ঢাকা, ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ঠাঁই হলো কারাগারে

নেশা-নারীতে ডুবে থাকতেন নোবেল

স্টাফ রিপোর্টার
২১ মে ২০২৫, বুধবার
mzamin

মাইনুল আহসান নোবেল (৩১)। জন্ম গোপালগঞ্জ জেলায়। বাবা ছিলেন পরিবহন ব্যবসায়ী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি-বাংলার গানের শো ‘সারেগামাপা’র মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পান। তার গায়কী দুই বাংলার মানুষের মন জয় করেছিলেন। দর্শকের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। দুই দেশেই তার বিপুল ভক্ত তৈরি হয়েছিল। রাতারাতি খ্যাতি পাওয়া এই শিল্পী দ্রুতই আগাতে থাকেন। দেশে-বিদেশে একাধিক স্টেজ শো’তে অংশগ্রহণ করেন। অনেক সময় তিনি স্টেজ শো’তে এতটাই ব্যস্ত থাকতেন শিডিউল পাওয়াও কষ্টকর ছিল। অনুষ্ঠানে নিতে হলে বড় অঙ্কের টাকাও গুনতে হতো আয়োজকদের। কিন্তু মাদকাসক্তি তার এই জনপ্রিয়তায় ভাটা ডেকে আনে। মাদকাসক্ত হয়ে গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। খুব কম অনুষ্ঠান আছে যেটা তিনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ করেছেন। হামলা-ভাঙচুর মারধর করা তার নিয়মিত ঘটনা ছিল। শুধু নেশায় ডুবে থাকতেন এমনটি নয়। নেশার পাশাপাশি তার নারী নেশা ছিল চরম। একাধিক মেয়েদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়েও করেছেন একাধিক। তবে কোনো সংসার টিকেনি। এরমধ্যে নারী এয়ার হোস্টেস, মডেল, গানের শিল্পী, গানের ভক্ত, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার খারাপ আচরণের জন্য তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিল পরিবার। 

সূত্রগুলো বলছে, কয়েক ডজন নারীর সঙ্গে নোবেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এসব কথা নোবেলের আশেপাশের সবাই জানতো। এ ছাড়া ভয়ঙ্করভাবে নেশায় ডুবে থাকার বিষয়টিও অপেন সিক্রেট ছিল। পরিবার-পরিজন অনেকেই চেষ্টা করে তাকে ওই পথ থেকে সরাতে পারেননি। 

শুধুমাত্র নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে নোবেলকে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি। আর সর্বশেষ এক নারী শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে ডেমরার একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করছিলেন নোবেল। ওই বাসায় তাকে নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সেই ভিডিও তার বাবা-মা দেখতে পান। প্রথমে নিজেরা উদ্ধারের চেষ্টা করলেও পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন দিলে ডেমরা থানা পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং নোবেলকে আটক করে। পরে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এদিন দুপুরে নোবেলকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার পুলিশ পরিদর্শক মুরাদ হোসেন তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদের আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ডেমরা থানার মামলায় ২৫ বছর বয়সী ওই নারী শিক্ষার্থী বলেছেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং ইডেন মহিলা কলেজে লেখাপড়া করতেন। ২০১৮ সালে নোবেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর মোবাইল ফোনে প্রায়ই তার সঙ্গে নোবেলের কথা হতো। গত বছরের ১২ই নভেম্বর মোহাম্মদপুরে তার সঙ্গে দেখা করেন নোবেল। একপর্যায়ে তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরা থানা এলাকায় তার বর্তমান ঠিকানার বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে চলে যাওয়ার কথা বললে নোবেল তার দুই তিনজনের সহায়তায় তার একটি কক্ষে আটকে রেখে তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নোবেল তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন। পরে তাকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখে। তার কথা মতো তার বাসায় না থাকলে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। তাই ভয় পেয়ে ভুক্তভোগী আর কাউকে জানানোর সাহস পাননি। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে প্রায়ই মারধর করতেন। পরে নোবেল তার সহযোগীদের সহায়তায় সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করে আরেকটি কক্ষে আটকে রাখেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে সেই ভিডিও দেখে ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা তাকে চিনতে পারেন। পরে তার বাবা-মা তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল দিলে ডেমরা থানা পুলিশ গিয়ে তাকে সোমবার উদ্ধার করে। মামলায় নোবেল তাকে আটকে রেখে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন। ভুক্তভোগী নারী ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তাকে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। 

২০২৩ সালে নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি পুলিশ। প্রতারণার অভিযোগে এক মামলায় তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার সাবেক স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ তার মাদকাসক্তির পেছনে এক নারী এয়ার হোস্টেস জড়িত থাকার কথা বলেছিলেন। সালসাবিল মাহমুদ ডিবিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নোবেলের মাদকাসক্তির পেছনে কয়েকজন শিল্পী ও ইন্টারন্যাশনাল রুটে চলাচল করা বিমানের এক এয়ার হোস্টেস জড়িত। তারাই নোবেলকে মাদক সাপ্লাই দেন। 

ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল পেয়ে ডেমরার সারুলিয়ার আমতলায় নোবেলের বাসা থেকে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। পরে ওই নারী রাতেই থানায় মামলা করেন। এরপর রাত ২টায় অভিযান চালিয়ে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গ্রেপ্তারের ভয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।

 

পাঠকের মতামত

মেয়েটা এতো দিন আটক কেন তার বাবা পুলিশের সাহায্য নেন নাই। নোবেলকে ৮০ বছর জেলে রাখা উচিৎ তারপরও ভাল হবে কি না দেখার বিষয়।

আসাদ মোল্লা
২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৬:০৭ অপরাহ্ন

ছয় মাস একটা মেয়ে নিখোঁজ, কেনো আগে পুলিশ এর সাহায্য নেই নাই

Riaz
২১ মে ২০২৫, বুধবার, ১২:১৭ অপরাহ্ন

জনপ্রিয়তাকে ধারণ করতে না পারলে, কাড়ি কাড়ি টাকা হাতের নাগালে চলে আসলে কিছু কিছু মানুষের কাল হয়ে যায়। নোবেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। প্রবাদ আছে, “চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন”। তাই তাকে এটার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

শওকত আলী
২১ মে ২০২৫, বুধবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

নোবেলকে যেন কোনভাবেই ছাড় দেওয়া না হয়। ওর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

কামরুল হাসান
২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

এরা দেশের পয়জম।

মো: আবুল হাছান
২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৮:২০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status