কলকাতা কথকতা
দাড়ি রাখায় ইন্টার্নকে ‘জঙ্গি’ সম্বোধন, প্রবল বিতর্কের মুখে ক্ষমা চাইলেন কলকাতা মেডিকেলের অধ্যাপক!
সেবন্তী ভট্টাচার্য্য, কলকাতা থেকে
(১ সপ্তাহ আগে) ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৬:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১০ পূর্বাহ্ন
পোশাক ও দাড়ি দেখে এক চিকিৎসক শিক্ষার্থীকে জঙ্গি’ বলে সম্বোধন করেছিলেন অধ্যাপক। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলকাতা মেডিকেল কলেজ। সহপাঠীকে জঙ্গি বলায় অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন বাকি ছাত্ররা। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগ। সেখানেই পাঞ্জাবী পরে গিয়েছিলেন একজন ইন্টার্ন। তাঁর গালে ছিল লম্বা দাড়ি। একজন ইন্টার্নের এই বেশ দেখে হঠাৎই তাঁকে 'জঙ্গি' বলে সম্বোধন করে বসেন হাসপাতালেরই অধ্যাপক তথা চিকিৎসক বিজন অধিকারী। তিনি ওই ইন্টার্নকে বলেন, এবার থেকে হাসপাতালে সবসময় শার্ট-প্যান্ট পরে আসতে হবে এবং দাড়ি পুরো কেটে ফেলতে হবে। ওই অধ্যাপক ইন্টার্নকে আরও বলেন, তাঁর পরনের পাঞ্জাবী ও গালের দাড়ি দেখে রোগীরাও ভীত হতে পারেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই ছাত্রছাত্রীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের তরফে বিক্ষোভও দেখানো হয়। এরপর গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।
কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে চলেছে তারা। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত অধ্যাপক এবং অভিযোগকারী ছাত্র উভয়ের সঙ্গেই কথা বলেছে কমিটি। তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পর ছাত্রদের মাঝে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন অধ্যাপক বিজন অধিকারী। তিনি ওই ছাত্রকে দেখিয়ে বলেন, “আমার কথায় ওর খারাপ লেগে থাকলে আমি ক্ষমা চাইছি। ” উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করে নিয়েছে বলে জানা গেছে । তবে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের সুপারের নেতৃত্বে গঠিত ওই অনুসন্ধান কমিটি কয়েক দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে চলেছে কর্তৃপক্ষকে। ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, লিঙ্গ, পোশাক পরিচ্ছদ কোনও কিছুর ভিত্তিতেই যাতে ভবিষ্যতে মেডিকেল কলেজে কেউ বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রস্তাবগুলো দেওয়া হবে।
হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে কারও আচরণে বা কথাবার্তায় যদি কারও খারাপ লাগে, তা ছাত্র সংসদে জানানো এবং সেখান থেকে অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করতে হবে। বৈষম্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি ওয়ার্কশপের ভাবনা রয়েছে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের। হাসপাতালের অধ্যাপকদের জন্য একটি এসওপি বা গাইডলাইন তৈরি করার প্রস্তাব অধ্যক্ষকে দিতে চলেছে অনুসন্ধান কমিটি। অধ্যাপকেরা ক্লাসে সেই গাইডলাইন মেনে চলবেন। বৈষম্য নিয়ে সচেতনতার প্রসারের জন্য মেডিকেল কলেজ চত্বরে বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহারের প্রস্তাব দিতে পারে কমিটি। রাস্তাঘাটে ট্র্যাফিক সচেতনতার জন্য যেমন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ব্যবহারের ভাবনা রয়েছে।