শেষের পাতা
তিন সীমান্ত দিয়ে ৬৫ জনকে পুশইন
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
ফেনী, কুলাউড়া ও পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৬৫ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এর মধ্যে ফেনী সীমান্ত দিয়ে ৩৭ জনকে, পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে এবং কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশইন করা হয়েছে।
ফেনী সীমান্তে ৩৭ জনকে পুশইন, থানায় হস্তান্তর
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৩৭ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার ভোররাতে ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে এ পুশইন করা হয়। ফেনী সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়ন ও বিজিবি ১০ কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩৭ জনকে আটক করেন বলে জানিয়েছেন বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। বিজিবি জানায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর ও ফুলগাজী উপজেলার খেজুরিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে ৬টি পরিবারের ২৪ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বিএসএফ। এ সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে।
বিজিবি আরও জানায়, সীমান্ত দিয়ে পুশইন করানো প্রত্যেকেই বাংলাদেশর কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে প্রাথমিক ভাবে বিজিবি অবগত হয়েছে। আটক ২৪ জনের মধ্যে ১৩ জন শিশু, ৫ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ রয়েছে। আটককৃতদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, বিজিবি ফেনী ব্যাটেলিয়ন দুই উপজেলার সীমান্তে ২৬ জনকে আটক করলেও ফেনী সীমান্তের কিছু অংশের দায়িত্বরত বিজিবি ১০ ব্যাটালিয়ন আরও ১৩ জনকে আটক করেছে। তাদের ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি অবগত হয়েছেন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ফুলগাজী থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, সীমান্তে আটককৃত ২৭ জনকে বিজিবি থানায় হস্তান্তর করেছে। আপাতত তারা পুলিশ হেফাজতে আছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাগলনাইয়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ছাগলনাইয়া সীমান্তে বিজিবি’র হাতে আটক ১২ জনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ১২ জন ভারতের হরিয়ানা এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে তারা ছাগলনাইয়া থানার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমান রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে কতোজন পুশইন হয়েছেন বিষয়টি জানতে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন।
পঞ্চগড়ে বাতি নিভিয়ে ২১ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, সীমান্ত বাতি নিভিয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বুধবার রাত ৪টার দিকে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন বড়বাড়ি সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৭ এর ১০ নম্বর সাব-পিলার এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১৩ জন শিশু। পরে জয়ধরভাঙ্গা বিওপির টহল দল তাদের আটক করে। তারা সবাই বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার নাগরিক।
আটককৃতরা হলেন- খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের মাজিরগাতি এলাকার ইসরাইল ফকির স্ত্রী আলেয়া (৫৫), তার ছেলে রব্বিল ফকির (২২), পুত্রবধূ শিমলা (১৯), নাতনী আলিশা (৩), নাতি আয়ান (৩ মাস), একই এলাকার ইব্রাহিম ফকিরের স্ত্রী হেলেনা (২৭), মেয়ে রোজিনা (৮), ছেলে ইসমাইল (৫), উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের গাজিরহাট এলাকার ফরহাদ শেখের স্ত্রী স্বপ্না (২৯), ছেলে ফারজানা (১২), মেয়ে আফসানা (৯), মরিয়ম (৩), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার আশিক সরদারের স্ত্রী রোজি (৩৯), তার ছেলে রানা (১৭), মেয়ে আয়েশা (৪), একই এলাকার আজিজের স্ত্রী শিমা (৩০), মেয়ে কুলসুম (১০), ছেলে রহমান (৬), রেহমান (৫), মেয়ে আফরিন (৩) এবং ছেলে রেহমাত আলী (২)।
আটককৃতদের মধ্যে ৭ জনের বিরুদ্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে সদর থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে বাকিরা শিশু হওয়ায় তাদের কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হতে পারে। আটককৃতরা জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবত ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিল। এদের মধ্যে কেউ বাসা বাড়িতে আবার কেউ গ্যারেজে মেকানিকের কাজ করতো। পরে গত ২১শে মে ভারতীয় পুলিশ তাদেরকে গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসযোগে ২২শে মে রাত ২টার দিকে নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের নিকট হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে টিয়াপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ তাদেরকে টিয়াপাড়া-বড়বাড়ি সীমান্ত গেট দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে। বৃহস্পতিবার সকালে তারা বাংলাদেশের বড়বাড়ি এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। স্থানীয়রা তাদের দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বিজিবি’র স্থানীয় জয়ধরভাঙ্গা ক্যাম্পে খবর দেয়া হলে ক্যাম্পের টহলদল তাদের আটক করে নতুন ক্যাম্প বড়বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে যায় বিজিবি।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম বদরুদ্দোজা বলেন, নারী, ২১ জনকে আটকের পরে বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
কুলাউড়ায় ফের শিশুসহ ৭ বাংলাদেশিকে পুশইন
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, কুলাউড়া কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে ফের পুশইনের ঘটনা ঘটিয়েছে বিএসএফ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে বিএসএফ শিশুসহ ৭ বাংলাদেশিকে সীমান্তে ঠেলে পাঠায়। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, পুশইনের পর তুতবাড়ি সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর ৪৬-বিজিবি’র সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটককৃতদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
এ বিষয়ে ৪৬-বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, আটককৃতরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা তাদের কুলাউড়া থানায় হস্তান্তর করবো। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম আপছার বলেন, বিজিবি আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও গত ১৫ই মে একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশইনের শিকার হওয়া ১৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছিল।
পাঠকের মতামত
তাজ্জবের ব্যাপার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকা ২৬ লাখ অবৈধ্য ভারতীয়দের একজকেও তো দেখি ভারতে পুশব্যাক করতে দেখা গেলনা।তারা তো ঠিকই পুশইন করে যাচ্ছে আর এপারে গ্রহণও করা হচ্ছে। সঠিক কেডা?