ঢাকা, ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

যে ফোন কল নিয়ে সিলেটে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

একটি ফোন কল নিয়ে সিলেট বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। স্ক্রিনশটের মাধ্যমে এ ফোনকলের দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সিলেট বিএনপিতে অস্বস্তি বিরাজ করছে। ফোন কলটি এসেছে সিলেট নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে। ফোন করেছিলেন সিলেটের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি পালিয়ে লন্ডন চলে যান। কল আসার সময় নামাজে থাকায় সেটি রিসিভ করতে পারেননি বিএনপি নেতা ইমদাদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার বিকালে সিলেট চেম্বারের চলমান সংকট নিয়ে বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ী নেতারা। দাওয়াত পেয়ে ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন ইমদাদ চৌধুরী। সভা শেষে নিজের মোবাইল ফোন ব্যক্তিগত সহকারী আক্তারের কাছে দিয়ে নামাজ পড়তে যান তিনি। এমন সময় তার মোবাইল ফোনে লন্ডনে থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের কল আসে। এ সময় আক্তারের পাশাপাশি থাকা কেউ একজন সেই ফোন কল দেখে ফেলে। ফোন আসার সময়ই সেটির স্ক্রিনশট নিয়ে রাখে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফোন কলের স্ক্রিনশট সাামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নামাজ শেষে যখন গাড়িযোগে বাসায় ফিরছিলেন তখন বিষয়টি জানতে পারেন ইমদাদ চৌধুরী। এরপর রাতে তিনি এ ব্যাপারে অনলাইন প্ল্যাটফরমে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে তিনি জানান, ‘ফোন এসেছে কি না তিনি জানেন না। ওই সময় নামাজে থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেননি। পরে তিনি দেখেছেন ফোন এসেছে। কিন্তু আদৌ লন্ডনের ফোন কি না সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।’ এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে দেখা দেয় নানা জল্পনা। ইমদাদ চৌধুরীকে নিয়ে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় আলোচনা শুরু হয়। এই অবস্থায় পরদিন বুধবার হোটেল প্যারাডাইজের হল রুমে তিনি সার্বিক বিষয় নিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতাদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করেন। সেটি কেউ কেউ অবশ্য পরামর্শ সভাও বলছেন। ওই সভা চলাকালে প্রথমে ইমদাদ চৌধুরীর কাছে ফোন দেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বিষয়টি নিয়ে শান্ত থাকার জন্য ইমদাদ চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। খানিক পর ফোন দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ। তিনি বিষয়টি দেখছেন জানিয়ে সভা বাতিল করার নির্দেশ দেন। ফলে সভা সংক্ষিপ্ত করে ফেলেন ইমদাদ চৌধুরী। নগর বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, ইমদাদ চৌধুরীর মোবাইলে যে কারও ফোন আসতেই পারে। সেটি দলের শীর্ষ পর্যায় দেখবে। পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেটি মোকাবিলা করতে পারতেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইমদাদ চৌধুরী দলের তার ইউনিটের আর কাউকে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অবগত না করে পরদিন যে সভা ডাকেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টিকে অনেকেই দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন। প্রথমে লন্ডন থেকে আনোয়ারুজ্জামানের ফোন কল ও পরবর্তীতে তার সভা ডাকা দুটো বিষয় নিয়ে এখন সিলেট বিএনপিতে তুমুল আলোচনা। গত দু’দিনের একাধিক ঘটনা নিয়ে সিলেট বিএনপি’র ঐক্যে ফাটল ধরেছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। বিষয়টির সুন্দর সমাধানের চেষ্টা করছেন সিনিয়র নেতারা। কিন্তু যারাই এতে হস্তক্ষেপ করছেন তাদের নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে তারাও প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ যাতে বাড়াবাড়ি না করেন, সে ব্যাপারে দলের সিলেট বিভাগীয় কমিটি নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘যা হয়েছে, হয়ে গেছে। সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা দেখছেন।’ নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ঘটনা সম্পর্কে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আমি নামাজে ছিলাম। ফোন দেখিনি। পরে সাংবাদিকদের মারফতে জানতে পারি। আমার ফোনে সত্যি সত্যি ফোন এসেছে কি না সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পরে দেখেছি আরেক বিএনপি নেতার পিএস ইমন তার লোকের কাছ থেকে ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছে। সত্যি সত্যি ফোন এসেছে কি না, না কি বিষয়টি মেকিং তিনি জানেন না। এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। ইমদাদ বলেন, আমি যেহেতু নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, এজন্য বুধবার ৪২টি ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে সভার আয়োজন করি। ওই সভায় তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে পরামর্শ নিচ্ছিলাম। এমন সময় কেন্দ্রীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করায় তিনি আমি সভা সংক্ষিপ্ত করে দেই। তিনি জানান, সার্বিক বিষয় জানিয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পত্র দিয়েছেন। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও একই পত্র দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র এতে হস্তক্ষেপ করেছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করবেন। এখন দল বিষয়টি দেখবে বলে জানান তিনি। এদিকে, সিলেট নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী তার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের চলমান কার্যকলাপ নিয়ে নীরবতা পালন করছেন। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নয়। ফলে এ ব্যাপারে তার কোনো মন্তব্য নেই।

 

পাঠকের মতামত

কার মন যেন পুলিশ পুলিশ

জনতার আদালত
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৪:৪০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status