তারিখই হয়নি, জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেজন্য নির্বাচন সংস্কার কমিটির যিনি চেয়ারম্যান আছেন, আমি তাকে ওয়েলকাম করছি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বলেন, আমি মনে করি এমন একটি ব্যবস্থা আমাদের করা উচিত, যে ব্যবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু, সঠিক হবে, তার জন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে। এর জন্য যদি কঠোর হতে হয়, তাই হতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হলে তাই করতে হবে। 

নির্বাচন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে কিছুটা ঘাটতি আছে মন্তব্য করে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, জেনে অথবা না জেনে, কিছু কিছু পদক্ষেপ এমন আছে, যেখানে নিরপেক্ষতার অথবা দক্ষতার অভাব আছে। নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু হয় ও সন্ত্রাসমুক্ত হয়, সেটাই আমাদের একটি প্রধান লক্ষ্য। 

তাহের বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যেটা রয়েছে, এটাই অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা অনেকটা এভাবেই চিহ্নিত সকল মানুষের কাছে যে, সেখানেই বেশি করাপশন (দুর্নীতি)। এজন্য আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন ও তার আওতাধীন ওয়াচডগের মতো কাজ করবে। একটি টাস্কফোর্স থাকবে এবং সেই টাস্কফোর্স দুর্নীতিগুলোর উপরে কাজ করবে। এটা দেখে তারা একটি প্রাইমারি পানিশমেন্টের আওতায় আনতে পারবে। যেমন চাকরিজীবী হলে সাসপেন্ড করা, শোকজের আওতায় আনা ইত্যাদি। ওনারাও আমাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা আরেকটি প্রস্তাবের উপরে জোর দিয়ে আলোচনা করেছি। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা গেলে স্বৈরাচার রোধ করা যাবে। একজনের হাতে যেন সব ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয়। সেজন্য আমরা প্রস্তাব করেছি যেকোনো একজন ব্যক্তি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী এবং সেই দলের প্রধান থাকতে পারবে না। একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। যিনি দলের প্রধান থাকবেন তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। 

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তাহের বলেন, বিগত ১৫ বছর নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের ক্রুটি-বিচ্যুতির জন্য খুব বেশি শাস্তির সিস্টেম নেই। নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন, তাদেরকে চাকরিকালীন সময়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল যাতে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে এবং তদন্ত করতে পারে। আমরা প্রস্তাব করেছি আইনের সংশোধন করে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।  

সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা অনেক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। অনেক বিষয়ে ইতিমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকেও কিছু বিষয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব এসেছে, যা আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজ শুধু কমিশনের নয়, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোরও দায়িত্ব। 
আমরা একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চাই জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা আগামী দুই-একদিনের মধ্যে শেষ করতে পারলে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে পারবো। আমরা বিশ্বাস করি, মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ধাপে ধাপে ঐকমত্যের পথ খোলা আছে। 

বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তারা হলেন- দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।
 

পাঠকের মতামত

আপনাদের তো এমন ই মনে হবে কারণ আপনাদের তো নিবন্ধন, প্রতীক কোনটাই নেই।

AA
১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ১:২৯ পূর্বাহ্ন

মোনাফেক দলটি আবারও একটি ঐতিহাসিক ভুল করতে চায়।

এজটি
১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ১:১২ পূর্বাহ্ন

যে দলের নিবন্ধন নাই, মার্কা নাই, ৯৮.৭৫% আসনে জামানতের গ্যারান্টি নাই, সেই দল নির্বাচন চাইবে কোন দুঃখে? ৮৫ বছর রাজনীতি করার পর যে দলের অবস্থান নিবন্ধন হীন, মার্কা হীন, জামানত হীন, রাজনীতি সেই দলের উদ্দেশ্য নয় বরং রাজনীতির আড়ালে ধর্ম ব্যবসা ই মুল উদ্দেশ্য ।

সিরু
১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status